আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুজুগ থেকে সুযোগ পেলেই একটু বাইরে উকি মারুন

নিজেকে হয় নাই চেনা

মনে করুন আপনি একটা গল্প শুনলেন যার সার কথা আপনার মনপুত হয়েছে। এতে আপনি শুধু গল্প কথক বা লেখক কে বাহবাই দিলেন না বরং তাকে মাথায় তুলে রাখলেন। শুধু তাই নয় আপনি ঐ গল্পটা এরপর থেকে যে কোন স্থানে সুযোগ পেলেই বলে থাকেন। এর একমাত্র কারন এই গল্পটা আপনার মনে ধরেছে। গল্পটা যদি আপনার মনের সাথে নাও মিলে তাহলেও তেমন সমস্যা হয় না বরং ভালই লাগে আপনার কাছে।

কিন্তু যদি গল্পটা সত্য কিন্তু আপনার নিজের চাহিদার বিপরীত হয় অথবা গল্পটা যুক্তিপুর্ন হলেও আপনার বহুকালের পোষা বিশ্বাসে বিপরিত হয়, তাহলে কি আপনি একই কাজ করেন? হয়তো কেউ কেউ করে থাকেন, আর তাদের কারনেই এই পৃথিবীটা এখনও টিকে আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই একই রকম কাজ করেন না। তারা তাদের বহুকাল থেকে গড়ে ওঠা বিশ্বাস ও মন মানষিকতা বিপরীতের কোন কিছুকেই গ্রহন করতে প্রস্তুত থাকেন না, আর এদের কারনেই আমাদের সমাজপতিরা বা তথাকথিত সুশীল সমাজের হর্তা কর্তারা আমাদের গোটা মানব সমাজের শিক্ষিত অশিক্ষিত জনমানুষ গুলুকে দিয়ে তুচ্ছ খেলায় মেতে উঠেন। পরিশেষে তারা জয়ী হন, তাদের অন্তরনীহিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পুর্ন হয় এবং তারা পরিত্রিপ্ত হন। আর আমাদের মত অন্ধ অনুসারীরা সেই বঞ্চনা ও ধোকার অতল গহবরেই পড়ে থাকি।

সেদিন কেন যেন হঠাৎ করেই আমার মাথায় এমন একটি চিন্তা খেলে গেল। কেন যেন মনে একটা প্রশ্ন হঠাৎ উঁকি দিল যে আমরা প্রতিনিয়ত কোন দিকে যাচ্ছি? কিসে আমরা গর্ববোধ করছি বা কিসে আমরা পুষ্পমাল্যের বন্যা বহাচ্ছি। এবং তাতে দেশ ও জাতির কতটুকু উপকার হচ্ছে? জানিনা আমার চিন্তাগুলো আপনারা কিভাবে নেবেন, তার পরও শেয়ার করে যাই দেখি আমি কি আসলেই সঠিক ভাবে ভাবছি কিনা। তাহলে শুরুকরা যাক, যেহেতু আমাদের চোখ গুলোতে সর্বদা পর্বতসম সাফল্যের আশা জ্বল জ্বল করে সেহেতু আসুন এভারেষ্টের চুড়া থেকেই শুরু করি, বেশ কিছুদিন আগে আমার দেশের কেউ একজন এই এভারেষ্টের চুড়া জয় করেছেন বলে পত্রিকা আর ব্লগ মারফত জেনেছি। জেনে আমার বুক খানাও গর্বে আধহাত ফুলে উঠেছিল।

পরে দিন যত গেল ততই দেখলাম বিতর্ক শুরু হতে লাগলো। কেউ কেউ দাবী করলেন ঐ এভারেষ্ট জয় নাকি ডাহা মিথ্যা। আমি বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল দূর থেকে কোনটা সত্যি তা জানার সুযোগ পাই কথায়। তাই চুপ মেরে খালি নিরব দর্শকের ভুমিকায় ছিলাম। কিন্তু সেদিনের চিন্তাগুলো আমাকে নতুনকরে ভাবতে বাধ্য করলো।

যখন এভারেষ্ট জয়ের খবরটা চাউর হল তখন দেশজুড়ে মাতামাতি পড়ে গেল। অভ্যররথনা আর অভিবাদনের বন্যা শুরু হয়ে গেল, গর্বের চোটে সবার বুক ফেটে যাবার যোগাড় হল। এমন পরিস্থিতি দাড়ালো যেন দেশ কি এক মহা জিয়ন কাঠি খুজে পেয়েছে তাতে গোটা দেশের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তার পর কি হল? ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেল সব। মাকাল ফলের অভ্যন্তরীন দৃশ্য তার গগন বিদারি বোটকা দুরগন্ধসহ সবার কাছে ধরাদিতে লাগলো।

