আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মগের মুল্লুক

এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে আমাদের দেশটার নাম যদি বাংলাদেশ এর পরিবর্তে মগের মুল্লুক ঘোষণা করি তাহলে কি হতে পারে? মনে একটা ভয় জেগে উঠল। কারন আমাদের দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা নিশ্চয়ই আমার টুটি চেপে বলবে, হারামজাদা, এতো কষ্ট করে দেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে মুক্ত করলাম আর তুমি সেইদিনের ছোকরা নাম নিয়া ফাইজলামি কর? চিন্তা করে দেখলাম নামের বুৎপত্তিগত তাৎপর্য হিসাব করলে ১৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষীদের দেশের নাম বাংলাদেশ হবে সেটাইতো স্বাভাবিক। আর আমাদের দেশেতো বুদ্ধিমান বুদ্ধিমতুপদের অভাব নাই। সুতরাং নাম পাল্টানোর চেষ্টা করলে একদল বলবে - এটা মগের মুল্লুক নামের আড়ালে মগদের রাজ্য ঘোষণা করে চাকমা, খাসিয়া, মুরংসহ অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর প্রতি চরম অশ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং দেশের এরকম সংকটপূর্ণ অবস্হায় নতুন করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিয়ে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার বানচালের একটা গভীর ষড়যন্ত্র। আরেকদল এটাকে পার্বত্য শান্তিচুক্তির Long term side effect হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পর পুরো দেশকে মগ তথা উপজাতীয়দের হাতে তুলে দেয়ার আওয়ামী ষড়যন্ত্র হিসাবে চিন্হিত করবে।

সুতরাং নাম নিয়ে ফাইজলামি করলে একটা বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে। পরক্ষণেই মনে হল ঘোড়ার ডিম হবে। আমিতো আর শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া না যে আমি কিছু একটা বললে দেশের ৩৫ যোগ ৩৫ ভাগ মানুষই পীর সাহেবের তোবারক খাবার মতো সেটা গ্রহণ করবে। আমি খুবই ক্ষুদ্র প্রকৃতির একটা মানুষ। তাই আমি একটা কিছু বললে ব্লগের দুই চারজন মানুষের মধ্যে একটু মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি ছাড়া বেশি কিছু হবে না।

কোথায় যেন পড়েছিলাম বেশি রাগ লাগলে কাঁচের বস্তু ভাঙ্গলে রাগ কমে। কিন্তু আমারতো আর হলমার্ক বা ডেসটিনি গ্রুপ মার্কা পয়সা না। তাই গ্লাস ভাঙার আগে দামের কথা ভাবলে রাগটা অনেকটাই কমে যায়। তাছাড়া চারপাশে মেজাজ খারাপের এতো অনুসঙ্গ তাই ভাঙা শুরু করলে রাশিয়া ভেঙে এতোদিনে ভাটিকান সিটি হয়ে যেত। তাই ভাঙ্গাভাঙ্গি আপাতত বন্ধ।

তবে মনের খচখচানিতো বন্ধ হয়না। তাই লিখি, মনের জ্বালা মিটাতে লিখি। কিন্ত লেখাও হয়না আসলে। নাহলে মেঘনাদ বধের মতো দুই তিনটা সংকলন আমারও থাকত। যাইহোক, মূল প্রসংঙ্গে আসি।

একটু আগে Breaking news এ দেখলাম পি এস সি ৩৩তম বি সি এস লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কারন এখন পর্যন্ত না জানা গেলেও এর পিছে যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটা ব্যাপার আছে এটা বোঝার জন্য আইনষ্টাইন হওয়া লাগে না। আমার বউ এবারের বি সি এস পরীক্ষার্থী যে আজ সড়ক পথের ভোগান্তি এড়াতে আমার চার বছরের শিশুকন্যা এবং আমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ী, শ্যালিকাসহ রেলপথে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। একজন পরীক্ষার্থীর সাথে এতো বড় লটবহরের কারন ৭ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত চলা পরীক্ষার সময় শাশুড়ী ও শ্যালিকা কর্তৃক আমার মেয়েকে সামলানো। এই পুরো সময় তারা আমার এক মামা শ্বশুড় এর বাসায় থাকবে (তাও ভালো, এই অপশন না থাকলে হোটেল ভাড়া করে কিভাবে কি করত চিন্তা করতে পারছিনা)।

