একটা ভূমিকা দেয়াই লাগে। স্কুলে থাকতে গল্পের বই পড়তে পড়তে মনে হল, আরে আমিও তো গল্প লিখতে পারি, এটা কোন কঠিন কাজ হল? শুরু করে দিই, একদিন তো মহান গল্পকার হয়েই যাব । ঐ সময় আমার লেখার পাঠক-পাঠিকা ছিল আমার ভাই-বোনরা। পরে এক সময় খুব কাছের কিছু বান্ধবীদেরও পড়তে দিয়েছিলাম। সেদিন অনেক বছর পর সেই পুরনো খাতাগুলো বের করলাম।
হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে, এগুলো কী লিখেছিলাম রে বাবা। আর না হয় লিখলামই, অন্য কাউকে পড়তে দিলাম কিভাবে? লজ্জা-শরমের মাথা খেয়েছিলাম নাকি।
যাক গে, তখন যখন পড়তে দিতে পেরেছি তো এখন কেন নয়। হাস্যকর লেখাগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরার সাহস করেই ফেলি। পুরোপুরি অরিজিনাল লেখাগুলোই তুলে দিলাম, তবে মাঝখানে বর্তমানের কিছু অভিব্যক্তি না ঢুকিয়ে পারলাম না।
বুঝে নিয়েন। ফালতু লেখা পড়ে বিরক্ত হলেও কিছু করার নাই, বয়সের হিসাবটা মাথায় রেখে পড়লে ভালো হয়। এই গল্পটা যখন লিখেছিলাম তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি।
আমাদের ঝগড়া - বড় গল্প
(মানুষ ছোট হইলে কী হবে, গল্প বড় আছে )
পাত্র-পাত্রী (খাইছে, গল্প লিখতে বইছিলাম না বিয়ার কার্ড )
ওয়াজেদুল ফারুক: প্রাইভেট ডিটেকটিভ। (ফেলুদা সিরিজ পড়া শুরু করছিলাম মনে হয় ঐ সময় ) বয়স-২৮ (বয়সটা কি কম হইয়া গেল না )
আরমিন: বড় বোন।
ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।
মুনিয়া: সেজ বোন। ক্লাস সেভেনে পড়ে।
রিফাত: ছোট ভাই। ক্লাস ফোরে পড়ে।
আব্দুল: কাজের ছেলে।
বাবা, মা, মেজ বোন ও ছোট বোন দেশের বাইরে গেছে। (অদৃশ্য চরিত্র)
১.
দুপুর বেলা। রিফাত তারস্বরে গাইছে-
-"ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট, হিজ আ হিরো---"
-"এই চুপ কর। সারাদিন কেবল চিৎকার।
আমাকে এখন ঘুমুতে দে। " গান থামিয়ে দেয় বড় আপা।
রিফাত মুখ গোমরা করে পাশের ঘরে যায়। আর তারপরেই চিৎকার করে গাইতে থাকে - "হুররে, হুররে, ইটস আ হলি হলি ডে। "
বড় আপা হা হা করে তেড়ে আসে।
(এইটা কেমন করে করা যায় কে জানে। ) ঠাস করে গালে একটা চড় লাগিয়ে দিয়ে বলে - "তোকে চুপ করতে বললাম না। বড্ড বেয়াদপ হয়েছিস। "
রিফাত নির্ভীক চিত্তে বলে, - "বড় আপা, আমি বড় হয়ে রকস্টার হব, দেশে-বিদেশে গান গেয়ে সুনাম কুড়াব, তা কি তুমি চাও না?"
- "না চাই না, তোকে ডাক্তার হতে হবে। " (আচ্ছা! )
রিফাত ফোঁপাতে ফোঁপাতে অ্যাক্টিং করে বলে - "তাহলে আমি মরে যাব।
"
-"আরে আরে কি যন্ত্রণা! কথায় কথায় এত কাঁদিস কেন, মরে যাবি কেন?"
