আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্লান্ত সকালের আর্দ্রতা ও রোদেলা বিকালের হিমেল হাওয়া



ইদানিং অভ্যাসেই হোক আর বদাভ্যাসের কারনেই হোক রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। সেল ফোনটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকি সময়ের দিকে । কখনো mig33 তে ঢুকে বসে থাকি। অযথাই ঘুম নষ্টকরে বসে থাকি । গানের পাখি সুর হারিয়ে ফেললে নাকি আর বাঁচে না।

আমি কি হারালাম , কি পাইলাম এই সমীকরণ যখন মিলানোর প্রান্তে এসে পরি তখনি মুয়াজ্জিনের দেয়া আজান কানে এসে পৌছায় । সমীকরণকে বীজগনিত থেকে পাটিগনিতে নিয়ে গিয়ে , পাটির মত রোল করে ভাজ করে তুলে রাখি , ভাবি আগামীকাল আবার শুরু করব। পরের দিনের সারাদিনের কার্জক্রমের মধ্য দিয়ে আমার বয়স একদিন বেড়ে যায়, আমি হয়ে যাই গতকালের চেয়ে একদিনের বেশি প্রবীণ ও অভিঞ্জ। তাই পরের রাতেও নতুন করে ভাবতে বসি যখন ভেঙ্গে যায় ঘুম, পৃথিবীর বুকে শুনশান নীরবতা, চলে আমার পাওয়া না পাওয়ার হিসাবের দরকষাকষি। এর মাঝেই মুয়াজ্জিনের ধ্বনি কানে আসে।

আমি নামাজের জন্য অজু করতে যাই। আমি অজু করে যখন নামাজ পরতে দাড়াই তখন কেন জানি ঘুম আমাকে গ্রাস করতে চায়। আমি পরাজিত হতে চাই না। ঢাকা শহরের এত মসজিদ যে আজান একটার পর একটা শুনা যেতেই থাকে। আমার মাথা বাম দিকে ঘুরে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলে নামাজ শেষ করলেও আজান মাঝে মাঝে দেখি হতেই থাকে।

এক মসজিদের আজান শেষ হলে আরেক মুয়াজ্জিন শুরু করে, না হলে যে তার কোকিল কন্ঠ শোনাই যাবে না। মনের কষ্টই নাকি দেহের কষ্টের সৃষ্টি করে। আমার ঘুমাভাঙ্গা ক্লান্ত চোখে নতুন দিনের প্রভাতকে করে তুলে ক্লান্ত । এক পরীকে আমি মাঝে মঝে দেখি রাতে। অবশ্যিই হ্যালুসিলেশন না।

স্বপ্নের তার সাথে হয় দেখা। হয়তো ঘুম থেকে জেগেও বসে বসে ভাবি তার কথা। এর মাঝেই হাটতে বের হই। বের হয়ার সময় সেই পরীকে মনে পরে । মনেহয় তাকে একা রেখে আমি কোথায় যেনো চলে যাচ্ছি ।

কলিকাতার টালিউডের "অটোগ্রাফ" চলচিত্রের একটা গানের লাইন গুন গুনিয়ে গেয়ে উঠি কখন আকাশ যদি থাকে চুপ করে যদি নেমে আসে ভালোবাসা খুব করে চোখ ভাঙ্গা ঘুমে তুমি খুঁজোনা আমায় আশে পাশে আমি আর নেই - অগ্রহায়ন মাস শুরু হয়েছে । সকালে যারা উঠে তারা দেখতে পায় এখন ভালই কুয়াশা পরে। হাটার সময় বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে ছাড়ার সময় ধুয়ার কুন্ডলী বের হয়ে আসে। মজা লাগে করতে তাই নিয়মিতই করি। গাছের পাতা থেকে টুপটাপ এক ফোঁটা করে মাঝে মাঝে কুয়াশা পানি হয়ে এসে পরে ভিজিয়ে দেয় ।

আমি মাঝে মাঝে ভাবি এক দুই ফোটা জল যদি হাসিনা-খালেদা অন্তরে ঢাললে যদি তাদের মন একটুও নরম হত তাইলেই শান্তি, তাহলে আর মানুষকে ঈদের আগে হরতালের ভেজাল সহ্য করতেও হত না, কিংবা ডিজিটাল বাংলাদেশ নামক কল্পকাহিনীও শুনতে হত না। আর কয়েক গ্যালন রহমতের জমজমের পানি আনতে বলছি সম্মানিত হাজি সাহেবদের। যদি সম্ভব হয় আমি সেই পানি ঢালায় চেষ্টা করবো হাউজিং কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের হৃদয়ে। ভাই একটু সদয় হোন। মানুষের টাকা মেরে বড়লোক হচ্ছেন হোন , কিন্তু ভাই ৭৫ ফিট পাইলিং এর জায়গায় ২৫-৩০ ফিট পাইলিং করে মানুষকে জ্যান্ত কবর দিয়েন না।

