এবার থেকে আমার লেখা আমার কথা বলার চেষ্টা করবে।
বাবা হয়তো একদিন জোড়া ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন, মা তা দেখে উজ্জ্বল হাসিমুখে বললেন - আজ আর রাঁধার দরকার নেই, এখন কেটে-ধুয়ে নুন হলুদ দিয়ে রেখে দিই, কাল বাসি করে খাবো। বাসি ইলিশের স্বাদ নাকি অমৃতের খুব কাছাকাছি। মা এমন পাঁড় ইলিশখোর ছিলেন যে মাছ কাটার পর ধুতেন না পর্যন্ত, ধোয়াধুয়ি যা হতো আঁশ ছাড়ানোর পর, মাছ কাটার আগে। তখনকার দিনে বাড়িতে গোটা মাছ নিয়ে আসারই চল ছিলো, তারপর বাড়ির মেয়ে-বৌরা বঁটিতে নিজেদের মতো কেটেকুটে নিতেন।
আর কী যে স্বাদ ছিলো সে ইলিশের! মা রাঁধতেন চিড়ল চিড়ল বেগুনের সাথে কালোজিরে-কাঁচালংকা দিয়ে ইলিশের ট্যালটেলে ঝোল। তা দিয়ে আমরা ভাইবোনেরা দু-তিন থালা ভাত উড়িয়ে দিতাম। প্রথমে ইলিশের তেল, ডিম আর লুকা দিয়ে খানিক ভাত, আলুসেদ্ধ দিয়ে মেখে, শেষ পাতে কাঁচালংকা চটকে নিয়ে ইলিশের ঝোল আর ভাত। আঃ জীবনের মানে পাল্টে দিতো সেসব স্বাদ!
মনে পড়ছে ছেলেবেলায় দেখা একটা ঘটনার কথা। পাড়ার এক বন্ধুর বাড়ি দেখেছিলাম এক অদ্ভুত প্রথা।
আষাঢ় মাসে প্রথম যেদিন তাদের বাড়ি ইলিশ মাছ আসতো, তার ঠাকুমা, তখনি তাঁর বয়েস সত্তর পেরিয়েছে, শিলনোড়ার সাথে ইলিশের বিয়ে দিয়ে তবে তাকে ঘরে তুলতেন। পরে মনে হয়েছিলো নোড়া নয় আকারের দিক দিয়ে পুরুষ হলো, ইলিশের পেটি তবে কি স্ত্রী? আর তরিজুত করে ইলিশ রেঁধে খাওয়ার মতো আমাদের সংসারে প্রতিদিন মেয়েদের কেটে খেয়ে ফেলা হয়? আরো পরে আরো বড়ো হলে আমি খাবারের স্বাদের সঙ্গে নারীবাদী দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে গুলিয়ে ফেলার ভ্রান্তি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হই।
(ক্রমশ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।