-"তুমি জানো না বড় আপা, ডাক্তার হতে হলে মরা মানুষের লাশ কাটতে হয়। আমি তেলাপোকা দেখলেই ভয়ে লাফ দিই। আর তুমি বলছ লাশ কাটতে। "
-"দ্যাখ, ডাক্তার হতে হলে কী করতে হয় তা আমি জানি না। আর যদি লাশ কাটতেই হয় তাহলে কাটবি, তোকে তো আর একা একা কাটতে বলবে না, সবাই পাশে থাকবে।
তাদের দেখে তোর সাহস এসে পড়বে। "
কান্না থামিয়ে রিফাত বলল,
-"তা তো বুঝলাম। কিন্তু-"
-"কিন্তু কি?"
-"যেদিন আমি লাশ কাটব সে রাতে আমি স্বপ্ন দেখব, যে লাশটাকে আমি কেটেছি সেই উল্টো আমাকে কুচিকুচি করে কেটে ভেজে খাচ্ছে। আর তাহলেই হয়েছে। আমাকে আর বেঁচে থাকতে হবে না।
ঘুমুতে ঘুমুতে স্বপ্ন দেখতে দেখতেই মরে যাব। "
-"শাট আপ। তোর বেয়াদপি দিন দিন বাড়ছে। নিজেও ঘুমুবে না, আমাকেও ঘুমুতে দেবে না। যা ঘুমো।
" (কিয়ের মইদ্যে কী? )
-"ঘুম আসে না তো। "
-"না আসলে চুপ করে শুয়ে থাক গে। "
বড়আপা বেডরুমে চলে গেল। রিফাত মনমরা হয়ে সোফায় আমার পাশে বসল। আমি এতক্ষণ একটা পত্রিকা পড়ছিলাম।
পড়ছিলাম না, ওদের ঝগড়া শুনছিলাম। পত্রিকাটা বন্ধ করে রিফাতকে বললাম,
-"রিফাত, তুই বাগানে গিয়ে আস্তে আস্তে গান গাইতে থাক, তাহলে বড় আপা কিছু বলবে না, তবে চ্যাঁচাবি না কিন্তু। "
-"তাহলে তুমিও আমার সাথে চল। "
-"না আমি তোর গান শুনতে পারব না। "
-"প্লিজ আপুনি, চল না।
"
-"আচ্ছা চল। "
দুজনে বাগানে গিয়ে বসলাম। রিফাত তখন গুন গুন করে গান গাইছে। আমি একটু দূরে বসেছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না কী গান গাইছে।
তবে মনে হল ইংলিশ গান না, হিন্দী গান। একটু কাছে গিয়ে শুনলাম যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। রিফাত গাইছে, -"মেরে সামনে ওয়ালে খিড়কী মে, এক চান্দ কা টুকরা রেহতাহে। "
আমি কিছুক্ষণ শুনে উঠে গেলাম। বাগান ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম।
বেশ বড় বাগানটা। পেছনের দিকে প্রায় সব কয়টি গাছই ক্রিস্যানথিমামের। একেকটা একেক রকম। আমি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম। বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে রিফাতের কাছে আসলাম।
ও এখন আরেকটা গান গাইছে। মনে হল ইংলিশ গান। কাছে এসে শুনি ও গাইছে - "ব্রাউন গার্ল ইন দ্য রেইন, ট্রা লা লা লা লা-"
আমি থামিয়ে দিয়ে অন্য গান গাইতে বললাম। সে আপত্তি না করে গাইতে লাগল - "ম্যারিস বয় চাইল্ড-"
-"থাম। বললাম ভালো গান গাইতে, শুরু করল একটা পচা গান।
তুই গাইতে থাক আমি ঘরে যাই। "
ঘরে ঢুকতেই আব্দুল দৌড়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
-"বড় আফায় নাই। "
-"নেই মানে?"
-"কি জানি, বিছনাডা আউলাইয়া রইছে। কুনুহানে বড় আফারে পাইতাছি না। পাকঘর, বাতরুম, হগ্গল জায়গায় বিছরাইছি।
বাগানে গেছে নাকি, আফনে দ্যাকছেন?"
