কিন্ত যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হীত স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিত, জানাও সে নরাধম জানাও সত্বর অতীব ঘৃনীত সেই পাষন্ড বর্বর
ইট ইমেজের সুবিধা না থাকায় ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশী পতেকাবাহী ‘এমভি জাহাজ মনি’ গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্যাটেলাইট ইমেজ জাহাজটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এর কাছে। তবে জাহাজটির গতিপথ এখনো সোমালিয়ান জলদস্যুদের আস্তানা গালফ অব এডেন এর দিকেই আছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। জলদস্যুর কবলে পড়া জাহাজটির সঙ্গে ভি এইচএফ (ভেরি হাইফ্রিকোয়েন্সি) যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জাহাজটির আরব সাগরের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর, নৌ বাণিজ্য দপ্তর ও জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জাহাজটি ভারত জলসীমার মধ্যে আরব সাগরে অবস্থান করছিল।
এদিকে ছিনতাইয়ের পাঁচদিনেও জাহাজে জিম্মি নাবিক কিংবা জলদস্যু কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি সরকার এবং জাহাজ মালিকদের কেউই। জিম্মির পর জাহাজটি মালিক এবং সেখানে জিম্মি হওয়া প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীসহ ২৬ নাবিকের পরিবারের মধ্যে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রেভ রয়েলের মহা ব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম বলেন, জাহাজটি এখনো জলদস্যুদের আস্তানা থেকে ৫ শ’ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রায় ১০ নটিক্যাল গতিতে সোমালিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়া জাহাজটি ছিল ভারতের কোচিন থেকে ৪শ’ নটিক্যাল মাইল এবং সোমালিয়া থেকে ১ হাজার ১শ’ নটিক্যাকাল মাইল দূরে। স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে জাহাজটি ঘন্টায় ৯ থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল গতিবেগ এখনো অব্যহত রেখেছে জনলদস্যুরা।
জাহাজটিতে অবস্থান করা এক মহিলাসহ ২৬ বাংলাদেশী নাবিকের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি। তবে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন হাবিবুর রহমান বলেছেন, এ পর্যন্ত পাইরেসির শিকার কোনো জাহাজে নাবিকদের কোনো ক্ষতি হয়নি। আমরা জানি জলদস্যুরা সাধারণত মুক্তিপণের জন্যই জাহাজ জিম্মি করে। প্রায় ১৫ বছর ধরে বিদেশগামী জাহাজে চাকরি করে আসা চট্টগ্রাম বন্দরের ডক মাস্টার ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বের তিনটি ব্যস্ততম শিপিং রুটের মধ্যে সবচে’ ভয়ঙ্কর হচ্ছে ইউরো-অস্ট্রেলিয়া রুট। এ রুটে প্রতিদিন শতাধিক অত্যাধুনিক জাহাজ চলাচল করে।
অভিজ্ঞ শিপিং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে সোমালিয়ায় জাহাজ জিম্মি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটনা বাড়ছে। কোন দেশের জলসীমায় আরেক দেশের জাহাজ জিম্মি হলে সংশ্লিষ্ট দেশকে জাহাজটি উদ্ধারে সহায়তা করতে হবে-এমন কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। কারণ আইসিসি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম কনভেনশন) অনুযায়ী এটি আভ্যন্তরীণ ক্রাইম হিসেবে গণ্য। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের কোনো এখতিয়ার নেই। তবে এ ধরনের অপরাধের বিষয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা পাওয়া যায়।
