অন্যের থেকে ও অন্যরকম এমন কিছু করার শখ।
বিস্তারিত জানতে...
আজকে আবার আপনাদের জন্য কৃষি তথ্য নিয়ে হাজির হলাম। শীত চলে এসেছে আর এই সময়টা আমাদের জন্য যে নতুন নতুন শাক-সব্জী খাওয়ার সময় তা তো সবাই জানেন। আবার অনেকে এই সময়টারই অপেক্ষায়ই থাকেন সস্তায় ভোজন বিলাসের আশায়। এই সময়টাতে আপনি ইচ্ছে করলে শাক-সব্জী ফলানোর কাজেও নেমে পড়তে পারেন।
তাই আজ আপনাদেরকে জানাবো আগাম ফুলকপি কিভাবে ফলাতে হয় সেই তথ্য।
ফুলকপির ইংরেজি নাম Cauliflower ও এর বৈজ্ঞানিক নাম B. oleracea var. botrytis.। আগাম ফুলকপির জন্য বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই চারা উৎপাদন করতে হয়। ওই সময়ে ঘরের বারান্দায়, টবে বা গামলায় বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে। পরবর্তী ফুলকপির জন্য বীজ বাইরে বীজতলায় ফেলা হয়।
সাধারণত এক হেক্টরে রোপণের প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা উৎপন্ন করতে ৩৭৫-৭৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। প্রমাণ আকারের ৩×১ মিটার বীজতলার জন্য ১২-১৮ গ্রাম বীজ দরকার। বীজ বপন করার তিন-চারদিনের মধ্যে চারা অঙ্কুরিত হয়। এর প্রায় এক সপ্তাহ পরে চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তরিত করে ৪-৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করা হয়। এক মাসের বয়সের চারা নির্দিষ্ট স্থানে রোপণের উপযুক্ত হয়।
ফুলকপি চাষের জন্য ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা লাগাতে হয়। রোপণ দূরত্ব ৬০´৪৪ সেন্টিমিটার দিতে হয়।
জমি তৈরি : মূল জমি চাষ দিয়ে বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হয়। গোবর সার, কম্পোস্ট, খৈল, ছাই ইত্যাদি সারের অর্ধেক পরিমাণ ভূমি কর্ষণকালে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়।
চারা রোপণ : ৬-৭টি পাতাবিশিষ্ট চারা রোপণ করতে হয়।
আগাম ফসলের জন্য ৬০ সেন্টিমিটার পর পর সারিতে ৪০-৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে মধ্য ফসলের জন্য ৬০ সেন্টিমিটার পর পর সারিতে ৫০-৬০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করা যেতে পারে। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বিকাল। রোপণের পর চারার গোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে পানি সেচ দেয়া দরকার। পরদিন সকালে কলার খোল, কচুরিপানা প্রভৃতি দ্বারা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এ ছায়া বিকালে সরিয়ে চারায় রাতে শিশির পড়ার সুযোগ দিতে হয়।
তিন-চারদিন পর্যন্ত এ ব্যবস্থা এবং সকাল-বিকাল পানি সেচ দিতে হয়। তারপর ছায়া সরিয়ে ফেলা হয় এবং পানি সেচ কেবল বিকালে দিলেই চলে। মাটিতে জো এলে গাছের সারির মধ্যবর্তী স্থানে গাছের গোড়ার মাটি উঠিয়ে, ভেলি করে দেয়া দরকার। রোপণের প্রায় দু’মাসের মধ্যে গাছে ফুল দেখা দেয়। ফুল দেখা দেয়ার ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফুলকপি খাওয়ার উপযুক্ত হয়।
