গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ‘হারা দিন ঘাটে বইয়্যা কাটাই, বাড়ি যাই না। যামু ক্যামনে? বাড়ি গ্যালে বউ-পোলাপানের লইগ্যা চাউল-ডাইল নেওয়া লাগবে। মহাজনের কাছ দিয়া বহু টাকা দাদন আইন্যা সাগরে গেছিলাম। কিন্তু যে মাছ পাইছি তা দিয়া ত্যাল আর খাওন খরচাও ওঠে নাই। বউ-বাচ্চারা চাইয়্যা রইছে, কী যে করমু, কইতে পারি না!’ এমন করেই নিজের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলছিলেন চরমোন্তাজের জেলে আবদুর রশিদ।
গলাচিপার চরমোন্তাজের জেলে পল্লী এলাকায় অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার ঘাটে বেঁধে অলস সময় কাটাচ্ছেন অনেক জেলে। বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু সাগরে ও নদ-নদীতে ইলিশ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দক্ষিণ উপকূলের প্রায় দেড় লাখ জেলে। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩০ বছরে সাগরে মাছের এমন আকাল তারা দেখেননি। বৈশাখের শুরুতে মহাজনের কাছ থেকে দাদন ও ধার-দেনা করে জাল-নৌকা ঠিকঠাক করে সাগরে গেছেন বেশ কয়েকবার।
কিন্তু আশানুরূপ ইলিশ পাননি। তার ওপর জলদস্যুদের হামলা, চাঁদাবাজি ও অপহরণ তো আছেই। সাগরে ৩৫ বছর ধরে ইলিশ ধরার কাজ করছেন মৌডুবী এলাকার জেলে আনোয়ার হোসেন (৫৫)। তিনি বলেন, ‘বৈশাখ মাস শুরু অইলে এত্তো মাছ জালে ধরা পড়ত যে মোরা জাল জাগাইয়্যা ওপরে উঠাইতে পারতাম না। প্রায়ই জাল কাইট্টা সাগরে ভাসাইয়্যা দেতাম।
কিন্তু এহন হেই সব কথা গপ্পের মতো হুনায়। ৩৫ বছরে ইলিশের এমন আকাল আর দেহি নায়। ’ চরমোন্তাজের মৎস্য আড়তদার কবির হোসেন বলেন, ‘মওসুমের শুরুতে ইলিশ ধরা না পড়ায় আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। ’ তিনি বলেন, ইলিশ মওসুমকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা এ খাতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। এখন তারাও দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।
ভরা মওসুমে সাগরে ইলিশ না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের কোর্স সমন্বয়কারী সুলতান মাহমুদ বলেন, নদীর নাব্যতা হ্রাস, নির্বিচারে জাটকা নিধন, পানিদূষণসহ নানা কারণে এটা হতে পারে। পানপটি ঘাটের ইলিশ বিক্রেতা সফিক মৃধা বলেন, ‘সাগরে ইলিশ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে আসছে জেলেরা। যেসব জেলে মহাজনের কাছ থেকে দাদন নিয়েছেন, তারা এখন বিপদে পড়েছেন। ’ কোড়ালিয়া বাজারের ইলিশের আড়তদার মিন্টু মিয়া বলেন, ‘গত পৌষ-মাঘ মাসেও প্রতিদিন প্রায় ১০০ মণ ইলিশ বিক্রি হতো। কিন্তু বৈশাখ থেকে শুরু করে বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুমেও এক মণ মাছ বিক্রি হচ্ছে না।
’ তিনি জানান, বিক্রেতারা ইলিশ না পেয়ে পাঙ্গাশ মাছ বিক্রি করছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার অধিকাংশ জেলেরা নদীতে মাছ না পেয়ে বেকার বসে আছেন। সাগরে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ দেখা দেয়। এসব ইলিশ সাগর থেকে আসে আবার সাগরেই ফিরে যায়। যাওয়া-আসার সময় জেলেদের জালে ধরা পড়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।