জানা গেছে, জাহাজ মনির ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ গত রোববার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটার সময় ভারতের লাক্ষ্মাদ্বীপ থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল সীমানা অতিক্রম করার সময় জাহাজের আশপাশে কিছু ছোট ছোট নৌযানের অবস্থান দেখতে পান। এ সময় তিনি সমূহ বিপদের আশঙ্কা করে সিকিউরিটি অ্যালার্ম (এসএসএএস) বাজিয়ে দেন। অ্যালার্ম পেয়েই ভি এইচএফ-এ জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাহাজ মালিকের চট্টগ্রামস্থ প্রধান কার্যালয়। ক্যাপ্টেন ফরিদ প্রধান কার্যালয়কে জানান, তাদের জাহাজ জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হতে চলেছে। এরই মধ্যে ক্যাপ্টেন জাহাজটি উল্টো ঘুরিয়ে গতি পরিবর্তন করে ফেলে।
কিছুক্ষণের জন্য ছোট ছোট নৌযানগুলো অদৃশ্য হয়ে আবার জাহাজের দিকে তেড়ে আসতে থাকে বেশ কয়েকটি একটু বড় সাইজের নৌযান। এসব নৌযান থেকে জাহাজে আক্রমণের সময় নাবিকরা হট ওয়াটার স্প্রে শুরু করেন। কিন্তু তাতেও ঠেকানো যায়নি। বিকেল সাড়ে চারটার সময় কয়েকজন জলদস্যু জাহাজে উঠে সকলকে জিম্মি করে ফেলে। এমভি জাহাজ মনির মালিক চট্টগ্রামের কবির গ্রপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেসার্স খাদিজা শিপিং (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে ৪৩ হাজার মেট্রিকটন নিকেলো (আকরিক) নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া-ভূ-মধ্যসাগর রুট হয়ে গ্রিস যাচ্ছিল। এটি সিঙ্গাপুর হয়ে ভারতের কোল ঘেঁষে আরব সাগর অতিক্রমকালে জলদস্যুর কবলে পড়ে। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জাহান মনি জলদস্যুর কবলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় কোস্টগার্ডের সহায়তা চাওয়া হয়। তারা বলেছিল জাহাজটি উদ্ধারে হেলিকপ্টার পাঠাবে। কিন্তু ওই রাত গিয়ে গতকাল সারাদিন পার হলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাহাজটি উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এছাড়াও সহায়তা চাওয়া হয়েছে রিক্যাপ (রিজিওনাল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট ফর কমব্যাটিং ইন শিপস অফ সাউথ এশিয়া) ও মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংস্থা ইউকেএনটিও’র। বেশ কয়েকজন মাস্টার মেরিনার ও প্রকৌশলীর সঙ্গে জাহাজ মনি জিম্মির বিষয়ে আলাপ করে জানা যায়, অতীতে ভারত সীমানার আরব সাগরে কোনো জাহাজের জলদস্যু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার নজির নেই। আকস্মিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম রুটটিতে জলদস্যুতার ঘটনা এই অঞ্চলের শিপিং সেক্টরকে ভাবিয়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যুদ্ধ দাঙ্গা আর দারিদ্র্যপীড়িত সোমালিয়ার জলদস্যুরা নিজেদের পুরনো কৌশল পাল্টিয়ে নতুন কৌশলে জাহাজ ছিনতাই শুরু করেছে। তাদের নতুন কৌশলের প্রথম শিকার জাহাজ মনি।
সোমালিয়ার জলদস্যুরা ইতিপূর্বে ইউরো-অস্ট্রেলিয়া রুটে জাহাজ ছিনতাইয়ের অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের হাতে গত সাতমাস ধরে ২১ অফিসার, প্রকৌশলী, নাবিকসহ জিম্মি রয়েছে জার্মানির পতাকাবাহী ক্যামিকেল ট্যাঙ্কার এমটি মেরিডা মার্গারিটা। জিম্মিদের মধ্যে ১৯ জন ভারতীয় ছাড়াও ২ জন বাংলাদেশী অফিসার রয়েছেন। তারা হলেন, সাতকানিয়ার বাসিন্দা চিফ অফিসার জাফর আলম ও হাটহাজারীর সেকেন্ড অফিসার গিয়াস উদ্দিন মোহাম্মদ আজম খান। স্যাটেলাইট চিত্র দেখে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জাহান মনি এখন সোমালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
যে গতিতে জাহাজটি চলছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, গত রাতের মধ্যে সেটি আরব সাগর অতিক্রম করবে।
সূত্র: ইউ কে বিডিনিউজ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।