আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকাতে জাল র্সাটফিকিটে, জাতীয় পরচিয়পত্ররে কারখানা

আমি খুবই Innocent...!!!

আপেল মাহমুদ ৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা বাকুশাহ মার্কেটের বি ব্লকের একটি কম্পিউটার দোকানের মঈনের (প্রকৃত নাম নয়) সঙ্গে পরিচয়। মামা (মঈন) আপনি কি সব ধরনের কাজ করেন? হ্যাঁ করি, কেন গোপন কোনো কাজ আছে? আছে। সার্টিফিকেট বানাতে হবে, এখানে এ ব্যাপারে বলব কি? না। চলেন মার্কেটের কোনার দিকে আমরা এ ব্যাপারে কথা বলি। সেখানেই মঈন বুঝে নেয় ৯শ টাকার বিনিময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের মার্কশিট বানানোর কাজ।

সময় নেয় ২৪ ঘণ্টা, সেই সঙ্গে অগ্রিম হিসেবে পাঁচশ টাকা দিতে হয়। বাকি টাকা মার্কশিট হাতে পাওয়ার পর দিতে হবে। পরেরদিন ওই সময় আসার আগে ০১৬......২৫ নম্বরে ফোন করে আসতে বলে। নির্দিষ্ট দিন ফোন করে ওই দোকানে মঈনের সঙ্গে দেখা করলে তিনি আসল সার্টিফিকেটের আদলে কাক্সিক্ষত জাল সার্টিফিকেট হাতে দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে নেন। সার্টিফিকেটের জন্য এখন আর লেখাপড়ার দরকার নেই।

সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে জাল সার্টিফিকেট। জাল সার্টিফিকেট সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য এখন সারা ঢাকা শহরে। প্রতিদিন চলছে এ অবৈধ কর্মকা-। শুধু জাল সার্টিফিকেটই নয়, এখানে তৈরি হয় ভোটার আইডি কার্ড, ডাক্তারি সার্টিফিকেট, কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, এমবিএসহ সব ধরনের অবৈধ সার্টিফিকেট। বিভিন্ন কৌশল আর প্রযুক্তি ব্যবহার করে অসাধু চক্র দিনের পর দিন এ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে।

মাঝে মাঝে প্রশাসনের অভিযানের কথা শোনা গেলেও কোনোভাবেই থামানো সম্ভব হচ্ছে না এ চক্রটিকে। অনেক দিন থেকে একটি চক্র নীলক্ষেতের বাকুশাহ মার্কেট, ফার্মগেট ও গাউসুল আজম মার্কেটসহ বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে জাল সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র তৈরির কাজ করে আসছে। প্রশাসনসহ অনেকেই ঘটনাটি জানলেও চক্রটি থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বর্তমানে তাদের কর্মকা- সম্পর্কে সাপ্তাহিক ২০০০-এর পক্ষ থেকে অনুসন্ধান চালানো হয় ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায়। কয়েকটি চক্রের সন্ধানও মিলে যায়।

ভ্রাম্যমাণ জাল সার্টিফিকেটের দোকান ১১ নভেম্বর সকাল ১১টা। প্রতিবেদক নিজেই ছাত্র সেজে নীলক্ষেত যায়। প্রথমে বেশ কয়েকটি দোকানে গিয়ে একটি কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট তৈরির বিষয়ে আলাপ করা হয়। এখানে প্রায় সব দোকানই যে কোনো প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট দিতে রাজি হয়। কারো কারো কাছে গিয়ে কথা বললে তারা প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যায়, তবে এক পর্যায়ে রাজিও হয়।

এভাবে কথার ফাঁকে কোনো স্বীকৃত কলেজ ও বোর্ডের সার্টিফিকেট বানানোর কথা বললে তারা এগুলো তৈরি করে না বলে জানায়। কেউ কেউ বলেন, ‘ভাই আগে বানাইতাম। অহন আর বানাই না। ছাত্র সেজে আসে আর সঙ্গে নিয়ে আসে র‌্যাব পুলিশ। তারা দূরে দাঁড়াইয়া থাকে।

