আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিলারী পল্লীর ঋণ গ্রহিতাদের ধমক দিচ্ছেন গ্রামীণ ব্যাংক কর্তারা

আমি বাংলার গান গাই আমি বাংলায় গান গাই আমি আমার আমাকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই

গ্রামীণ ব্যাংকের `ইমেজ' ঠিক রাখতে যশোরের `হিলারী পাড়া'য় তৎপর গ্রামীণ ব্যাংক। ঋণ নিয়ে উপকার না হওয়া সদস্যদের সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা না বলতে `ধমক' দিয়ে চলেছেন ব্যাংকটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ৯ ডিসেম্বরও ওই গ্রামে এসে সদস্যদের এ আদেশ দেন তারা। এদিন পার্বতী নামের একজন সদস্য ও তার স্বামীকে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার জন্য বিশেষভাবে `মকানো' য়। ৯ ডিসেম্বর হিলারীপাড়া ঘুরে এ কথা জানা যায়।

১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটনের স্ত্রী হিলারী কিনটন এসেছিলেন এই গ্রামে। সে সময় গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে শনৈ শনৈ উন্নতি বোঝাতে এই গ্রামের কুড়িজন নারী সদস্যকে ঘর নির্মাণের জন্য ঋণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই ঋণ অনেকের জন্যই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। খেয়ে না খেয়ে এই ঋণ তাদের শোধ করতে হয় বলে ভূক্তভোগী এলাকাবাসী জানান। নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল থেকে ড. ইউনুসের অর্থ স্থানান্তরসহ পল্লী ফোনের নারীদের নিয়ে দু'টি প্রামাণ্যচিত্র প্রচার হয়।

এগুলোর বরাত দিয়ে দেশের সংবাদপত্রগুলোতে গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর বিভিন্ন ধরণের সংবাদ প্রচার হতে থাকে। যশোরের হিলারী পাড়া নিয়েও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বর্তমান বাস্তবতার চিত্র প্রকাশ হয়। এরপরই গ্রামীণ ব্যাংকের প থেকে কয়েক দফায় ওই ব্যাংকের প থেকে গ্রামের সদস্যদের নানা ধরণের আদেশ দেওয়া হয়। হিলারী পাড়ার প্রকৃত নাম মশিয়াহাটি। যশোর ও ঝিনাইদহ জেলার সীমান্তবর্তী বারোবাজারের পাশে এর অবস্থান।

ওই গ্রামটিতে মূলত ঋষিদের (মুচি সম্প্রদায়) অবস্থান। হিলারীর আগমণ উপলে গ্রামের সদস্যদের পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। তাদের জন্য ২৫ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয় এই বাড়ি নির্মাণের জন্য। অনেকেই প্রতি সপ্তাহে এ ঋণ পরিশোধের ৬২৫ টাকা করে দিতে পারেননি। এরপর এদের কয়েকজন নানা ধরণের হয়রানির মুখে পড়েন।

সংবাদ মাধ্যমে এর বেশ কিছু প্রকাশিতও হয়। বিশেষ করে এই গ্রামের ভক্ত কুমার নামের এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রী গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য পার্বতী ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য জমি ও বাড়ি বিক্রি করেছেন বলেও জানা যায়। তিনি এখন সরকারি আবাসন প্রকল্পের একটি ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ৯ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের ঝিনাইদহ আঞ্চলিক দপ্তরের ব্যবস্থাপক আব্দুল করিম ও বারোবাজার শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান মশিয়াহাটি গ্রামে যান। আগে থেকেই সেখানে সদস্যদের সবাইকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়।

ওই গ্রামে ঢোকার মুখের সদস্যদের বগিরাগতের সম্পর্কে কৌতুহল দেখা যায়। কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে কেউ কিছু বলতে চাননি। ওই গ্রামটিতে দারিদ্র্যতার ছাপ খুব প্রকট। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের কারণে গ্রামের ভূমিহীনরা এখন মাথার ওপর ছাদ পেয়েছেন। গ্রামীণ ব্যাংকটির কেন্দ্রে গেলেও সেখানকার কোন সদস্য নিজেদের পরিচয় দিতে চাননি।

অনেকেই বলেছেন, `পনার (সাংবাদিক) সঙ্গে কথা বললে কি আমরা টাকা পাবো? আপনারা শুধু সমস্যাই করেন' ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে সদস্যদের বৈঠকের বিষয়ে জানা যায়, সেখানে ভক্ত কুমার ও তার স্ত্রীকে সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলার ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হয়। কর্মকর্তাদের চাপের মুখে ভক্ত কুমার ও তার স্ত্রী পার্বতী ব্যাংক কর্মকর্তাদের বলেন `বাদ মাধ্যমে আমাদের বরাত দিয়ে যা ছাপা হয়েছে তা ঠিক নয়, আমি তা বলিনি'। ভক্ত কুমারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই বৈঠকের ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। এমনকী সেখান থেকে চলে যেতে চান এবং এ প্রতিবেদকেও সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। সেখানে উপস্থিত অন্য কয়েকজন সদস্যর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভক্ত কুমার বলেন, `স্যররা আমাকে সত্য কথা বলতে বলেছেন।

স্যাররা বলেছেন তুমি সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বলেছিলে কেন?' বাড়ি ও জমি বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, `আমার মেয়ের অসুখ হওয়ায় ঋণ নিতে হয়। ওই ঋণ পরিশোধ করতেই সাত/আট বছর আগে আমি বাড়িসহ জমিটি বিক্রি করি'। মশিয়াহাটি গ্রামে ভক্ত কুমারের জমি ছিল ২ শতক। এর বাইরে তার আর কোন জমি ছিল না। বর্তমানে তিনি বাঁশের জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা চালাচ্ছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.