(
আজ বিশ্ব এইডস দিবস. আসুন আমরা এই বাপারে সবাইকে সচেতন করে তুলি।
এইচআইভি হলো বিশেষ এক ধরনের ভাইরাস। এই ভাইরাস মানবদেহে রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে ফেলে। ফলে মানুষ তার শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে এক পর্যায়ে মারা যায়। AIDS-এর অর্থ হলোঃ A=Acquired (অর্জিত), I=Immune (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা), D=Defiiency (অভাব), S=Synedrome (লক্ষণগুলো) এইচআইভি সংক্রমণের পরিণতি এইডস।
বিভিন্ন জীবাণুর হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। সেই ক্ষমতা শরীরে প্রহরীর ভূমিকা পালন করে শরীরকে নানাবিধ রোগ-ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করে। এইচআইভি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করে দেয়। তখন শরীর প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং তার শরীরে নানা রকম রোগরে লক্ষণ দেখা দেয়।
এই অবস্থাকেই এইডস বলা হয়।
বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষের ৮৫ শতাংশ মুসলমান হওয়ার কারণে ইসলামি বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, ধর্মীয় সংস্কৃতি ও জ্ঞান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ও মাদ্রাসা গ্রামের মানুষের জীবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের ৫০ শতাংশের বেশি লোক নিরক্ষর বা স্কুলে যায়নি। কিন্তু এমন কোনো মুসলমান পাওয়া যাবে না যে মসজিদে বা কোনো ওয়াজ মাহফিলে বা ইসলামি সেমিনারে এবং কোনো ধরনের ধর্মীয় বয়ান শুনতে যায়নি।
মসজিদ হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম।
বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ মসজিদ আছে। প্রতি শুক্রবার প্রায় ২ কোটি মুসলমান জুমার নামাজে হাজির হন নামাজ পড়ার জন্য। ইমাম সাহেব প্রতি শুক্রবার খুতবার আগে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। মুসল্লিরা বিনা প্রতিবাদে তা শোনেন এবং পরে তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাজের উপকারী বিষয়গুলোর ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গ্রামীণ জনপদে মসজিদ হলো সামাজিক জীবনের ভিত্তি এবং মানুষের ভালো চরিত্র গঠনের ও সামাজিক সংহতি তৈরির সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিষ্ঠান মসজিদ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম।
শুক্রবার জুমার জামাত এইচআইভি/এইডসসহ অন্যান্য মারাত্মক রোগ ও এর ক্ষতিকারক দিক নিয়ে যদি ইমাম সাহেব আলোচনা করেন তা হলে বিষয়গুলো সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আগ্রহভরে শুনবেন।
এইডস রোগ সৃষ্টি ও বিস্তারের মূল ও প্রধান কারণ হলো বহুগামিতা ও ব্যভিচার। ইসলাম ব্যভিচার রোধে কার্যকর পন্থা গ্রহণ করেছে। ইসলাম ব্যভিচার ও পতিতাবৃত্তিকে শুধু নিষেধই করেনি তার নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছে। আল্লাহ বলেন, তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না।
তা অশ্লীল এবং নিকৃষ্ট পথ। (বনি ইসরাইল : ৩২)
আল্লাহপাক মানুষের সব ধরনের রোগবালাই এবং যেসব ব্যাপারে মানুষের সরাসরি হাত রয়েছে সেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে কুরআন পাকের মাধ্যমে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের নিজ হাতে ধ্বংস করে দিও না। (বাকারা : ১৯৫)
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সাঃ বলেছেন, সব মাদকদ্রব্যই নেশাকর এবং প্রত্যেক নেশাই হারাম। (মুসলিম শরিফ)
পরিচ্ছন্ন জীবন কুরআনপাকে আল্লাহ বলেন, মুমিনদের বল তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গ সংরক্ষণ করে।
এটা তাদের জন্য মঙ্গল। (আন- নূর : ৩০)
যে রোগটি আমরা সচেতন হলেই প্রতিরোধ করতে পারি, সেই রোগটি প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নিজেদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আমরা জানি ইসলাম মানুষকে পথ দেখায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা অবলম্বনের এবং প্রত্যেকে রোগের সম্ভাব্য চিকিৎসা অনুসন্ধানের। তাই এইডস প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে মুসলমানদের সজাগ হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আল্লাহপাক পরিচ্ছন্ন জীবনের পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আল্লাহ ভালোবাসেন পবিত্র লোকগুলোকে।
(তওবা : ১৮)
যৌন অধিকার দাম্পত্য জীবনের প্রধানত বিষয়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কাছে উভয়ে যৌন চাহিদা পূরণের অধিকার রাখে। কুরআন পাকে পরস্পরের এই দাবি পূরণকে লিবাস বা অলঙ্কার বলে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্বামী হচ্ছে স্ত্রীর পোশাক আর স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর পোশাক। (বাকারা : ১৮৭)
সুতরাং স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য নারী বা পুরুষের সাথে যৌন মিলন ইসলাম অবৈধ ঘোষণা করেছে।
যারা এই সীমা লংঘন করছে, তারাই সমাজে এইচআইভি/এইডস আগমনের পথকে সুগম করেছে। এ কারণে অনেকে বলেন, এইচআইভি/এইডস না ডাকলে কখনো আসে না। সুতরাং যারা জেনে হোক বা না জেনে হোক এ রোগ আসার পথ করে দেয় তারা নিজের সাথে সাথে পরিবারের ও জাতির ভয়াবহ অকল্যাণ ডেকে আনে। এ রোগ মহামারী আকার ধারণ করে এ কারণে যে, এ রোগ পরিবারে একবার ঢুকলে আর সহজে বের হতে চায় না। ইসলাম বহুগামিতা এবং সমকামিতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
পরিচ্ছন্ন জীবন গঠনের বিষয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমনঃ “হে রাসূল, আপনি মুসলমান পুরুষদের বলে দিন যেন তারা স্বীয় দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং নিজ নিজ যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। ” (আন-নূর : ৩০)
বিবাহ-বহির্ভূত যৌন মিলন ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে বলেছে।
আমাদের স্বপ্ন একটি সুস্থ ও নিরাপদ দেশ যেখানে এইচআইভি/এইডস-এ কেউ আক্রান্ত হবে না। আর এই দেশ গঠনে রয়েছে আমাদের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য, আমরা জানি ইসলাম মানুষকে সঠিক পথ দেখায়।
তাই আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ স্ব-স্ব অবস্থান থেকে তাদের অনুসারীদের এইচআইভি/এইডস বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে জনগণকে ইসলামের বিধিবিধান ও এইডসের কারণ ভালোভাবে তুলে ধরতে পারলেই এদেশ এইডস থেকে নিরাপদ হবে বলে আমাদের ধারণা। আল্লাহ এ কাজে আমাদের সহযোগিতা করুন। আমীন
[---সংগ্রহীত ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।