আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরানের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু



পশ্চিমা বিশ্বের তীব্র আপত্তির মুখে এবং দীর্ঘদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইরান তার প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহের কাজ শুরু করেছে। এ উপলক্ষে গতকাল দক্ষিণ ইরানের বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্রের চুল্লিতে রাশিয়ার দেয়া পারমাণবিক জ্বালানি রড সংযোজন করা হয়। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর গতকাল রাশিয়ার কারিগরি সহযোগিতায় তৈরি ইরানের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হলো। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রটি অস্ত্রবিস্তারজনিত কোনো হুমকি নয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদি নেজাদ বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে তার কঠোর জবাব দেয়া হবে।

এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন ও প্রেস টিভি ইসরাইলি বিমান হামলার হুমকি আর পশ্চিমা বিশ্বের তীব্র আপত্তির মুখে ইরান গতকাল বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ কার্যক্রম উদ্বোধন করে। ইরানের টেলিভিশনের খবরে দেখা যায়, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান আলী আকবর সালেহি এবং রাশিয়ার পরমাণু শক্তি বিভাগের প্রধান সের্গেই কিরিয়েঙ্কো বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের চুল্লিতে ফুয়েল রড সংযোজন প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শক এবং জতিসংঘের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। পারমাণবিক কেন্দ্রের চুল্লিতে জ্বালানি রড সংযোজনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে সালেহি বলেন, পশ্চিমা বিশ্বের বিরোধিতা, হুমকি-ধমকি, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আজ আমরা ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির এক বিজয় প্রত্যক্ষ করছি। সালেহি আরও জানান, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই এই পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র থেকে ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সের্গেই কিরিয়েঙ্কো বলেন, বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের কার্যক্রম উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ বাস্তবতাই প্রতিভাত হলো, কোনো দেশ যদি আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলে এবং আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা করে, তাহলে তার অধিকার রয়েছে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের। বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয় সত্তরের দশকে রেজা শাহ পাহলভির আমলে। ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর জার্মানি এই কেন্দ্র নির্মাণ থেকে বিরত থাকে। পরে ইরান নিজস্ব প্রচেষ্টায় এবং রাশিয়ার সহায়তায় পারমাণবিক জ্বালানি কর্মসূচি অব্যাহত রাখে। বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুত্ কেন্দ্রে রিঅ্যাক্টর বা পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ইরান চুক্তিবদ্ধ হয় ১৯৯৫ সালে।

কিন্তু স্বাধীন ইরানের পরমাণু শক্তি কর্মসূচির অগ্রগতিতে পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে ইসরাইল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা শুরু করে। তাদের ভয়, ইরান পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের নামে গোপনে আণবিক বোমা বানাচ্ছে। পরে মার্কিন ও ইসরাইল শিবিরে যোগ দেয় ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি প্রমুখ দেশ। তারা একযোগে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরোধিতা করতে থাকে এবং এ কর্মসূচি প্রত্যাহার না করায় জাতিসংঘের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা, চাপ ইত্যাদি উপেক্ষা করে ইরান তার কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে একপর্যায়ে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপেরও হুমকি দেয়।

সর্বশেষ গত সোমবার জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন দূত জন বোল্টন বলেন, ২১ আগস্টের মধ্যে ইসরাইল বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্র ধ্বংস করে দিতে পারে। বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের উদ্বোধনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বুশেহর কেন্দ্রটি পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তারের ক্ষেত্রে কোনো হুমকি নয়। গত মঙ্গলবার ইরান বলেছে, বুশেহর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রে কোনো হামলা হলে তা হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ। আর তার সমুচিত জবাব দেয়ার ক্ষমতা ইরানের রয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরাইল হামলা করতে পারে—এমন গুজবের জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদি নেজাদ গতকাল কাতারের আল শারক পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইল হামলার চেষ্টা করতে পারে।

তবে তাদের জানা উচিত ইরান এখন এক দুর্ভেদ্য দুর্গ যা ধ্বংস করা অসম্ভব। ইরানের পক্ষ থেকে এ ধরনের হামলার জবাব হবে অত্যন্ত কঠোর এবং বেদনাদায়ক। আমার মনে হয় না ইসরাইলের মার্কিন প্রভুরা তাদের এ রকম কোনো হামলার অনুমতি দেবে। পশ্চিমা সমালোচনা এবং হুমকির জবাবে ইরান বারবার বলে আসছে—কোনো অস্ত্র তৈরির জন্য নয়, শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তির ব্যবহারই ইরানের পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্য।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.