আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আয়নার সামনে পর্ব-২

আমি সত্য বলতে ও শুনতে ভালবাসি।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম আয়নার সামনে পর্ব -২ এ আপনাদের শ্বাগতম। আমি এই সিরিজের বিষয় বস্তু নিয়ে একটা ছোট খাটো Research শুরু করেছি। ইভ টিজিং ,চাইল্ড মলেস্টেশন,রেপ- এসবের তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা করেছি। আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোকেও মনে মনে আওড়েছি।

সবশেষে যা বুঝতে পারলাম তা হল- এই সব ঘটনার সাথে ১/২ টি কারন জড়িত না। আমি ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব আমার পক্ষে যতগুলো সম্ভব আলোচনা করতে। গত পর্বে আপনাদের বলেছিলাম যে ইভ টিজিং এ বলিউড এবং পর্নগ্রাফী এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করব এই পর্বে। আমি যখন সেকুলার ছিলাম তখন অনেক হিন্দি সিনেমা দেখতাম। গত ২ বছরের আগে বলিউডের খুব কম সিনেমা থাকতে পারে যা আমি দেখিনি।

৯০ এর দশকের সিনেমাগুলোর কাহিনী মুটামুটি একই রকম। নায়িকা ভিষন দেমাগী। নায়ক কোন গরীব ঘরের ছেলে। নায়িকা প্রথমে তাকে পাত্তা দেয় না। কিন্তু নায়ক তার পেছনে আঠার মত লেগে থাকে।

এক সময় দেখা যায় নায়ক নায়িকা গাছের ডালে ঝুলে ঝুলে নাচছে। যুগ বদলেছে। বদলেছে ছবির ধরনও। কিন্তু ঘুরে ফিরে একই কাহিনী। নায়িকা প্রথমে নিমরাজি।

কিন্তু পরে আবারও সেই নাচানাচি। অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। ইভ টিজিং এর সবচেয়ে হিত ছবি ছিল "তেরে নাম"। দারুণ ব্যবসা করেছিল ছবিটি। ছবিটিতে raging,ইভ টিজিং এমনকি একটা মেয়েকে কিডন্যাপ করাকেও এত ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যে মনে হচ্ছিল- "আহা! এমন প্রেমিক কি আর আজকাল পাওয়া যায়???" আমাদের ভাইয়েরা মনে করতে থাকে ভূমিকা চাওলা যেমন সাল্মানের প্রেমে(?) বিগলিত হয়ে গিয়েছিল তাদের পছন্দের মেয়েটিও বোধয় তাই করবে।

কিন্তু বিধি বাম। আমাদের আপুরা তো কাল হো না হো এর শাহরুখ এর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কত মহান(?) প্রেমিক! এখানেই ছেলেদের আর মেয়েদের চিন্তাধারা বিপরীত দিকে প্রবাহিত। সুতরাং তাল কাটার ই কথা। কেটেও যায়।

পরিনামে আমাদের ভাইয়েরা তেরে নামের রাধের মত ক্রেজি হয়ে যায় কিন্তু আপুরা তাদের নিজেদের যায়গায় অটল থাকে। কিন্তু নাটের গুরু বলিউডের সিনেমা চলতেই থাকে। তবে অন্য বেশে। এবার নায়িকাদের বেশ ভুষার দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। সৃষ্টিগত ভাবেই মানুষের মধ্যে শারীরিক চাহিদা বিদ্যমান।

এবং এটাও সত্যি যে পুরুষদের আত্নসংবরন ক্ষমতা নারীর চাইতে কম। আর এই কমকে শূন্যের কোঠায় ঠেলে দেয় নারীদেহের অর্ধনগ্ন উপস্থাপন। আমরা মেয়েদের আদর্শ হল বলিউড অথবা হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকারা। হালের ফ্যাশন হল নেট এর শাড়ী যা শরীর ঢাকার চেয়ে দেখায় বেশি। আমরাও দেদারসে সে সব কাপড় কিনছি।

ঈদ বা পূজোয় সে সব পরে বেড়াচ্ছি। Graduation Ceremony তে যাচ্ছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। আমাদের ভাইয়েরা আমাদের দেখে। তাদের মনে ভেসে ওঠে সিনেমার নায়িকা যারা এই ধরনের কাপড় পড়ে ঝরনার ধারে নায়কের সাথে নেচে নেচে romance করছিল যে romance বাবা মার সামনে বসে দেখা যায় না।

আমরা অর্ধ স্বচ্ছ কাপড় পরে নায়িকারূপে আছি। আছেন আমাদের ভাইয়ারাও নায়ক রূপে। কিন্তু শুধু একটা সিন মিসিং। সেই romance. আমরা মেয়েরা যারা সেই romance সায় দেই তাদেরকে ধানমন্ডি লেক/জিয়া উদ্দান/রমনা পার্ক/বেরি বাধের নৌকা/কিংবা কোন বন্ধ ফ্ল্যাট এ দেখা যায় আর যারা আপত্তি করি তারা ইভ টিজিং এর শিকার। কিন্তু যেই ভাইয়েরা এই romance বঞ্চিত তাদের কাটা ঘায়ে নূনের ছিটা দেবার জন্য তো পর্নগ্রাফী আছেই।