লেনদেনের সময় এসে ধইরা নিয়া যায়। তাই অহন এগুলা বলবেন না। ’ এভাবে কয়েকটি দোকান থেকে ফিরে যাওয়ার পথে নীলক্ষেতের ফুটপাথে পুরনো বই বিক্রির দোকানগুলোতে জাল সার্টিফিকেট বানানোর কম্পিউটারের দোকানের সন্ধান জানতে চাইলে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা একটি সার্ভিসের কাছ থেকে হাসেম (ছদ্মনাম) নামে ২৫-২৬ বছরের একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। নীলক্ষেতে পুরনো বই বিক্রির পাশাপাশি জাল সার্টিফিকেট বাানানোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে জানায় সে। হাসেমের সঙ্গে পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাকে বলা হয়, ‘ভাই আমি নিরুপায়।

যশোর থেকে এসেছি। ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করব। আমার কাছে ডিগ্রির সার্টিফিকেট চেয়েছে। এখানে নাকি কম্পিউটারের দোকানে এ ধরনের সার্টিফিকেট বানানো হয়। ’ বলতেই লোকটি হাসতে হাসতে বলেন, ‘ঠিক জায়গায় এসেছেন।

আমি আপনাকে সন্ধান দিতে পারি। চলেন আমার সঙ্গে। ’ এরপর হাঁটতে হাঁটতে নিউমার্কেটের দিকে যেতে যেতে লোকটি বলেন, ‘আমি নিজেই বানাই। ইদানীং নীলক্ষেতে পুলিশ-র‌্যাব কয়েকবার হানা দিয়েছে। তাই আমি কাস্টমার সংগ্রহ করি আর আমার ভাই বাড়িতে এগুলো বানায়।

’ অবশেষে সেই কাক্সিক্ষত ব্যক্তিটির দেখা মিলল। তাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চা খেতে বলা হয়। লোকটি বলেন, ‘আপনার কোন ধরনের সার্টিফিকেট লাগবে তাড়াতাড়ি বলেন। এসব বিষয় নিয়ে এখানে বেশি আলোচনা করা যাবে না। ’ এ সময় তার সঙ্গে একটি ডিগ্রির সার্টিফিকেট তৈরির ব্যাপারে আলোচনা হয়।

সে এজন্য চায় ৫ হাজার টাকা। এত দাম কেন জানতে চাইলে বলেন, ‘এসব জিনিসের এমনই দাম। ’ ভাই আমার কাছে তো এত টাকা নেই, একথা বলতেই সে বলে ওঠেন ‘কত আছে। ’ তখন তাকে বলা হয়, ‘আমি মনে করেছি ৪-৫শ টাকা হবে। ’ সে বলে ওঠে, ‘আরে ভাই ৪শ টাকায় জীবনের সার্টিফিকেট।

ভালোই বলেছেন। গত সপ্তাহে একটা আইইএলটিএস-এর সার্টিফিকেট বানিয়ে দিলাম ২০ হাজার টাকায়। তার আগে এসএসসির একটি সার্টিফিকেট তৈরি করে দিয়েছি ৪ হাজার ৫শ টাকায়। এখন কত আছে দিয়ে যান পরে বাকি টাকা দিয়ে মাল নিয়ে যাবেন। দাম একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।

কম নিলে পরে যোগাযোগ করব জানিয়ে তার কাছ থেকে তার ঠিকানা চাওয়া হয়। ঠিকানার বদলে সে একটি মোবাইল নম্বর দেয়। নাম বলেন হাসেম। তবে এটি তার আসল নাম না বলে স্বীকার করে বলেন, এখানে সবাই আমাকে হাসেম নামেই চেনে। ফুটপাথের পুরনো বইয়ের দোকানের যে কোনো বই ব্যবসায়ীকে আমার নাম বললেই আমাকে চিনিয়ে দেবে।

হাসেম তার মোবাইল নম্বরটি দিয়ে আরো বলেন, ‘আমার এই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ থাকে। আমার চারটি সিম। মাঝে মাঝে এটা খোলা হয়। সব থেকে ভালো হয় আগামীকাল আপনি সার্টিফিকেটের একটি মডেল ও টাকা নিয়ে নীলক্ষেতের ফুটপাথে আসেন। দিনের যে কোনো সময় আসেন না কেন আমাকে এখানে পাবেন।

পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার এই নম্বরে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নীলক্ষেতের ‘ব’ আদ্য অক্ষরের নাম সংবলিত একটি স্টেশনারিতে সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান। নীলক্ষেতে আরো একজন জাল সার্টিফিকেট দলের সদস্য মামুন (ছদ্মনাম)। মামুনের ০১৯২....১৬ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে জাল সার্টিফিকেট বানানোর ব্যাপারে কথা হয়। তিনি নিজের গোপনীয়তা রক্ষার্থে তার দোকানে আসতে বারণ করে গত ৬ অক্টোবর নীলক্ষেতের তেলের পাম্পের পাশে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে সার্টিফিকেট তৈরির মডেল নিয়ে আসতে বলেন। নির্দিষ্ট দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সার্টিফিকেট ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি তৈরি করে দেবেন বলে তার সঙ্গে চুক্তি হয় এবং পরের দিন তেলের পাম্পের কাছে এসে টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে বলেন।

বাকুশাহ মার্কেটের দুই শব্দে নাম এমন একটি কম্পিউটার দোকানে গিয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ফকির মোহাম্মদের (ছদ্মনাম) সঙ্গে পরিচয় হয়। আলোচনার একপর্যায়ে এখানে সব ধরনের কাজ হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, কী করতে হবে। তাকে একটি ভোটার আইডি কার্ড ও একটি কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট তৈরির কথা বলা হয়। তিনি যে কোনো ধরনের সার্টিফিকেট বানাতে পারবেন জানালে কম্পিউটার অপারেটর ফকির মোহাম্মদ ৬শ টাকার বিনিময়ে একটি কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট তৈরি করবেন বলে রাজি হন। কিছুক্ষণ দর কষাকষির পর ৩শ টাকায় সার্টিফিকেট তৈরি করতে রাজি হন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বোর্ডের মূল সার্টিফিকেট আরো কে তৈরি করে, এ তথ্য খুঁজতে খুঁজতে ঘড়ির কাঁটা বিকাল ৫টায়। নীলক্ষেতের বাকুশাহ মার্কেটে একটি বিজনেস সেন্টার আছে মসজিদ লেনে। লেনের মাথায় গিয়েই দেখা যায় তাদের কম্পিউটারের স্ক্রিনে কোনো একটি বোর্ডের মূল সার্টিফিকেটের মডেল। দোকানের মধ্যে ঢুকতেই অপারেটর সার্টিফিকেটের মডেলটি মিনিমাইস করে রাখে। তখন হেসে হেসে তাকে বলা হয়, ‘ভাই বন্ধ করতে হবে না।

আমিও একই জিনিস বানাব। অনেক দোকান ঘুরে কাউকে রাজি করাতে পারিনি। ’ লোকটি হেসে টুল পেতে বসতে দেন। এ সময় দেখা যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির একটি মূল সার্টিফিকেট দেখে তারই আদলে অন্য একটি সার্টিফিকেট তৈরি করছেন তিনি। পাশে বসা ছিলেন সার্টিফিকেট বানাতে আসা ২৭ বছর বয়সের আরিফ হোসেন।

দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বসে থেকে সার্টিফিকেট তৈরির সব চিত্র দেখা হয়। পরবর্তী সময়ে দোকানের বাইরে এসে আরিফের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি এসেছেন কুমিল্লা থেকে। ১ হাজার ৫শ টাকার বিনিময়ে তিনি দোকানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর দোকানির সঙ্গে একটি ডিগ্রির সার্টিফিকেট তৈরির বিষয় নিয়ে কথা হয়। দোকানি বলেন, ‘যেহেতু আপনি দেখে ফেলেছেন তাই আপনার কাছে দাম বেশি চাইব না।

প্রথমেই তিনি ৩ হাজার টাকা চাইলেন। ’ কম হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনার কাছে এক মাসের বেতনের টাকাও চাওয়া হয়নি। ’ এক পর্যায়ে তিনি ১ হাজার ৫শ টাকার বিনিময়ে ডিগ্রির একটি জাল সার্টিফিকেট করতে রাজি হন। হাত বাড়ালেই ১০ মিনিটে জাতীয় পরিচয়পত্র একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির উদ্দেশ্যে কোনো একটি চক্রের খোঁজে আবার যাওয়া হয় নীল ক্ষেতের বাকুশাহ কম্পিউটার মার্কেটে। সকাল থেকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ২২ নভেম্বর সোমবার বিকাল ছয়টায় সেই কাক্সিক্ষত চক্রের একজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ মিলে যায়।