সবিস্তারে এইসব কাহিনি বলার মূল কারন আসলে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তিগুলো আরেকবার সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়া। দায়িত্ব নেয়ার আগে আমাদের নতুন রেলমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন তিনি রোনাল্দোর মতো শেষ মূ্হুর্তে গোল দিয়ে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হবেন। সেই উদ্দেশ্যে আমাদের মূমূর্ষ রেলকে শুরুতেই তিনি এমন লাথি মারলেন যে রেল এর ভাড়াতো বাড়লই সাথে ঈদ মৌসুম ছাড়াও সাড়ে বারটার ট্রেন খোড়াতে খোড়াতে কুমিল্লা ষ্টেশনে এসে পৌছালো বিকাল চারটায়। তারপর ঈশপের কচ্ছপের মতো আরও মানুষ সহযোগে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এবং মোটামুটি সবগুলো ষ্টেশন চুমু খেতে খেতে যখন ফেনী পৌছালো তখনই Breaking news। News টা শোনার পর আমার বউয়ের দীর্ঘশ্বাস সরকারের নীতিনির্ধারকরা না টের পেলেও আমি যে তাদের মতো বোধ জ্ঞানহীন একটা অমানুষে পরিণত হইনি তা প্রমাণ করার জন্যই মুঠোফোনের মাধ্যমে আমার কান আর হৃদয় দুটোই ছুয়ে গেল, কারন পরীক্ষার জন্য তার বর্তমান কর্মস্হল থেকে ছুটি জোগাড় এর সংগ্রামের খবর আমিতো জানি।

আর দেশটাতো আমার বউয়ের বাপের বা জামা্ইয়ের না যে খেয়াল খুশীমতো যখন তখন আবার ছুটি নেয়া যাবে। এখন হঠাৎ করে পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় আমার পুরো পরিবার যে মানসিক, শারীরিক ( আজকের অভিজ্ঞতা নিয়ে A journey by train রচনা লিখলে এটা ভ্রমণ কাহিনী না হয়ে নির্ঘাত ভোগান্তি আর দূর্ভোগের রম্য রচনায় পরিণত হবে) এবং আর্থিক ক্ষতি হলো এর দায় কে নিবে? হায়রে খোদা, আমিও টক শো এর সুশীলদের মতো শুরু করলাম। যে দেশে তারেক, মিশুকের মতো ক্ষণজন্মারা কুকুর বিড়ালের মতো মরে, যে দেশে দুইবারের সেরা মেয়রকে তার দলেরই লোকজন পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে, যে দেশে শিক্ষকদের উপর পুলিসরা হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে, সেই দেশে আবার মানসিক আর আর্থিক ক্ষতি। বরং এই বর্ষণমুখর সময়ে পরীক্ষারত অবস্হায় আমার বউয়ের মাথায় যে কোন সরকারী কেন্দ্রের ছাদ ভেঙ্গে পরে নাই তাই নিয়েই হয়ত খুশী থাকা উচিৎ কারণ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করে। পাগলের শান্তি নাকি মনে মনে।

তাই কিছুদিন ধরেই চাউড় হওয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবে কান না দিয়ে আস্থা রেখেছিলাম প্রথম আলোর এই নিউজ এ। ৩৩তম বিসিএস প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব সঠিক নয়: পিএসসি ৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে—এমন গুজব শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। পাঁচ লাখ টাকা দিলে সব প্রশ্নপত্র মিলবে—এমন কথাও বলা হচ্ছে। পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছারউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, একেকটি বিষয়ের অসংখ্য প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছে।

পরীক্ষা শুরুর মাত্র ১৫ মিনিট আগে লটারি করে ঠিক করা হবে কোন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে। ’ ৩৩তম বিসিএস প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব সঠিক নয়: পিএসসি আজকাল আমাদের দেশের সরকারী আমলাদের কথাবার্তা হয়ে গেছে রাজনীতিবিদদের মতো। তারা যখন একটা কথা বলবে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো তার ঠিক উল্টোটাই ঘটবে। আমাদের দেশের পাবলিক কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। তার সাথে প্রতিবছর যোগ হয় বি সি এস পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নাটক।

দুইদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের স্টেশনে রাত কাটানোর দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে গেলাম - স্টেশনে রাত কাটিয়ে সকালে পরীক্ষা কিছুদিন আগে শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যার প্রস্তাব দিয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে মেডিকেল কলেজ এর মতো এক প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিইচ্ছুক ছেলেমেয়েদের ভোগান্তি অনেকটাই লাঘব করা যায়। কিন্ত এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার কেউ কি এদেশে আছে? আমাদের সরকারী আর বিরোধীদলতো ব্যস্ত কিভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল বা বহাল রেখে ক্ষমতার নামে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দূর্নীতির Wholesale Agency বাগিয়ে নেয়া যায়। তবে একবছর পর এরাই আবার নৌকা আর ধানের শীষ নিয়ে এইসব ছেলেমেয়েদের পায়ের উপর নির্লজ্জের মতো ঝাপিয়ে পড়বে। তখন কে কম খারাপ বিবেচনা করে এদের কাউকে করুণা করা ছাড়া আর কোন বিকল্প কি কারো কাছে আছে? আসুন আরেকবার বি সি এস পরীক্ষায় ফিরে যাওয়া যাক। এবার নাকি ২৮,০০০ পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা।

বি সি এস পরীক্ষার সীট শুধু বিভাগীয় শহরগুলোয় ফেলার মূল উদ্দেশ্য যদি এমন হয় যে পরীক্ষা যত Centralized হবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ ততো কমবে তাহলে না হয় বিভাগীয় শহরের বাইরে থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তিটা মেনে নেয়া যেত। কিন্ত বাস্তবে এর কোন সুফলতো কেউ পাচ্ছে না। পি এস সির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অসংখ প্রশ্নপত্র তৈরি, ১৫ মিনিট আগে লটারি করে প্রশ্ন ঠিক করার কথা শুনলে হবুচন্দ্র রাজা আর গবুচন্দ্র মন্ত্রীর জুতা আবিস্কারের কাহিনী মনে পরে যায় যারা পায়ের পরিবর্তে গোটা দেশটাকেই চামড়া দিয়ে ঢেকে দিতে চেয়েছিল। তাই পি এস সি যতই নতুন নতুন কায়দা কানুন বের করুক, বিজি প্রেস আর মাত্র ৭টা বিভাগীয় শহরের যেকোন জায়গা থেকে যদি প্রশ্ন ফাঁস আটকানো না যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্যান্ডেল টানায়ে পরীক্ষা নিলেও কোন লাভ হবে না। তবে এর মধ্যে যদি গবুচন্দ্রের বুদ্ধিমতো চামড়া দিয়ে সবকিছু মুড়ে দেবার কোন বিষয় থাকে তবে আলাদা ব্যাপার কারণ সে ক্ষেত্রে চামড়া সাপ্লাই এর টেন্ডার যে গবুর লোকজনই পাবে।

শুরু করেছিলাম মগের মুল্লুক নিয়ে। ছোটবেলায় দেখতাম নিতান্তই বোকাদের বড়রা মগা ডাকত। মগা শব্দের ভাবার্থ হলো বেকুব। এখানে লক্ষণীয় যে আমি কিন্ত মগাদের বোকা বলছিনা কারণ আমার মতে বোকারা বেকুবদের চেয়ে অনেক উন্নতশ্রেণীর। কারন বুদ্ধিমানরাও ক্ষেত্র বিশেষ এ বোকা বনে যেতে পারে কিন্ত বেকুবদের যে কোন হুশ জ্ঞান নাই।

মনে হচ্ছে সরকারী আর বিরোধীদল যেভাবে আমাদের মগা বানিয়ে যাচ্ছে তাতে দেশের নামটা পরিবর্তন করে মগের মুল্লুক বানিয়ে দিলে ক্ষতি কি? (৬। ১০। ২০১২ ইং) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।