এটা এক্সিডেন্ট না এটা পরিকল্পিত হত্যা। আমি বেশির ভাগ সময়ই গুলশান লেকের বা পার্ক রোড দিয়ে হাটি। গুলশান লেকের পাশ দিয়ে হাটার কারন নিরাপত্তা। বাড্ডার গলি দিয়ে ভোরবেলায় হাটা মোটেও নিরাপদ না। আমি খুবই সাধারন মানুষ, আমার নিরাপত্তার কি দরকার ! যেখানে উন্নত দেশগুলায় গৃহপালিত পশুপাখির নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে যেখানে আমাদের এখানে আমি নিজের জন্য একটু কষ্ট হলেও গুলশানে গিয়ে হাটতে পারি ।

আরেকটা ব্যাপার হল এলাকায় এলাকায় যে হারে বখাটের সংখ্যা বাড়ছে , সেই হারে কিন্তু পুলিশ বড়লোক হচ্ছে বখাটেদের কাছ থেকে চাদা আদায় করে । বৃথা প্রাণ দিয়ে লাভ কি ! পুরান বাসাবো এলাকা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মাহফুজুল হক খান বখাটের হাতে নিহত হলেন শুধু বাসার সামনে থেকে চলে যেতে বলায় । বাড্ডা এলাকার রাস্তাঘাট খুবই খারাপ। রিক্সাতে পারতো পক্ষে কেউ উঠে নিজের কোমরের হাড়ের ১২টা বাজাতে চায়না। অনেকটা হকারদের মত বলতে হবে তবে অবশ্যই আমার প্রিয় ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফাতের মত- একগালে খাইলে ভাই , দুই গালে মজা একদিন রিক্সায় গেলে, দুই দিন পস্তাবা গুলশান এলাকা দিয়ে হাটার আরো কিছু গুরুত্বপুর্ন কারন রয়েছে।

এই এলাকার পার্কে সকাল বেলা সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি , সেনা কর্মকর্তা হাটতে আসেন। কেউবা আসেন ডায়বেটিক এর ঠেলায় পরে , কেউ আসে চিন্তায় , কেউ আসে সকালে হাটার মাঝে ব্যবসার কথা গুলো সারিয়ে ফেলতে। গুলশান পার্ক রোড সংলগ্ন লেন দিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হেটে যান । আমি এরশাদ চাচা, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রহমান বিশ্বাস কে দেখি তারা ওই পার্কে হাটেন। পার্ক রোড আপনাদের চিনার কথা ।

২০০৫-০৬ এ এই পার্ক রোডের ৩নং বাসা থেকে লাফ দিতে চেয়েছিলো বিদিশা আপু তার দশা ফিরিয়ে আনতে নাকি বেদশা তৈরী করতে উনি জানেন। বারিধারা ৮নং রাস্তার ভিতরের পার্কটায় আসেন ব্যবসায়ীরাই বেশি। গুলশানে হাটার মজা দুইটা - * বাংলাদেশ কে গরীব দেশ বলে মনেই হয় না। এখানের লোকদের মুখে কোটি ছাড়া আর কোন শব্দ নেই । এদের কথা শুনে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় একক , দশক , শতক এগুলা হুদাই শিখছি ।

খালি কোটি শিখলেই হত। * সকালের আর্দ্রতা পালায় এদের টাকার গরম গরম খবর শুনে। যাক এরা আমাকে টাকা দিবেনা , আমি চাইও না, কিন্তু হাল্কা শীতে যে দূর করে দিল তাতেই জানাই ধন্যবাদ। অনেক মহিলা এখানে আসেন সকাল বেলা। সাথে করে নিয়ে আসেন শীর্ন দেহের কোন এক কাজের মেয়েকে।

ভদ্রমহিলা পুরো শীতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই বের হন, কাজের মেয়ে এই সকালেই কাপতে থাকে। তার হাতে থাকে তোয়ালে, ফ্লাক্স ভর্তি চা। একদিন এক মহিলা অন্য মহিলাকে বলতেছেন - ভাবি , আমি তো রান্নাতেও এখন অলিভ অয়েল ছাড়া কিছু খাই না। - হা ভাবি , সয়াবিন খাওয়ার কোন মানে আছে নাকি - আমি তো গত মাসের অয়েল নিয়ে এসেছি ইতালী থেকে - কি বলেন ভাবি। ইতালীরটা আর ব্যবহার করেবেন না।

আমি জার্মানি থেকে কার্টন আনাই । আপনাকে এনে দিব - আমার শেফ তো ইতালীর অয়েলটাকে ভালোই বলল - শেফ্ গুলো কিছু বুঝে নাকি। স্বাস্থের ব্যাপার আমাদেরী খেয়াল রাখতে হবে হায় রে মোর খোদা। মুই কোনে যাই ! মোর মা যেই তেল কমে পায় হেইডাই ডালে পাতিলে। মোগো কোনো বাছবিছার করলে চলে মনু কউ দেহি ।