তার নাম মোঃ আহসান (ছদ্মনাম)। দোকানের মূল নামের পর ফটোস্ট্যাট অ্যান্ড কম্পিউটার লেখা। কম্পিউটার দোকানগুলোর সামনে ঘুরতে দেখে তিনি বলেন, ভাই কী লাগবে? তার আগ্রহ দেখে বোঝা যায় এখানে হয়তো কাজ করা হয়। অতঃপর কথা হয় তার সঙ্গে। তাকে বলা হয়, ‘ভাই আমার একটা ভোটার আইডি কার্ড প্রয়োজন।

’ তিনি কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই খুব সহজেই রাজি হয়ে যান। কত টাকা দিতে হবে? প্রশ্ন করতেই বলেন, ‘৪শ টাকা দিলে চলবে। ’ কম কত, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক দাম ৩শ টাকা দিতে হবে। ’ একটা ছবি আর সই (স্বাক্ষর) দিয়ে যান। কাল নিয়ে যাবেন।

’ আসল কার্ডের মতো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকালও একজনকে ৫শ টাকার বিনিময়ে একটি কার্ড বানিয়ে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, কাজ ভালো না হলে কি সে শুধু শুধু টাকা দিয়েছে। টাকা ও ছবি নেই তাই কাল আসব এ কথা বলে তখন তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে আসা হয়। এরপর ২৪ নভেম্বর বুধবার ছবি নিয়ে ৬টা ৩০ মিনিটে আবার তার দোকানে যাওয়া হয় তাৎক্ষণিকভাবে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির উদ্দেশ্যে। ছবি ও সব ধরনের তথ্য দিয়ে তাকে বলা হয় একটি আইডি কার্ড তৈরির জন্য।

বিদ্যুৎ ছিল না তাই কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। এক ঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ এলে তিনি কাজ শুরু করেন। কীভাবে তিনি এ অভিনব কাজটি করেন তা দেখার জন্য তারই পাশে অবস্থান নেয়া হয়। প্রথমে তিনি তার কম্পিউটারের ডেস্কটপে রাখা ওউ ঈধৎফ ধর@২০০% নামের একটি ফোল্ডার খোলেন। সেখানে দেখা যায় শত শত পরিচয়পত্রের মডেল।

এখান থেকে একটি মডেল নিয়ে অ্যাডবি ফটোশপে কাজ করে প্রতিবেদকের তথ্য অনুযায়ী একটি পরিচয়পত্র তৈরি করতে শুরু করেন। ঠিক সেই সময়ে দোকানির একজন পরিচিত ব্যক্তি তার দোকানে এলে তাকে নিয়ে তিনি চা খেতে যান। আর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি কম্পোজ করতে পারলে এ কার্ডের ওপর আপনার তথ্যগুলো লিখতে থাকুন। আমি চা খেয়ে আসি। ’ এ বলে তিনি দোকানের বাইরে বেরিয়ে যান।

এরপর চা খাওয়া শেষে তিনি কার্ডের বাকি কাজ শেষ করেন। দেখতে আসল মনে হলেও জাল জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়। এরপর প্রিন্ট কপিটি পাশের দোকানে পাঠানো হলে সবার অগোচরে ১০ টাকার বিনিময়ে লেমিনেটিং করে দেয়। অতঃপর ৩শ টাকার বিনিময়ে কার্ডটি নেয়া হয়। এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি আর কী কী ধরনের কাজ করেন।

উত্তরে তিনি বলেন, ‘কোন কাজ করি না তাই বলেন! সব ধরনের কাজই আমি করি। পরিচিত কারো সার্টিফিকেট লাগলে যোগাযোগ করবেন। জাল কারিগরি সার্টিফিকেট জাল সার্টিফিকেট কারখানার সন্ধান এবং এই কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত চক্রের সন্ধানে যাওয়া হয় ফার্মগেট এলাকায়। এখানে কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান ঘুরে বিভিন্ন বোর্ডের জাল সার্টিফিকেট তৈরি করা চক্রটির সন্ধান করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতারকের সঙ্গে পরিচয় হয়। ফার্মগেটের গ্রিন রোডের, গ্রিনভিউ সুপার মার্কেটের নিচের ফ্লোরে একটি এডমিশন এইড-এর প্রতিষ্ঠান।