মাটি : আগাম ফসলের জন্য দোআঁশ এবং নাবি ফসলের জন্য ভারী মাটি উত্তম। এঁটেল দোআঁশ মাটিতে প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করে ভালো ফসল জন্মানো যায়।
সারের মাত্রা ও সার প্রয়োগ : ফুলকপি চাষের জন্য মাঝারি উর্বর মাটিতে হেক্টর প্রতি ৩০০-৩৫০ কেজি ইউরিয়া, ১৩০-১৫০ কেজি টিএসপি, ১৫০-২০০ কেজি এমপি এবং ৫-৭ টন গোবর সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এছাড়া অম্ল মাটি ৪০০-৭০০ কেজি, ডলোচুন এবং যথারীতি অনুসার (ঘাটতি মাটিতে) প্রয়োগ করতে হয়। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর, সমুদয় টিএসপি ও অর্ধেক এমপি সার প্রয়োগ করতে হয়।
বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপণের এক সপ্তাহ আগে মাদায় দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হয়।
ইউরিয়া এবং বাকি অর্ধেক এমপি সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। চারা লাগানোর ৮-১০ দিন পর প্রথম কিস্তি এবং চারা লাগানোর ৩০-৫০ দিন পর অবশিষ্ট সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা : ফসলের নিবিড় যত্ন যেমন আগাছা দমন, সার প্রয়োগ, পানি সেচ নিষ্কাশন এবং চটা ভেঙে দেয়া মাটি ঝুরঝুরে ও বায়ুর চলাচলের উপযোগী রাখা আবশ্যক। ফুলকপির রঙ সাদা রাখার জন্য কচি অবস্থা থেকে চারদিকের পাতা বেঁধে ঢেকে দিতে হয়।
ফুল ঢেকে দেয়ার এ পদ্ধতিকে ব্ল্যানচিং বলে।
পোকা দমন : ফুলকপির বিভিন্ন পোকার মধ্যে জাবপোকা। পাতা ও ফুলের রস শোষণ করে। এফিডান সেভিন ৫% পোকা দমন করে। সেফস বা নেক্সিয়ন ও (০.৫%) ওষুধও ছিঁটানো যায়।
অন্যান্য পোকার মধ্যে মাছি পোকা ও মখ উল্লেখযোগ্য। এদের দমনের জন্য ফলিখায়ন কিংবা সুমিথিয়ন প্রযোজ্য।
রোগ দমন : ফুলকপির রোগের মধ্যে ঢলে পড়া এবং মূলের গিট রোগ উল্লেখযোগ্য। এর আক্রমণে রোদের সময় গাছ পাতা ঢলে পড়ে। শিকড় ফুলে স্থানে স্থানে মোটা হয়।
প্রতি ৫০ গ্যালন পানির সঙ্গে ২৩০ গ্রাম পরিমাণে ক্যালোমেল মিশিয়ে গাছে ছিঁটানো ফলপ্রদ। মূল গিট রোগ এক ধরনের নেমাটোড দ্বারা সৃষ্ট। এতে মূলে গিট দেখা দেয়। এর আক্রমণে ইথিলিয়ন ডাই-ব্রোমাইড দ্বারা মাঠে ফিউমিগেশন করার প্রয়োজন হয়। মাটিতে চুন প্রয়োগেও উপকার পাওয়া যায়।
অপুষ্টি রোগ : মলিবডেনামের অভাবে হুইপটেইল রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত অম্লীয় মাটিতে এরূপ ঘটতে পারে। হেক্টর প্রতি ১.২ কেজি পরিমাণে সোডিয়াম কিংবা এমোনিয়াম বলিবডেট প্রয়োগে এ সমস্যা দূর করা যায়। বোরনের অভাবে বাদামি বর্ণের দাগ হয়। কখনো কখনো বিক্ষিপ্ত ফাঁপা কান্ডের সৃষ্টি হয়।
অম্লীয় মাটিতে হেক্টর প্রতি ১২-১৫ কেজি পরিমাণে সাধারণ বোরাক্স সোডিয়াম টেট্রাবোরেট প্রয়োগে এ রোগ দমন করা যায়।
আরো তথ্য পেতে ঘুরে আসুন...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।