এই হল অবস্থা । এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার রুপচর্চা নিয়ে কথা বলে , কেউ সন্তানের স্কুল নিয়ে কথা। কেউ পরাতে চায় American International , British Columbia তে , আবার কেউ চায় Turkish hope বা Delhi national boarding এ। এই সব স্কুলের বেতন শিশু শ্রেনীতেই ১৫-২০ হাজার টাকা। কি যে পড়ায় আল্লাহ জানে।

আমি বনানী স্কুলে বছরে বেতন দিতাম ১২৫ টাকা করে মাসে। এখন আমার স্কুলের বেতন ৩০০ টাকা মাসে। কিন্তু ১৫-২০ হাজার টাকায় মাসে কি পড়ায় আমার দেখতে খুব ইচ্ছা করে। এরা মনে হয় বড় হয়ে সবাই নিউটন হবে। হলেই ভাল।

আমাদেরই লাভ। মাঝে মাঝে কাউকে দেখি ইসলাম নিয়ে চিল্লাফাল্লা করতে। ইনারা প্রতি বছর হজ্বে যান। হজ্ব থেকে ফিরে এসে আবার ২নং ব্যবসা করেন এবং তার পরের বছর আবার যান। মাঝদিয়ে তাদের নামে যোগ করে নেন বড় বড় করে আলহাজ্ব পদবি।

মানুষও খুশি , আররে হাজি মানুষ কি আর খারাপ কাজ করতে পারে ? পুলিশের ব্যাটা যেমন বেশির ভাগ সময় মানুষ হয় না, এই টাইপ হাজ্বিদের পোলারা পাজি হয়ে থাকে। হাটা হাটি করে যখন বাসায় ফিরি, ফিরার পথে আমি এত মানুষ দেখে বচলিত হয়ে যাই । আরে এদিকে আজ কার মিটিং , পরে মনে পরে যায় এরা সবাই পোষাকশিল্পের কর্মী। কাজে যায় এরা হেটে হেটে। টাকা কামিয়ে দেয় মালিকের ।

সেই মালিক হাকায় BMW.। বাসায় এসে পেপার নিয়ে বসে পড়ি ,সাথে থাকে আমার প্রিয় coffee. পেপার গুলাতে আজেবাজে খবরই বেশি থাকে। প্রথম আলো পড়া আর daily Star পড়ার মধ্যে কোন পার্থকয নাই । একি খবরের ইংলিশ ও বাংলা ভার্ষন। যারা ইংরেজি শিখতে চান, তারা এই দুইটা পেপার একসাথে পড়ে শিখতে পারেন।

নাস্তা করে কাজ থাকলে করি না হলে internet এ বসে বসে সময় কাটাই। কখনো সিনেমা দেখে । আমি মাঝে মাঝে রান্নাও করি । আমি রান্নায় কেমন তা আমার IUT এর বন্ধুগন জানে। আত্মীয় স্বজনও জানে।

আসলে রান্নার প্রতি আমার কেন জানি টান আছে , গভীর টান। সারাজীবন যে অভ্যাস ছিলোনা এখন কই থেকে তা যেনো হচ্ছে। দুপুরে দেই ঘুম। বিকালে উঠে খাই দাই ঘুরি ফিরি । কি মজার জীবন।

বিকেলে এখন প্রায়ই ছাদে যাওয়া হয় , পাশের কনো বাড়ির ছাদে কিন্তু কোনো মেয়ে উঠে না আগেই বলে রাখলাম । ২য়ে ২য়ে ৫ না মিলানোই ভাল। বিকেলটা অনেক রোদেলা। ঠিক যেন আদুরী আদুরী চেহারার কোনো বেনী দুলিয়ে হাটা মেয়ের মতন। সন্ধার বাতাস কিছুটা ভারী হয়ে আসে, ঠান্ডা লাগে অল্প অল্প।

মজার অনুভুতি। দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে যখন হিমেল হাওয়াকে আলিঙ্গন করি , কোথা থেকে রাতের পরী এসে ভর করে কল্পনার রাজ্যে আমায় করে বিলিন। আমি হয়ে যাই jack , পরী তাকে করে নেয় Rose. এযেন মাতাল মাদলোতা। তাকে খুজি ফিরি বারবার বারবার। সে হয়তো করেছে অভিমান , নাকি আমায় কখনো বুঝতেই পারেনি ।

আমি সেই বন্ধচোখে যখন তাকে নিয়ে বিরহের সুর বাজাই তখন আকাশে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা বলে বেরায় নাবিকদের গতিপথ। অথচ আমার আমার উপরে থেকেও সে আমাকেই পথ দেখায় না। আমি তাকে প্রতি সন্ধাতে দেখও রাতে হিসেবে করি ভুল। কবে শুধ্রাবে আমার এই ভুল। নাকি সেই পরী সত্য হয়ে এসে আমার সমীকরন মিলিয়ে দিবে লাভ ক্ষতিকে ভুলিয়ে দিয়ে।

সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম। সেই পরীর অপেক্ষায় রইলাম। হয়তো সত্যি একদিন সে দেখা দিবে , ফিরে আসবে আমার বাহুর বন্ধনে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।