আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইডিয়াল স্কুল নিয়ে তালাশের তল্লাশির প্রতিক্রিয়া

www.facebook.com/hamzathefighter

স্কুল শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নিয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে দুই মাস আগে প্রচারিত ‘তালাশ’ নিয়ে নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরতে এই লেখার অবতারণা। বিশেষ করে, আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে যেভাবে তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে, সেটা নিয়ে দু’টি কথা না বললেই নয়। অন্তত আইডিয়াল স্কুলের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে এটা আমার নৈতিক কর্তব্য জ্ঞান করি। আমি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের মতিঝিল শাখা থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি (ব্যবসায় শিক্ষা) পাশ করি। আইডিয়াল স্কুলে দীর্ঘ আট বছরের (তৃতীয় শ্রেণী থেকে এসএসসি) অভিজ্ঞতায় কখনোই শিক্ষকদের কাছে কোচিং করার ব্যাপারে কোন প্রকার চাপ অনুভব করিনি।

স্কুলের টিচারদের কাছে আমার প্রথম প্রাইভেট পড়ি ক্লাস এইটে। ঝযধৎরভ ঝধসংুুঁড়যধ (চবহঁ); তালাশে দেখানো নেমপ্লেটে উল্লিখিত এই শিক্ষকের কাছে আমার প্রথম প্রাইভেট পড়া (স্কুলের টিচারদের মধ্যে)। তিনি তখন ছিলেন আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী শাখার শিক্ষক। কাজেই নাম্বার বেশি দেয়া বা কোন প্রকার চাপ থেকে তার সরণাপন্ন হইনি। তাঁর খোঁজ পাই বনশ্রী শাখায় অধ্যয়নরত আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে।

সে আমাকে জানায় তিনি ভালো পড়ান। কিন্তু কিছুদিন তাঁর কাছে পড়ে আমার ভালো লাগেনি। দুই মাসের মত স্যারের কাছে পড়ি। তখন তাঁর এত রমরমা ব্যবসা ছিল না। সুভাষ পোদ্দার (পুরো নাম: সুভাষচন্দ্র পোদ্দার); ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্স পর্যন্ত টানা দু’বছর স্যারকে পেয়েছিলাম শ্রেণী শিক্ষক হিসেবে।

স্যার আমাদের গণিত পড়াতেন। ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্রই তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়ত। আমি কখনোই যাইনি। এ নিয়ে স্যার কখনোই আমার সাথে খারাপ আচরণ বা কোন প্রকার চাপ দেননি। তিনি ক্লাসে যথেষ্ট ভালো পড়াতেন এবং আমাকে অনেক স্নেহ করতেন।

সোহেল আহমেদ; ক্লাস এইটে স্যারের কাছে প্রাইভেটে বাংলা পড়ি। স্কুলে তাঁর ক্লাস আমি কখনো পাইনি। আলোচনার এ জায়গায় এসে নিজের যৎসামান্য গুণকীর্তন করতে হয়। ঢাবি’র ঘ-ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় কোনরূপ পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই অংশগ্রহণ করি এবং ৯২তম (ব্যবসায় শিক্ষা) স্থান লাভ করি। আমার মত আকাঠের জন্য অপ্রত্যাশিত এই ফলাফলের পেছনে মূল কারণ ছিল বাংলায় বেশি নম্বরপ্রাপ্তি।

ভর্তি পরীক্ষায় বাংলায় আমি পাই ৩০ এ ২১.৫। এই বিষয়টিতে, বিশেষ করে ব্যাকরণে হয়তো আমার বেসিক কিছুটা ভালো ছিল বিধায় এই রেজাল্ট। বাংলা ব্যাকরণে আমার ভিত্তি গড়ার পেছনে দু’জন মানুষের অবদান অনস্বীকার্য। একজন আইডিয়াল স্কুলেরই প্রাক্তন শিক্ষক মোস্তফা কামাল স্যার, অন্যজন উপরোল্লিখিত ও তালাশে উল্লিখিত সোহেল আহমেদ স্যার। বাংলা বিষয়টিতে আমি যদি কিছু শিখে থাকি, তা এই দু’জন মানুষের অবদান।

প্যাকেজের একটি অংশে শিক্ষকের কাছে কোচিং করে এমন একজনের বক্তব্য থেকে জানা যায়, প্রাইভেটে যে সাজেশন দেয়া হয় সেখান থেকে কমন পড়ে এবং সেই শিক্ষকই প্রশ্ন করে। এখানে আমি দু’টি কথা যোগ করতে চাই, প্রথমত: আইডিয়াল স্কুলের পরীক্ষায় কমন ফেলানো এমন কঠিন কাজ নয়। বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন ঘাটলেই কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মোটামুটি একটা ধারণা চলে আসে। দ্বিতীয়ত: নির্দিষ্ট বিষয়ের সব শিক্ষক প্রশ্নœ করেন এবং জমা দেন। সেখান থেকে যে কোন একটি বা কয়েকটি মিলিয়ে চূড়ান্ত প্রশ্ন করা হয়।

পরীক্ষার হলে প্রশ্ন না আসা পর্যন্ত এবং তা না দেখে কোন শিক্ষকই জানেন না কোন প্রশ্নে পরীক্ষা হচ্ছে। তালাশের এই প্যাকেজটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় অধিকর্তা নাহিদ সাহেবের কাছে একটিবারের জন্য প্রশ্ন করা হয়নি, স্কুল থেকে শিক্ষকদের পকেটে যে বেতন যায় তা মোটেও পর্যাপ্ত কিনা। উন্নত বিশ্বে যেখানে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা ডাক্তারী আর শিক্ষকতা, সেখানে আমাদের দেশে বেতনের দিক থেকে এই দুই পেশাজীবী শ্রেণীর নিয়তি সবচেয়ে করুণ। শিক্ষাকে যদি বলি জাতির মেরুদণ্ড, তবে সেই মেরুদণ্ডের কারিগর শিক্ষক সমাজ। এই কারিগরের পকেটকে গড়ের মাঠ বানিয়ে তাদের মেরুদণ্ডহীন রাখার সুবন্দোবস্ত করে যদি ভাবেন, বুক দিয়ে হেঁটে তারা আমাদের শিক্ষাকে স্বর্গে তুলবে, তবে মনে রাখবেন বোকার স্বর্গরাজ্যে যে আপনার বাস, সেটাই আপনার মনে নেই।

‘শেকড় কেটে শিখরে পানি দেয়া’ আর কাউকে উপযুক্ত সম্মান ও সম্মানী না দিয়ে স্বর্ণডিম্ব আশা করা, এক কথা। আইডিয়াল স্কুলের জন্য কোচিং বাণিজ্য যতখানি ক্ষতিকর, তার চেয়ে বেশি বিষধর ভর্তি বাণিজ্য। কিন্তু সেদিকে তালাশের তল্লাশি নেই। কারণ সেই অবৈধ ভর্তি বাণিজ্যের কাণ্ডারীরাই এই ইন্ডিপেন্ডেন্টদের দেবতাপক্ষ তথা ভাগ্যনিয়ন্তা। নেই শেয়ার বাজারের কাহিনী কিচ্ছা, আছে সরকারি দলের বেয়াঁড়া বালক রনি নিধনযজ্ঞ।

মোদ্দাকথায় বলতে বাঞ্ছা হয়, সরকারি দলের বেসরকারি প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে দরবেশ বাবার এই ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির পরিচয় পরিষ্কার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.