যান্ত্রিকতার স্বরচিত কারাগারে আমি এক অযান্ত্রিক মানুষ
১৯ নভেম্বর ২০১০ । সেদিন সকালে রোদ্দুর ছিল, কিন্তু তারো চেয়ে বেশি ছিল বুঝিবা মায়ের কাছে ফেরবার এক দুর্দমনীয় আকুতি । তাইতো কত শত ব্যস্ততার মাঝেও শত মুখ ছুটে এসেছিল তাদের শৈশবের স্মৃতি কাছে , তাদের ছেলেবেলার ইশকুলে ।
গত ১৯ নভেম্বর আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতায় অনুষ্ঠিত হল আহাম্মদ উদ্দিন শাহ শিশু নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের প্রথম পুণর্মিলনী । স্কুল প্রাঙ্গণ সেজেছিল নতুন সাজে ।
সে সাজে ছিল নতুনত্বের ছোয়া , ছিল জমকালো আড়ম্বর । আর সে সব কিছুর উর্ধ্বে ছিল প্রগাঢ় মাতৃত্ত্বের অনিঃশেষ মমতাটুকু- শব্দের কারাগারে জাকে বাধা দুষ্কর । আর এই মায়ের কাছেই তাই বহুদিন পর ফিরে আসা তার একদিনের “ছোট্ট” সন্তানেরা জীবনের কলতানে মুখর করে তুলল চারিপাশ । আর তাদের অব্যক্ত অনুভুতির অণুরণন বলে চুলল “দেখ মা, আমরা ফিরে এসেছি আবার, এই তোমার কাছেই । ”
১৯ তারিখ সকাল থেকেই স্কুল প্রাঙ্গণ ভরে উঠতে থাকে তার পুরানো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ।
গেটেই তাদের সাদর অভ্যর্থনা জানানো হয় পুণর্মিলনী’র T-shirt এবং souvenir প্রদানের মাধ্যমে । পুণর্মিলনী’র সাদা T-shirt এ পুরো প্রাঙ্গণ এ জেন আলোর মেলা বসে । নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে বাশি আর ভুভু-জেলায় প্রকম্পিত আওয়াজ তুলে শুরু হয় আমাদের র্যা লি । এত প্রাণের উচ্ছাস ! এত রঙের মেলা ! এত এত জীবনের সম্মিলন ! পুরো শহর মাতিয়ে আমরা ফিরলাম আবার অনুষ্ঠান স্থলে । এবার breakfast ।
আর এরি ফাঁকে ফাঁকে চলল কত গল্প- স্মৃতি চারণা । হবেই বা না কেন ? কতদিন পরে দেখা …। কত দিন পর ফিরে আসা সেই ফেলে যাওয়া শৈশবে । “সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা সে কী ভোলা যায় !” প্রত্যেক batch এর মদ্যে পড়ে গেল ছবি তোলার ব্যস্ততা । microphone এ প্রত্যেক batch থেকেই ২-৩ জন করে জানালো তাদের অনুভুতির কথা , তাদের সময়ের কথা আর বর্তমানের কথাও ।
এস.এস.সি ০৭ batch তাদের অনুভুতিগুলো বলবার পাশাপাশি সবাইকে মনে করিয়ে দিল আমাদের সেই সকল প্রিয় স্যারদের যাদের আমরা হারিয়েছি। তাদের অনুরোধে প্রয়াত স্যার দের স্মরণে সকলেই উঠে দাড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করল ।
দেখতে দেখতেই দুপুর হয়ে এল । নামাজের বিরতি তারপর lunch । এরপরই এল প্রাণের জোয়ার ।
stage উঠল কলাকুশলিদের গানে –নাচে আর কৌতুকাভিনয়ে । এরই মাঝে এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রার তিন প্রবাদ প্রতীম মানুষ- প্রিন্সিপাল স্যার, ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার এবং সভাপতি স্যারকে জানানো হল বিশেষ সম্মাননা । তাদের সংক্ষিপ্ত ভাষণে আরো একবার বিমুগ্ধ হলাম আমরা ।
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হল – কিন্তু প্রাণের এই মেলা ভাংবে সাধ্যি কার ! একের পর এক জমকালো আয়োজনে আর নাচে গানে দর্শকরা হারাল অন্য ভূবনে । এক ফাকে হল র্যা ফেল ড্র ।
আনন্দের মাঝে কিছুটা ছেলে মানুষি উত্তেজনা । তারপর বিজয়ীদের হৈ হুল্লোড় । তারপাও আবার গান । সেই গানের সুরেই একটা সময় যেন কোথা হতে ভেসে এল কোন করুণ বিউগলের ক্রন্দিত সুরধ্বনি । এবার যে বিদায়ের পালা ।
কিন্তু প্রাণের এ বন্ধন- সে কেমনে ছেরা যায় । অশ্রু বিয়োগের ধারায় মনে হল “পাওয়ার চেয়ে যে ভাল ছিল পথ চাওয়া । ” রাত যখন ১০.০০ টা তখন সকলেই প্রস্থানের পথ ধরল । কিন্তু সকলের চোখের অস্ফূট ভাষা বলে দিচ্ছিল – এ যাওয়া তো আবার নতুন করে আসবার জন্যই । “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি………….”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।