এই লোক প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী বলে পরিচয় দেয়। তিনি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট দিতে রাজি হন। তিনি ৬শ টাকার বিনিময়ে এক সপ্তাহের মধ্যে কারিগরি বোর্ডের সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, টাকার বিনিময়ে এখানে আসল সার্টিফিকেটও পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কারিগরি বোর্ডের একজন কর্মকর্তার যোগাযোগ আছে।

টাকা দিলে সে কারিগরি বোর্ডের বিভিন্ন কোর্সের সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে দিতে পারেন। গাউসুল আজম মার্কেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের ছাত্র রইসউদ্দিন (ছদ্মনাম)। অনার্স পরীক্ষা শেষ হলেও তার ফল প্রকাশ করা হয়নি। ফল বেরোতে আরো দুই মাস বাকি, কিন্তু এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞাপন দিলেও কোনোটাতেই আবেদন করতে পারছিলেন না। অতঃপর এক বন্ধুর পরামর্শে অনার্স পরীক্ষার একটি সার্টিফিকেটের মডেল নিয়ে হাজির হন কাঁটাবনের মহিলা হোস্টেল সংলগ্ন গাউসুল আজম মার্কেটের একটি দোকানে।

... কম্পিউটার নামে দোকানে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে বানিয়ে নেন একটি সার্টিফিকেট। দোকানের মালিক জানান, বিভিন্ন সার্টিফিকেটের মডেল পেলে সে অনুযায়ী সার্টিফিকেট বানিয়ে দেন। অন্যান্য জায়গার চেয়ে আরো কমে তিনি সার্টিফিকেট বানান বলে দাবি করেন। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বানান বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমার কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেটের মডেল আছে।

আপনি যেই ধরনের সার্টিফিকেট বানাতে চান আমি সেই ধরনের সার্টিফিকেট বানিয়ে দেব। পুরানা পল্টন পুরানা পল্টন এলাকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি অনুবাদ কেন্দ্র। এসব অনুবাদ কেন্দ্রেও গোপনে অনেকে জাল সার্টিফিকেট তৈরির কাজ করে থাকেন। তবে তারা সাধারণত পরিচিত ব্যক্তিদের কাজ করেন বলে জানা গেছে। অপরিচিত কেউ এসব কাজের উদ্দেশ্যে দোকানগুলোতে গেলে তারা প্রথমে রাজি হয় না।

এখানে জাল কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট, বার্থ সার্টিফিকেটসহ অবৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়া যায়। মতিঝিল সি/এ, টয়েনবি সার্কুলার রোডে একটি টাইপিংয়ের দোকানে ১ ডিসেম্বর বিকালে সেখানকার অপারেটরকে এই প্রতিবেদক কম্পিউটারসহ বিভিন্ন কোর্সের সার্টিফিকেট তৈরি করা হয় কিনা জানতে চাইলে খুব সহজেই তিনি রাজি হয়ে যান। প্রতিটি কোর্সের সার্টিফিকেট বানাতে কত লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাত্র ৫০ টাকা। এ সময় প্রতিবেদক তাকে একটি কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেট বানাতে বলেন। ঠিক সে সময় অপারেটর তার সামনে রাখা কম্পিউটার সার্চ দিয়ে সার্টিফিকেটের মডেল বের করেন।

তখন দেখা যায়, তার কম্পিউটারে শুধু কম্পিউটার কোর্সের সার্টিফিকেটই নয়, রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র, বার্থ সার্টিফিকেটের মডেল। এমনকি কয়েকটি বোর্ডের মূল সার্টিফিকেটের মডেলও রয়েছে। সার্টিফিকেট তৈরির পদ্ধতি জাল সার্টিফিকেট বা যে কোনো ধরনের আইডি কার্ড তৈরিতে এসব কম্পিউটার দোকানগুলো বিশেষ কিছু পন্থা অবলম্বন করে। ফটোশপের মাধ্যমে কম্পিউটার অপারেটররা দক্ষতার সঙ্গে কাজগুলো করেন। তথ্য সংগ্রহকালে দেখা গেছে, তাদের প্রত্যেকের কম্পিউটারে বেশকিছু সার্টিফিকেট ও কার্ডের মডেল রয়েছে।

