এইসব ভালো লাগে...
স্কুল লাইফে এই গানটা এত বিরক্তি নিয়ে গাইতাম যে অনেকে প্যারডি করে ফেলতো। আজ সেই জীবনটা মিস করতে করতে এই গানটাকে ভীষণ মিস করি... কোথাও শুনলে রোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। আমারও একটা জাতীয় সঙ্গীত আছে!
মনে পড়ে বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিলো সেদিন। ১৯৯৯ তে যেদিন বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান হেরে গেলো। খুলনা থাকি তখন।
উপরতলার ভাইয়া থালায় চামচ পিটানো শুরু করলেন। আব্বাও বললেন ওরে থালা নিয়ে পিটা। রং এর খেলা শুরু হল যেন! আমি ওসবের ধারেকাছেও নেই। ভীষণ ছিল আবেগ! কি জন্য? পাকিস্তান কে মুসলমানদের প্রতিনিধি ভাবতাম। ছোট ছিলাম, বোকা ছিলাম।
ক্লাস সেভেন এ পড়ি তখন। চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের ছিটেফোটা নেই। বইয়ে পড়া গল্প আর বাধ্যতামূলক প্যারেডের আতংক নিয়ে আসত ২১ ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু আমার চিন্তাধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিল একটি ছবির বই। পলাশি থেকে বঙ্গবন্ধু নাম হবে বোধহয়।
মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা, পাশবিকতার গল্প, বীভৎস ছবি গুলো পাকিস্তানিদের প্রতি বিষাদে, ঘৃণায় মন বিষিয়ে তুলল। কৃকেট খেলা দেখাই ছেড়ে দিলাম। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতার গল্প যত পড়লাম, যত জানলাম বীরত্বের কথা তত আমার গর্ব বাড়ল। ভারতের বিদ্বেষী ছিলাম বলতে গেলে। আজো আছি।
তবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করতে আজ আর কুণ্ঠাবোধ করি না। আমাদের এই দেশ নিয়ে কত কথাই না আমরা বলি। রোজ আনাচে কানাচে ম্যাঙ্গোপিপল কত গালিই না দেই... তবু চিৎকার করে বলতে চাই... হে বাংলাদেশ তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি আমি... তোমার ভেজা মাটির গন্ধ নিয়ে এক পাকিস্তানি আপুর মশকরার আমি কড়া প্রতিবাদ করতে পারি আমি এখন, তোমার বৃষ্টির ফোটায় ভিজতে যে সুখ তার তুলনা নেই... এত অরুণ রাঙ্গা ভোর কোথায় পাবো আর? কে দেখাবে ওরকম শিশিরের ভেতর সুয্যির কিরণ! আমার ঘাম ঝরে তোমার মাটিতে... আমার রক্তের ফোটা পড়ে তোমার যমিনে... সব্বাই তাড়িয়ে দিলেও তুমি রাখবে আগলে জানি...যে নতুন শহরেই যাই আমি মাটি ছুয়ে দেখি মা...সাগরের জলে বিসর্জন দেই শহুরে পাপ... তোমার জ্যোৎস্না ভরা অন্ধকার রাতেই আমি চাচার মুখে লুল্লুভুতের গল্প শুনি মা... গভীর রাতে যশোর বেনাপোল রোডে হাঁটি রাজার মত... সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড আওড়াই...তোমার মাটির পরে অপ্সরীকে নামতে দেখে মুগ্ধ হয় আমার নয়ন...এত্ত সবুজ কেমনে হয় তোমার জমিন??? কিভাবে পারো এত সুস্বাদু সবজি, ফল উগড়ে দিতে? বাবা-মা-ভাই-বোনের এত মায়া আর কোথায়!!! আমার নিশ্চয়ই কোন পূণ্যি আছে! নইলে কেন এত মায়ার জগতে পাঠালেন স্রষ্টা! এব্বড় এই নিয়ামত কে নিজেই ধংস করছি তিলেতিলে, নোংরা করছি রোজ তোমার জমিন, নেশার বোতল চারিদিকে, রগচটা বোকাসোকা তারুণ্য, নোংরা আধুনিকতা, অপরিকল্পিত শহর... তোমার পকেট কেটে কদ্দিন চলবে ভাবছে বাঙালি!!! প্রশ্ন রেখে যাচ্ছি আমিও... উত্তরদাতা কেউ কি আছেন???
“ হে বাংলাদেশ! তোমার বয়স হল কত? এখনো হেলে আছ একিদিকে... যেন যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়বে... হে বাংলাদেশ! কখন দাঁড়াবে শক্ত হয়ে? কখন দাঁড়াবে নিজ পায়ে?”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।