বুঝেশুনে হ্যাঁ বলুন।
অফিসে বসেই মন খারাপ করা খবরটা জেনেছিলাম। বাসায় এসে টিভিতে বিস্তারিত ঘটনাপ্রবাহগুলো মনযোগ দিয়ে দেখলাম। যা ঘটেছে তা হচ্ছে এই- বুধবার সন্ধ্যা পৌনে পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেন চট্টলা এক্সপ্রেস ও মহানগর গোধূলীর মধ্যে মুখোমুটি সংঘর্ষ হয়েছে। সুত্রের বিভিন্নতায় নিহতের সংখ্যা ১৫ থেকে ১৯ আর ১৭০ থেকে ২০০ জন আহত হওয়ার খবর এখন পর্যন্ত জানা গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় আহতদের ২৬ জনকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ২৩ জনকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার মূল কারন বুধবার বিকালের দিকে ঢাকামুখী চট্টলা যখন প্ল্যাটফর্মের লাইনে ঢুকে পড়ে তখন সে লাইনে ছিলো চট্টগ্রামগামী মহানগর গোধূলি এক্সপ্রেস। ফলে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। চট্টগ্রাম থেকে আসা চট্টলা এক্সপ্রেস নরসিংদী স্টেশনে না দাঁড়িয়ে সরাসরি প্রধান রেলপথ হয়ে ঢাকা চলে যাওয়ার কথা ছিলো।
অন্যদিকে মহানগর গোধূলী এই ট্রেনটিকে পাশ দেওয়ার জন্য স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু সংকেত ভুল করায় একই লাইনে চট্টলা ট্রেনটি চলে আসে। যার কারনে ঘটেছে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ঘটনার পুর্বাপর বিশ্লেষণ করলে এর পেছনে দুটি সম্ভাব্যতা পাওয়া যায়-
ক) হয় চট্টলার চালক সিগন্যাল অমান্য করে মূল লাইন ছেড়ে প্ল্যাটফর্মের লাইনে ঢুকে পড়ে।
খ) অথবা সিগন্যালের ভুলের কারনে গোধূলি মূল লাইন থেকে প্ল্যাটফর্মের লাইনে ঢোকার সময় অন্যদিক থেকে আসা চট্টলা মূল লাইনে থাকলেও মূল লাইনে লালবাতি জ্বলতে দেখে চট্টলা প্ল্যাটফর্মের লাইনে চলে আসে।
দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে গঠিত ৪ সদস্যের কমিটির প্রধান প্রকৌশলী ইউসুফ আলী মৃধার ভাষ্যমতে, "নরসিংদী স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল রয়েছে। এক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল অনুযায়ী চট্টলার থামা উচিৎ ছিলো। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালে ভুল হওয়ার কথা নয়, তবুও সিগন্যাল রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা হবে। " সহকারী স্টেশন মাস্টার জানান, ‘মূলত এক নম্বর লাইনে যাত্রাবিরতির জন্য মহানগরের সবুজ সিগন্যাল ছিল।
কিন্তু মহানগর আসার আগেই চট্টলা ট্রেনটি হোমসিগন্যালে ঢুকে যায়। এরপর তা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। চট্টলা ট্রেনটি সিগন্যাল না মানার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের ধারণা। ’
অন্যদিকে চট্টলা এক্সপ্রেসের চালক রফিক উদ্দিন দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি দাবী করছেন তিনি কোনো সঙ্কেত পাননি।
তিনি বলেন, "মাত্র এক থেকে দেড়শ গজ দূর থেকে দেখতে পাই আরেকটি ট্রেন (গোধূলি) প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। তখন ট্রেনের গতি ৭০ কিলোমিটার থাকলেও তা কমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। " তদন্ত কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, রফিকের সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনার বিষয়ে আরো তথ্য নেওয়া হবে। এছাড়া নরসিংদী রেলওয়ের কর্মকর্তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
বিক্ষুব্ধ জনতা স্টেশন ঘেরাও করে রেখেছে। রেল দুর্ঘটনা তদন্তে রেলওয়ের পাশাপাশি নরসিংদীর জেলা প্রশাসন আলাদা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আমার কিছু কথা
আমার স্বল্প জ্ঞানে আমি বুঝি বর্তমান স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থায় একই লাইনে দুটি ট্রেন উঠার সম্ভাবনা প্রায় শুন্যের কোঠায়। এ থেকে বোঝা যায় রেলকর্মীদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা আর অদক্ষতার মাত্রা কতটুকু। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তদের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ইতিমধ্যেই সবচেয়ে লাভজনক রুট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। লাভের গুড়ের হিস্যা বাড়ানোর জন্য আমাদের সীমাবদ্ধ রেলওয়ে রুটের সংস্কার না করে, অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কোনো উন্নতি না করে একের পর এক নতুন ট্রেন যোগ করাটা কতটা যুক্তিসংগত ছিল- এর জবাবদিহিতা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে করতেই হবে। আমরা চাইনা বারবার এই অকারন প্রাণহানি, চাইনা বয়ে বেড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর হাহাকার আর কান্না। যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন, দায়িত্ববান কর্মচারী নিয়োগ দিন, রেলসেবার মানোন্নয়ন আর দক্ষতা বৃদ্ধি করুন- নিরাপদে থাকতে দিন আমাদের আর আমাদের প্রিয়জনদের।
সবশেষে শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।
সেইসাথে ভাগ্যাহত নিহত যাত্রীদের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তাদের জান্নাত প্রাপ্তির জন্য দোয়া করছি। আল্লাহ (সুবঃ তা'আলা) সবার জীবনের পাপ ক্ষমা করুন।
সূত্র- বিডিনিউজ২৪ ডট কম এবং প্রথম আলো ডট কম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।