গ্রাহকের চাহিদামতো তারা এসব মডেল দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করেন। তাদের রয়েছে স্ক্যানার মেশিন, যা দিয়ে তারা প্রথমে একটি মূল সার্টিফিকেট স্ক্যান করেন। এরপর এ মডেলের ওপর নাম, রোলসহ সব তথ্য পরিবর্তন করে তৈরি করেন আসল সার্টিফিকেটের আদলে একটি জাল সার্টিফিকেটের মডেল। পরবর্তী সময়ে এটি সার্টিফিকেটে ব্যবহৃত কাগজের মতো এক ধরনের কাগজে প্রেসে নিয়ে ছাপানো হয়। তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু ছাপাখানার যোগাযোগ রয়েছে।

সেখানেই তারা এগুলো ছাপিয়ে থাকেন। সিন্ডিকেট ঢাকার প্রায় সব কম্পিউটার কম্পোজের মার্কেটে ছোট ছোট কয়েকটি সিন্ডিকেট আছে। কখনো এরা নিজেরা জাল সার্টিফিকেট বানায় আবার কখনো কয়েকজন মিলে একটি গ্রুপ করে এ কাজ করে। এক একটি গ্রুপে একজন থাকে কম্পোজের দায়িত্বে, একজন লেমিনেটিং, একজন রাবার স্ট্যাম্প তৈরি এবং একজন প্রেসের দায়িত্বে। সার্টিফিকেট বানিয়ে যা পায় সবাই ঝুঁকি ও শ্রম অনুসারে টাকা বণ্টন করে নেয়।

কেউ যদি কাজ এনে দেয় তাহলে তার জন্য আলাদা কমিশন থাকে। জাল সার্টিফিকেটে ধরা পড়েছে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে জনতা ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোঃ আকবর আলী মিয়ার সার্টিফিকেট যাচাই-বাছাই করার একটি আবেদন পায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিরীক্ষণ করে তার সার্টিফিকেটটি জাল প্রমাণ পায়। ওই সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ১৯৭২ সালে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ পাস করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত কাগজপত্রে ওই সালে ওই নামের কোনো ছাত্র পাস করেনি।

মোঃ নাজমুল বারী নামে একজন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত বগুড়া জেলা কার্যালয়ে কাজ করছেন। তার কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য দুদকের বগুড়া জেলা কার্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। পরে দেখা যায়, নাজমুল বারী আদৌ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না। সেনা কল্যাণ সংস্থার কর্মকর্তা আহমেদ হোসেনের সার্টিফিকেট জাল প্রমাণিত হয়েছে। তার সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, তিনি ১৯৮৬ সালে বিকম পাস করেছেন।

তবে নির্দিষ্ট কোনো কলেজের নাম সার্টিফিকেটে লেখা নেই। শুধু লেখা আছে এক্সটারনাল কলেজ। মনোয়ার হোসেন বরগুনার হলতা ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান কলেজে শিক্ষকতা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দেখিয়ে। কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদনের কারণে সনদটি যাচাই করে ভুয়া প্রমাণিত হয়। গ্রামীণফোনে কর্মরত সজল চৌধুরীর সার্টিফিকেটে লেখা আছে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে ২০০২ সালে পাস করেছেন।

কিন্তু যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সজল চৌধুরীর সার্টিফিকেটটি ভুয়া বলে জানিয়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলে কর্মরত কাউসার বখত চৌধুরীর সার্টিফিকেটটিও ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। রুহুল জামান নামে একজন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় চাকরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দেখিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির এক আবেদনের পর যাচাই করে দেখা গেছে, রুহুল জামান কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করে পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কর্মরত ছিলেন সাইফুল আজম ও রফিকুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন নিরীক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিন। মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পর যাচাই করে গিয়াসউদ্দিনের সার্টিফিকেটটি ভুয়া প্রমাণিত হয়। সিঙ্গাপুরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এক্সিকিউটিভ পদে কর্মরত এ ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটিতে জমা দেওয়া সার্টিফিকেটে লেখা আছে, তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে বিকম ও ১৯৮১ সালে এমকম পাস করেন। স¤প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানটির এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রমাণিত হয়েছে তার সার্টিফিকেট ভুয়া।

গুরুদাস চন্দ্র হালদার নামের একজন নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেছিলেন। যাচাই করে দেখা গেছে সার্টিফিকেটটি ভুয়া। তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নির্দেশে বাসসের ২০ সাংবাদিকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। কাগজপত্র যাচাই করে দেখা গেছে, দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন। তারা হলেন খায়রুল আলম ও অহিদুজ্জামান।