ঘটনা সত্যি কিংবা মিথ্যা তা খনিকের জন্য ভুলে গিয়ে চলুন ধরে নেই ঐ লোক সেখানে গিয়েছিল। আমার প্রশ্ন হল তাতে কি এমন হয়েছে যাতে আমাদের এত মাতামাতি করতে হবে? অনেকে হয়তো বলবেন যে, সে দেশের প্রথম যে কিনা এভারেষ্ট জয় করেছে, তাই সে এই অভিবাদন পেতেই পারে, এবং এতে পরবর্তীতে অনেকেই এরকম কাজে উৎসাহ পাবে। তাহলে ধরুন তাই হল। অন্যরা উৎসাহ পেয়ে হাজারে হাজারে এভারেষ্টের চুড়ায় গিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়লো। তাতে ফলাফল কি হবে? দেশের জিবনযাত্রার মান, শান্তি সৃংখলা, অর্থনৈতিক উন্নতিসহ কোথায় এর ভুমিকা আছে তা কি কেউ ভেবেদেখেছি? এবার আসুন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নিউজিল্যান্ড বধের কথায় আসা যাক।

প্রধান মন্ত্রী রাষ্ট্রিয় কোষাগার থেকে দুহাতে উপঢৌকন তুলে দিলেন প্রতিটি খেলয়াড়ের হাতে। পেপার পত্রিকাগুলো ওদের মাথায় তুলে নাচলো। এবারও গর্বে আমাদের বুক ফুলে উঠলো। কিন্তু যেদেশের শিশুরা জীবনের তাগিদে স্কুল বাদ দিয়ে লোহা লক্কড়ের কারখানায় দিন মজুর খাটে, যেই দেশের স্কুল শিক্ষকদেরকে শেষ জীবনে এসে ভিক্ষা করে খেতে হয়, যেদেশের অধিকাংশ মেধাবীরা টাকার অভাবে কলেজ গড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পা ফেলতে পারে না সেদেশের মানুষকে দেবার জন্য সরকারি কোষাগারের দরজা আমরা কয়বার খুলেছি? ক্রিকেটাররা তাদের পাওনা পেয়েছেন, তারা আর্থিক ভাবে চাহিদার চেয়েও বেশী পেয়েছেন। আরও পাবেন।

কিন্তু তাতে আমাদের মাঝে যারা চীর বঞ্ছিত তাদের কতটুকু উপকার হয়েছে? এতে দেশের কোনদিক দিয়ে উন্নতি হয়েছে? ক্রিকেটাররা যদি বিশ্ব জয় করে ফেরে তাহলে দেশের কি কি সম্ভাব্য উন্নতি হতে পারে? আমাদের দেশে এত এত বুদ্ধিজীবি, এত এত দেশ প্রেমী, এদের কারও মাথায় কি এই সহজ বিষয়টা ঢুকে না যে একজন খেলয়াড়কে দশ লাখ টাকা না দিয়ে একশ জন গরীব স্কুল ছাত্র কে বা একশ জন শিক্ষককে তার অর্ধেক টাকা বন্টন করে দিলে দেশের উপকারে আসতো আরও বেশী? সাইন বোর্ডে বঙ্গ বন্ধু বা শহীদ জিয়ার নাম লাগিয়ে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করায় কতটুকু সম্মান রক্ষা হয়? তাদের সম্মানে দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি গ্রস্থ জনগোষ্ঠির জন্য কোন পদক্ষেপ নিলে কি তাদের সম্মান রক্ষা হবে না? আমি বাংলাদেশের ঢাকার রাস্তায় বহুত দেখেছি এই সব জাতীয় নেতাদের ছবি বা নামের উপর পথচারিদের মুত্র বিসর্যন করতে। আমি দেখেছি পোষ্টারে সাটানো জাতীয় নেতাদের ছবির চোখ মুখ উপড়ে ফেলা ছেড়া পোষ্টার। আর শাবল দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে জাতীয় নেতাদের নাম ফলক গুড়িয়ে দেবার কালচার তো মাত্র শুরু হল। এসবে যদি তাদের সম্মান রক্ষা হয়ে থাকে তাহলে তাই হোক। সচেয়ে বেশী হাস্যকর লেগেছে যখন দেখেছি আমেরিকায় কিংবা ইউরোপে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কোন লোক যখন এমপি বা মেয়র হলেন তখন আমাদের গর্বের আর সীমা নেই।

মনে হল যেন উনারা আমাদের বাংলাদেশকে সোনায় মুড়ীয়ে দেবেন। ওরকম সদিচ্ছা তাদের থাকলে তারা দেশের টানে দেশে এসেই কাজের কাজ কিছু একটা করে দেখাতেন। দেশকে নিয়ে গর্ব করতে হলে গরীবের কাছ থেকে সূদ খেয়ে নোবেল পাওয়া নিয়ে কেন গর্ব করতে হবে? দেশকে নিয়ে গর্ব করতে হলে এভারেষ্ট কিংবা বিশ্বকাপ জয়ের উসিলায় কেন অপেক্ষা করতে হবে? এভাবে দশের টপ ইস্যু গুলোর লিষ্ট তৈরী করুন, ভাবুন আসলেই এসবের পেছনে দেশ ও দশের কতটুকু কল্যান নীহিত আছে, চুল চেরা বিশ্লেষন করুন দেখেবেন একই চিত্র খুজে পাবেন তাই আসুন আমরা এমন কিছু করি যাতে সত্যই দেশ ও দশের কাজে আসে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.