-"না তো, বাগানে তো যায়নি। চল তো আমার সাথে বাগানে খুঁজে আসি। "
বাগানে যেতেই দেখি রিফাত উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে তাকে চিৎ করে দেখি অজ্ঞান হয়ে গেছে। তাকে তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে এলাম।
বিছানায় শুইয়ে দেয়ার পর তার জ্ঞান কিছুটা ফিরে এলে বলল, (জ্ঞান আবার কিছুটা কেমনে ফিরে )
-"আপুনি তুমি কোথায়? ঘাড়টা একদম ভেঙে দিল। উহুহু। "
-"রিফাত, আমি এখানে তোর পাশেই। কী হয়েছে বল। "
-"আপুনি, তুমি যাবার দুই মিনিট পর মনে হল পিছনে কে যেন হেঁটে হেঁটে আমার দিকে আসছে।
পিছন ফিরে তাকাবার আগেই ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা। আহ্। তারপর আর কিছু মনে নেই। "
-"আব্দুল, শিগগির বাগানে চল তো। " বলেই আমি এক লাফে বাগানে আসলাম।
রিফাত যেদিকে বসে ছিল সেদিকে গেলাম। ও যেদিক ফিরে বসেছিল তার পেছনে গাঁদা আর গোলাপ গাছ, আর তারপরেই ক্রিস্যানথিমাম। আমি আব্দুলকে নিয়ে সেদিকে দৌড়ে গেলাম। তখন অন্ধকার হয়ে আসছে। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না।
(ফুলগাছগুলা কি বটগাছের সাইজ ছিল নাকি যে কিছুই দেখা যায় না ) ফিরে এলাম ঘরে। ফোন করলাম একটা নাম্বারে। এদিকে রিফাত আবার অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। (ও আইচ্ছা, এইটার মানেই তাইলে "কিছুটা জ্ঞান ফিরা" )
২.
গোয়েন্দা ওয়াজেদুল ফারুক (ফেলুদার বিলাই সংস্করণ ) এইমাত্র মার্কেট থেকে ফিরেছেন। (তাও ভালো লিখিনাই যে গোপন দুর্ধর্ষ মিশন শেষে ফিরছেন ) অত্যন্ত ক্লান্ত।
(আজিব তো, বউ নিয়া তো যায়নাই, ক্লান্ত হইল কেমনে ) হাতমুখ ধুয়ে ভাবলেন কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে মার্কেটিং এর জিনিসপত্র গুছাবেন। (এত কিসের মার্কেটিং ) কাপড় পাল্টে বিছানায় শুলেন। আর এমন সময় ক্রিং ক্রিং ক্রিং। বিরক্তিসূচক শব্দ করে রিসিভার তুললেন-
-"হ্যালো। "
-"হ্যালো, ফারুক ভাই, আমি মুনিয়া।
"
-"কি রে, কেমন আছিস?"
-"তুমি তাড়াতাড়ি এসো। তুলকালাম কান্ড হয়ে গেছে। "
-"কী হয়েছে?"
-"বড় আপাকে পাওয়া যাচ্ছে না। রিফাতের মাথায় কে জানি বাড়ি দিয়েছে। "
-"বলিস কি! আমি এক্ষুণি আসছি।
"
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি হয়ে গাড়িতে স্টার্ট দিলেন। (ওরে বাবা গাড়িও আছে, যেন তেন গোয়েন্দা না ) খুব দ্রুত চিন্তা করছেন ফারুক সাহেব। (সাহেব হয়ে গেল কেমনে ) মুনিয়া কী বলল, সত্যিই কি এরকম কিছু ঘটেছে, নাকি মুনিয়া ডজ খাওয়াবে। মেয়েটা যা পাজি! (গোয়েন্দার দ্রুত চিন্তাধারা তাইলে এই )
চলবে? চললেও চলতে পারে.........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।