খায়রুল আলম যে সার্টিফিকেট বাসসে জমা দিয়েছেন তাতে লেখা আছে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৮২ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স অব আর্টস পাস করেছেন। তার সার্টিফিকেটটি ভুয়া প্রমাণ করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে জাল সার্টিফিকেটসহ কামরুজ্জামান সোহাগ নামে এক ভুয়া ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও হল সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে কামরুজ্জামান সোহাগ মুহসীন হলে ওঠে। এরপর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির স্বাক্ষর নকল করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্সের সার্টিফিকেট তৈরি করে।

প্রায় ৬ মাস আগে সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে সে লন্ডনেও যায়। সেখানে ভুয়া সার্টিফিকেটসহ ধরা পড়লে তিন মাসের কারাদ- দিয়ে পরে দেশ থেকে বহিষ্কার করে। গত সেপ্টেম্বরে সে আবার মুহসীন হলের ৩৬৩ নম্বর কক্ষে ওঠে। এরপর সে বিভিন্ন সময়ে নিজেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মার্কেটিং, পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজসহ বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র বলে পরিচয় দিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট জাল করে সৈয়দপুর মহিলা মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে চাকরি নেয় মোঃ হাবিবুল হক নামে এক শিক্ষক।

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মোঃ মোখলেছুর রহমান বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় মামলা করেন। পরে মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সনদের ব্যাপারে জানতে চেয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর আবেদন করে। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক গত বছরের ১ ও ৭ জুলাই পৃথক পত্রে হাবিবুল হকের জাল সনদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঘটনাটি নিশ্চিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জাল সনদপত্র দিয়ে চাকরি নেয়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। জামবাড়িয়া দারুসছুন্নাৎ নেসারিয়া দাখিল মাদরাসায় ২৪ বছর ধরে কামিলের জাল সার্টিফিকেট নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন মোঃ ওমর ফারুক আজম।

তার জাল সার্টিফিকেটের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনসহ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ঢাকায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরপর দুবার বোর্ড গঠন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ওমর ফারুক আজমের কামিল সার্টিফিকেট জাল বলে প্রমাণিত হয়। এরপরও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ওই কামিল জাল সার্টিফিকেট দিয়েই প্রায় ২৪ বছর ধরে তিনি সুপারিনটেন্ডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশক্রমে সহকারী পরিদর্শক রাজশাহী অঞ্চল ২০০৫ সালের ৫ অক্টোবর মাদরাসাটি তদন্ত করেন। তদন্তে প্রমাণিত হয় ওই সুপারের নিয়োগের রেজুলেশন জাল এবং সনদপত্রও জাল। মাদরাসা স্থাপনকাল ১৯৮১ সালের পরিবর্তে ১৯৮৪ সাল প্রমাণ করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের তদন্তে রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯/০৯/০৪ তারিখে ১১৫০/১ নবাব-৭০ স্মারকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভোলাহাটকে জামবাড়িয়া মাদরাসা সুপারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মাদরাসা সুপারকে ২৯/০৯/২০০৪ তারিখে মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির আলোচনা সভায় সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত ও বিজ্ঞ আদালতের ০৬/০৫/২০০৮ তারিখের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা শর্তেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাল সনদপত্র ও সুপারের নিয়োগ রেজুলেশন জাল প্রমাণিত হওয়ার পরও ওমর ফারুক আজমকে সুপারের দায়িত্বে পুনর্বহাল করেন। এ সময় ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা প্রতিবাদ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৪ জন শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা ২৭/০৪/২০০৮ তারিখে বিজ্ঞ জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

যার মামলা নং-৫২/০৮। তবে এদের মধ্যে দুজন মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ডাক্তাররাও পিছিয়ে নেই ডা. মোহাম্মদ শহিদুর রহমান নামের এক ব্যক্তি রাজধানীর উত্তরার উপশম হেলথ কমপ্লেক্স (প্রাঃ) লিমিটেডে চিকিৎসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। তার চিকিৎসা পদ্ধতি সন্দেহজনক হলে প্রতিষ্ঠানটি শহিদুর রহমানের সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। তার সার্টিফিকেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নাম রয়েছে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করে, ওই নামের কোনো শিক্ষার্থী ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করেনি। ভারত থেকে এমবিবিএস ও মেডিসিন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি এমডি-এর সার্টিফিকেট ১২ হাজার টাকায় ক্রয় করে এনে কথিত ডা. গোলাম কিবরিয়া ৫ বছর ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে প্র্যাকটিস চালিয়ে আসছিলেন। র‌্যাব সদস্যরা মিরপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন পিসিল্যাব নামের একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট চেম্বারে অভিযান চালিয়ে ভুয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার গোলাম কিবরিয়াকে গ্রেফতার করেন। এরপর র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা রাজধানীর অলিগলি ও অভিজাত এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে গোলাম কিবরিয়ার মতো আরো দেড়শতাধিক ভুয়া ডাক্তারের সন্ধান পান। ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে দেড় সহস্রাধিক ভুয়া ডাক্তার রয়েছে।

