গণমাধ্যমকর্মী, চেয়ারম্যান - উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান, সদস্য সচিব - সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন।
চামড়ার বাজারে অচলাবস্থা
কুরবানির পশুর চামড়ার বাজারে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন এক শ্রেণীর কাঁচা চামড়া সংগ্রাহক। বেশি দামে কেনা এসব চামড়া ট্যানারি মালিকরা কিনতে রাজি না হওয়ায় গুদামে পড়ে আছে লাখ লাখ পিস চামড়া। অভিযোগ উঠেছে, বাস্তবতার সঙ্গে মিল না রেখে দাম নির্ধারণ করায় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও কর্তৃপ বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষরোপ করছেন। যে বা যাদের কারণেই হোক, বাস্তবতা হলো চামড়ার বাজারে এক অনাকাক্সিত টানাপড়েন চলছে। যদি শিগগিরই তা নিরসন করা না হয় তাহলে শুধু ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যবসায়ীরাই তিগ্রস্ত হবেন না, দেশের অন্যতম রপ্তানি খাতটিও একটি সংকটের মুখে পড়বে। কোনো কোনো সুযোগসন্ধানী অসাধু চক্র হয়তো এতে লাভবান হবে।
এ দেশে ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদে বছরের প্রায় ৪০ শতাংশ চামড়া সংগৃহীত হয়। এবার ঈদুল আজহায় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাজারে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সে জন্য সরকার কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। গরুর চামড়ার দাম রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট ৫৫-৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৪৫-৫০ টাকা। খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
তবে বেশিরভাগ ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী বেশি দামে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা যে দাম দিতে চান সে দামে তারা বিক্রি করতে পারছেন না। তারা বলছেন বাস্তবতা বর্জিতভাবে কম দাম নির্ধারণের ফলেই তাদের এ বিপাকে পড়তে হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এ অচলাবস্থার সৃষ্টি মৌসুমি ব্যবসায়ী ও একশ্রেণীর ট্যানারি মালিকের কারণে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কুরবানিদাতাদের কাছ থেকে কম মূল্যে চামড়া কিনেছেন।
এতে কুরবানিদাতারা চামড়ার মূল্য পেয়েছেন কম। আবার এরা অনেকে চামড়া স্টক করে তা ছেড়ে না দেয়ায় ব্যবসায়ীরা যতো চামড়া পেয়েছেন তা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে কিনতে বাধ্য হয়েছেন।
অর্থাৎ এখানেও সিন্ডিকেটবাজির অভিযোগ। চামড়া ব্যবসায়ে অচলাবস্থা নিয়ে এ যাবৎ যেসব অভিযোগ এসেছে এর কোনোটাই একেবারে ভিত্তিহীন বলা যাবে না। একশ্রেণীর মৌসুমি ব্যবসায়ী ধারণার ঘাটতির কারণে বা অতিলোভে বেশি দামে চামড়া কেনেন এবং প্রতি বছরই এদের একটা অংশ বিপাকে পড়েন।
এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাদের নিজেদের যেমন সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, তেমনি সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে অন্যদেরও সতর্ক হওয়া উচিত। চামড়ার বাজারে অস্থিতিশীলতা রোধই কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য। এটা সংশ্লিষ্ট সকল পরে সমঝোতায় করা হলে এ নিয়ে কারো অভিযোগ থাকার সুযোগ থাকে না। যে পরিস্থিতির কারণেই হোক, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ এবার বেশি দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন।
তারা যাতে তির শিকার না হন সেদিকটাও দেখতে হবে।
এবার কাঁচা চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের অর্থাভাব নেই। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক চামড়া কেনার জন্য পর্যাপ্ত ঋণ দিয়েছে। এবার বিশ্ববাজারে চামড়ার দামও গত বছর থেকে বেশি। কাজেই সদিচ্ছা থাকলে ট্যানারি মালিকরা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পরে কাছে সহনীয় যৌক্তিক একটা দামে চামড়া কিনতে পারেন এবং এ সমঝোতা শিগরিই হওয়া উচিত।
গত অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি করে ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। এবার আমাদের টার্গেট নিশ্চয় গত বছরের অর্জনকে ছাড়িয়ে যাওয়া। কোনো অনাকাক্সিত জটিলতা যেন একে বাধাগ্রস্ত না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে সরকার ও এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের। এ জন্য জরুরি হলো চামড়া বাজারে উদ্ভূত অচলাবস্থা নিরসন এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের টানাপড়েন তৈরি না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।