গণমাধ্যমকর্মী, চেয়ারম্যান - উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান, সদস্য সচিব - সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন।
মগের মুল্লুকের বাজার!
বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কোনো কার্যকারণ ছাড়াই। এক লাফে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। সয়াবিনের অযৌক্তিক দাম বাড়া নিয়ে একটি মানবাধিকার সংগঠনের রিট আবেদনের পরিপ্রেেিত হাইকোর্ট মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে রুল জারি করেন।
এ পরিস্থিতিতে গত সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক খান (অব.) মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের ডেকে বেশ কঠিনভাবে শাসিয়ে দেন। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দেশটা মগের মুল্লুক নয়, আপনারা ব্যবসা নয় মুনাফা করছেন’। বৈঠকে খুচরা সয়াবিনের মূল্য ৯০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯১ টাকা করা হয় এবং আগামী রোববার বোতলজাত ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। এসবের ইতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখার অপোয় আমরা।
শুধু ভোজ্যতেল নয়, প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়েই বাজারে চলছে নৈরাজ্য।
চাল-চিনি সবকিছুরই দাম বিনা নোটিশে যখন তখন বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সয়াবিন তেলের দাম গত সপ্তাহে অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, দেশের একেক জায়গায় একেক দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। এখন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৬ থেকে ১০২ টাকা কেজি দরে। এক মাস আগেও এর দাম ছিল ৯০ থেকে ৯২ টাকা।
ভোজ্যতেলের এরকম দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সবসময়ই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বলে থাকেন। আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় নাকি আমাদের বাজারে দাম কমই আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি দামে কেনা তেল নাকি আরো বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। কিন্তু আমদানিকারকদের এ তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
স¤প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক তাদের রিপোর্টে দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বাড়েনি বরং কমেছে।
সে হিসেবে দেশের বাজারে সয়াবিনের দাম কমার কথা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ ব্যবসায়ী কারসাজিতেই ইচ্ছেমাফিক দাম বাড়ানো হচ্ছে। বলাই বাহুল্য, আমাদের দেশে সয়াবিন তেলের চাহিদা ব্যাপক। অর্থাৎ এটা একটি প্রধান আমদানি পণ্য। ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটবাজি ও অসাধুতা কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ীর পকেট ভারী করলেও ক্রেতাসাধারণের ওপর ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
মহাজোটের সরকার মতা গ্রহণের পর থেকেই বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটবাজি বন্ধ করা, টিসিবিকে সক্রিয় করাসহ নানা উদ্যোগের কথাই বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তার সামান্যই ফল দেখা গেছে। সর্বশেষ বাণিজ্যমন্ত্রী বাজার নৈরাজ্যের জন্য দায়ী করলেন ব্যবসায়ীদের দ্বারা ডিও (সরবরাহ আদেশ) পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার না হওয়াকে। ডিও প্রথার পরিবর্তে ডিলার ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও এ সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতি জানা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
স¤প্রতি তেল-চিনির বাজার দেখে এরকমই মনে হয়। কিন্তু এটা দেখার কেউ আছে বলে মনে হয় না। স¤প্রতি একটি রিট আবেদনের প্রেেিত হাইকোর্ট সরকারের কাছে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাও জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এতে করে মন্ত্রণালয়ের টনক যে নড়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সোমবারের তৎপরতাই তার প্রমাণ।
জানা গেছে মন্ত্রীর ডাকে প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা নিজেরা না গিয়ে তাদের প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছেন। এটা তাদের নেতিবাচক মনোভাবেরই প্রকাশ। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে, এতে নিশ্চয়ই উভয়প একটা যৌক্তিক জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন।
বাজার-নৈরাজ্যের প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান অবশ্যই ইতিবাচক। তবে অতীতের আমাদের অভিজ্ঞতা হলো শুধু হুমকি-ধামকি তেমন কোনো ফল দেয় না।
এর জন্য দরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে, সিন্ডিকেটবাজি রোধে উপযুক্ত কৌশল ও পদপে গ্রহণ এবং সার্বণিক বাজার মনিটরিং।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।