‘বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় গিয়েও দুই মাস গোডাউনে বন্দী ছিলাম। কাজ পাইনি। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় একদিন রেলা (অভিবাসন) পুলিশ এসে জেলে নিয়ে যায়। একদিন হাত-পা বেঁধে কোমরে প্রচণ্ড জোরে রোতান (বেত্রাঘাত) দিলে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। পরদিন জ্ঞান ফিরলে দেখি, শরীরের পেছনের একাংশের মাংস উঠে গেছে।
চার মাস পর জেল থেকে মুক্তি পাই। এখনো কোমর সোজা করতে পারি না। অসুস্থ হওয়ায় বউ-পরিবার সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ’
গতকাল মঙ্গলবার কথাগুলো বললেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ফুলমারী গ্রামের আবদুল মতিন। নওগাঁর মান্দা উপজেলার আবদুল হকও রোতানের একই অভিজ্ঞতার কথা বললেন।
পরে দেশে ফিরে যাওয়া এই দুজন মুঠোফোনে জানান, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকের ওপর এই রোতান-নির্যাতন তাঁরা দেখেছেন।
ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি এখন ভুগছেন রেলা পুলিশ ও রোতান আতঙ্কে। কুমিল্লার গিয়াসউদ্দিন, গাজীপুরের রিয়াজুল ইসলাম, ফরিদপুরের তারা মিয়াসহ ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া যত বাংলাদেশির সঙ্গে গত পাঁচ দিনে কথা হয়েছে, তাঁদের প্রায় সবাই এই আতঙ্কের কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, রোতান পড়লে মানুষ বেঁচে থেকেও মরে যায়।
মালয়েশিয়ার সেলানগর রাজ্যের কাপাং এলাকায় কথা হয় চৌদ্দগ্রামের খায়রুলের সঙ্গে।
তিনি জানান, চৌদ্দগ্রামের দুজন রোতান খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁদের দেশে পাঠানো হয়। ওই ঘটনার পর সবাই, বিশেষ করে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকেরা রোতান শুনলেই ভয় পান। তাই পুলিশ দেখলেই তাঁরা পালিয়ে যান।
রোতান সম্পর্কে জানতে গতকাল কারাম এশিয়া ও তেনাগানিতা নামের দুটি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়ে যাই।
কারাম এশিয়ার প্রধান কার্যালয় মালয়েশিয়ায়। এটি এশিয়া অঞ্চলের ১৮টি দেশের অভিবাসন ও প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে। তেনাগানিতা কাজ করে মালয়েশিয়ায় আসা অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে। এ দুটি কার্যালয়ে বেত মারাসংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ ও ছবি দেখে শিউরে উঠতে হয়।
কারাম এশিয়ার আঞ্চলিক প্রধান হারুন-আল রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, রোতান বা বেত মেরে নির্যাতন অমানবিক।
এর পরও মালয়েশিয়া তাদের আইনের দোহাই দিয়ে তা করছে। খুন, ধর্ষণসহ মোট ৬৬ ধরনের অপরাধের শাস্তি হিসেবে বেত মারা হয়। ২০০২ সালে অভিবাসন বিষয়টি এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। অভিবাসন আইনের ১৯৫৯/৬৩-এর ৫৫ ধারা অনুযায়ী, কারও অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বিষয়টি আদালতে প্রমাণিত হলে রায় অনুযায়ী তাঁকে বেত মারা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো শ্রমিক অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় আসেন না।
আসেন বৈধভাবে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থানের জন্য তাঁদের বেত মারার মতো অমানবিক শাস্তি দেওয়া যায় না। এর পরও অনেক বাংলাদেশিকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সব মানবাধিকার সংস্থা ও সরকারের প্রতিবাদ জানানো উচিত। (সরকার কিছু বুঝতেছেন ???)প্রথম আলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।