বারবার শুধু ছিটকে পড়ি অশ্লীল কারাগারে
রিফাত মামা মহসীন হলের গেস্টরুমে বসিয়ে ৫ মিনিটের জন্য উপরে চলে গেলেও সেখানে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারিনি। সেখানে আরো যারা বসেছিল তাদেরকে ঠিক ছাত্র মনে হচ্ছিলনা। সিনেমায় ভিলেনদের সাথে হুদাই মার খাওয়া সহযোগীদের মতো ছিল দেখতে একেকটা। গেস্টরুম থেকে বের হয়ে সামনের বাগানের দেয়াল ঘেষে দাড়ালাম। কিছুক্ষণ ফুল ফলের সৌরভ দেখা শেষ হলে উল্টো ঘুরে দেখলাম দেয়ালের একটা অংশে অনেকগুলো লোক জড়ো হয়ে আছে।
তেমন উৎসাহজনক কিছু নয়। কিচুক্ষণ পর আবার ঘুরে দেখলাম দেখলাম লোকগুলো এখনও আছে, তবে ভীড় আরো বেড়েছে। এবার মনযোগী হলাম, কিন্তু বিশেষ কিছু দেখতে পেলামনা। একজনকে দেখলাম ভীড় থেকে বের হয়ে আসতেই আরেকজন তার কাছ থেকে কিছু খুচরো পয়সা চেয়ে নিল। সেই লোকটির হাতেও খুচরো পয়সা।
শুধু সে নয়, সবার হাতেই খুচরো পয়সা ঝুন ঝুন করে বাজাচ্ছে। কাছে যেতে সাহস হলনা। আর তখন উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও উচ্চতা খুব একটা আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় ঠিক দেখতে পাচ্ছিলামনা কি হচ্ছে। সিনেমায় দেখেছি ক্যাসিনোতে একটা যন্ত্রে এভাবে কয়েন ঢুকিয়ে চাবি ঘুরালে আরো পয়সা বের হয়। তাহলে মুহসীন হলে কি ক্যাসিনো আছে? যে কুখ্যাতি এই হলের তাতে ক্যাসিনো থাকলেও থাকতে পারে! ভীড়টা পাতলা হতেই আমার বেকুব হবার পালা।
একটা কয়েন টেলিফোন বক্সকে কেন্দ্র করে এই ভীড়।
এই কয়েন টেলিফোন বক্স একসময় ঢাবির হলের একমাত্র আউটগোয়িং যোগাযোগের ক্ষেত্র ছিল। পচিশ পয়সার চারটি, অথবা পঞ্চাশ পয়সার দুটি কয়েন প্রয়োজন। মাসে একবার টিএন্ডটির স্টাফ এসে কয়েন সংগ্রহ করেন বটে তবে হলের গেট পর্যন্ত নেয়ার সুযোগ হতোনা। খুলিবা মাত্র গ্রাহকরা খুচরা পয়সা কিনিয়া নিতেন।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই কয়েন বক্স মাসের অর্ধেকদিনই খারাপ থাকতো। পুলাপানের রাগ যখন চরমে উঠত তখন হলের মামা টিএন্ডটি স্টাফদের খবর দিয়ে আনতেন। এই কয়েন বক্স দিয়ে ফোন সেক্সও কম চলতনা। আজকালকার যুগে যারা মোবাইল কোম্পানিগুলোকে সারারাত ডিজুস তরুনদের ফোনে কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য গালাগালি করেন, তারাই হুদাই চিল্লান। সেই যুগেও হলে কিছু পুলাপান ছিল যারা ৫০/১০০ টাকার কয়েন নিয়া মধ্যরাতে কয়েন টেলিফোনে রসালাপে ব্যস্ত থাকতো।
এবার একটু কয়েন টেলিফোনটা পরখ করতেই হয়। সবে মাত্র ভর্তি হয়েছে। সকাল ৭টার বাস ধরে ক্যাম্পাস যাই। সন্ধ্যার পরে অনিচ্ছা সত্বেও পাব্লিক বাস ধরে বাসায় ফিরি। একদিন টিএসসি থেকে পদব্রজে নীলক্ষেতের দিকে যেতে মুহসীন হল চোখে পড়তেই সেই কয়েন বক্স এর ভুত চাপল।
হলে ঢুকে দেখলাম ফোনটা ফাকাই পড়ে আছে। তবে ঐ প্রান্তে যিনি ফোন ধরলেন তা মোটেও কাম্য ছিলনা।
’তুই কোথা থেকে ফোন করছস, বিষয় কি?’
’আব্বা আমি হল থেকে ফোন করসি’
’হল থেকে ফোন করছস মানে, তুমি হলের ক্যাডার হইছ, টেলিফোনও বরাদ্দ পাইছ, হারামজাদা...............’- কর্ণকুহর হইতে রিসিভারের ব্যবধান বৃদ্ধি করিতে করিতে ঠাস করিয়া ক্রাডলে রাখিয়া বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করিলাম। তাহার আর দোষ কি? সে যুগে বাপগণ বাপগিরি ফলানোর সামান্য সুযোগও হেলায় হারাতেন্না
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।