এ ছাড়া ভুয়া ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক। তারা এমবিবিএস পাস করার পর ভুয়া উচ্চতর ডিগ্রি ব্যবহার করে বছরের পর বছর প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে আসছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা সার্টিফিকেটে নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেখতে হুবহু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মতোই। তফাৎ শুধু একটাই ওই সার্টিফিকেটটির বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, হল অফিস ও প্রশাসনিক ভবনে রেকর্ড নেই।

ঢাবির প্রক্টর বলেন, ১০ জন অপরাধ করলে ৫ জন ধরা পড়ে বাকি থেকে যায় ৫ জন। এরাই পরবর্তী সময়ে অপরাধ চালিয়ে যায়। জাল সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কোনো তথ্য এলে আমরা তাদের ধরার চেষ্টা করি। আমাদের এখানে জাল সার্টিফিকেট আসল বলে চালানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ যারা ভর্তির জন্য আবেদন করেছে তাদের সব তথ্য আমরা বোর্ড থেকে নিয়েছি।

ফলে কেউ জাল সার্টিফিকেট চালানোর চেষ্টা করলে সে ধরা পড়বে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য বাকুশাহ হকার্স মার্কেট সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান আবদুল খালেক বলেন, আমাদের কোনো মনিটরিং সেল নেই তাই কে কী করল তার খোঁজ আমরা রাখতে পারি না। অনেক সময় কেউ দোকান ভাড়া নিয়ে সে আবার বেশি টাকায় অন্যকে ভাড়া দেওয়ার ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরা কঠিন হয়ে যায়। এর আগে আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, সামনের বছরে বাকুশাহ মার্কেট ভাঙা হবে।

এখন যারা এখানে ব্যবসা করছে তখন তারা আর থাকবে না। তাই এখন কে কী করছে সেদিকে আমরা কোনো নজর দিচ্ছি না। নিউমার্কেট থানার ওসি জানান, আমরা প্রতিমাসে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করছি। কিন্তু তারপরও এ কাজ থামানো যাচ্ছে না। তবে এখানে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে, অনেক চেষ্টা করেও আমরা এ সিন্ডিকেটকে ধরতে পাচ্ছি না।

থানার এসআই নুর আলম জানান, গত মাসেও দুজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। এ ব্যাপারে মামলা হলেও তারা জামিনে বেরিয়ে গেছে। প্রতিটি ছোট ছোট সিন্ডিকেট হওয়ায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। জাল সার্টিফিকেট ও পরিচয়পত্র তৈরি খরচ জাল সার্টিফিকেট তৈরি খরচ (টাকা) আইইএলটিএস ৪০০০-৬০০০ হাজার মাস্টার্স মার্কশিট (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ১৫০০-২০০০ অনার্স সার্টিফিকেট (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ৯০০-২০০০ অনার্স সার্টিফিকেট (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) ৮০০-১৬০০ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মার্কশিট ৮০০-১৫০০ ঢাকা ডেন্টাল কলেজ সার্টিফিকেট ১৬০০-২৫০০ ঢাকা মেডিকেল কলেজ সার্টিফিকেট ৩০০০-৫০০০ পলিটেকনিক ১০০০-১৫০০ ট্রেড লাইসেন্স ৮০০-১৫০০ কম্পিউটার কোর্স সার্টিফিকেট ১০০-৩০০ জাতীয় পরিচয়পত্র ৩০০-৪০০ যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয়পত্র ১০০-২০০ ক্স ব্যক্তিভেদে এ হার কম-বেশি হয়। লেখাটি সাপ্তাহিক২০০০ চলতি সংখ্যায় প্রকাশিত


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.