আর আমাদের দেশে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পর্নগ্রাফী দেখার/পড়ার সংখ্যা বেশি। আমি আগেই বলেছই যে পুরুষের আত্নসংবরন ক্ষমতা নারীর চেয়ে কম। তাই বাধ্য হয়ে তাদের masturbation এর দারস্থ হতে হয় । পর্নগ্রাফী drug addiction এর চেয়েও খারাপ। কেন??? একজন পর্নগ্রাফী researcher এর মুখেই শুনুন।

আমি অনুবাদে কাঁচা। তবুও চেষ্টা করেছি। সঙ্গত কারনে কিছু অংশ বাদ দিয়েছি। "আমি ২০ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের পর্নগ্রাফী জোগাড় করেছি এবং গবেষণা করেছি। সামগ্রিকভাবে এটি ধর্ম,লিঙ্গ,বয়স নিবির্শেষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তার কারনগুলো আমি নিচে ব্যাখ্যা করেছি। ১। পর্নগ্রাফী মানুষের চোখে ক্ষুধা ভরে দেয়,এই ক্ষুধা হল মাংসের ক্ষুধা,যা কখনই নিবৃত হয়না। এটি খুব সহজেই মানুষ কে নিজের ক্ষুধার দাস বানিয়ে ফেলে যা পরবর্তীতে আরও অনেক খারাপ কাজের দুয়ার উন্মচন করে। যেমন-রাগ,হিংসা,মিত্থ্যাচার,অস্থিরতা,স্বার্থপরতা,নিপীড়ন ইত্যাদি।

পর্নগ্রাফীর প্রভাবণ ক্ষমতা সহজেই অনুধাবন করা যায় যখন এর নেশাগ্রস্ত দর্শক একে ছাড়তে চায় কিন্তু তা এই ভার্চুয়াল জগতে কার সাহায্য ছাড়া তা অসম্ভব হয়ে পড়ে। ২। পর্নগ্রাফী তার দর্শকের চিন্তাধারা কে sexualize করে ফেলে,মানসিকতাকে এমনভাবে পরিবর্তন করে ও বিপথে পরিচালিত করে যে তাদের মাঝে অস্বাভাবিক যৌনতা মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠে এবং তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শারীরিক চাহিদার সময় নিঃসৃত হরমনগুলো পর্নগ্রাফীর দৃশ্যগুলোকে স্থায়ীভাবে মস্তিষ্কে সংরক্ষন করে রাখে। যদি একজন দর্শক পর্ন না দেখারও সিদ্ধান্ত নেয় তবুও এই image গুলো memory তে পাকাপাকিভাবে রয়ে যায়।

৩। দর্শক কে নিজেই নিজের চাহিদা মেটাতে উদবুদ্ধ করে। যেমনঃ Masturbation যার সংগী স্বাভাবিকভাবেই এই ছবিগুলোর দৃশ্য যা আত্নকেন্দ্রিক যৌনতাকে শক্তিশালী করে যা একজন মানুষের ভালবাসা দেয়ার অ নেয়ার ক্ষমতাকে বিকৃত করে দেয়। ৪। দর্শকদের মিথ্যা বলার প্রবণতা বেড়ে যায়।

কারন সে স্বাভাবতই ব্যপারটি লুকাতে চায় লজ্জাজনক পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য অথবা এই লোভনীয় বদ অভ্যাস ছাড়ার ভয়ে। ৫। বিকৃত যৌনরূচির সূচনা হয় দর্শকের মাঝে এবং এক সময় তা নেশায় পরিনত হয়। যেমনঃ শিশু যৌন নিপীড়ন,সমকামিতা,নেক্রফিলিয়া,ম্যাসাচিজম(কাউকে অত্যাচার নির্যাতন করে satisfaction পাওয়া),ধর্ষন,স্যাডিজম ইত্যাদি। ৬।

পর্ন তার দর্শক কে অনেক ফ্যান্টাসিকে সত্য বলে মেনে নিতে বাধ্য করে। যেমন- ক। যৌন স্বাধীনতা = আনন্দ খ। যৌন নিপীড়ন কোন খারাপ কাজ না। গ।

পর্নগ্রাফী কারো ক্ষতি করে না। ঘ। পর্ন তারকারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মান। ঙ। প্রাপ্ত বয়স্কদের পর্ন দেখলে স্থায়ী কোন প্রভাব পড়ে না।

চ। অবৈধ যৌন সঙ্গম খুব এ স্বাভাবিক ঘটনা এবং আত্নতুষ্টির জন্য এটা করা উচিত। ছ। পর্ন ভবিষ্যতে বৈবাহিক জীবনে সাহায্য করে। জ।

পর্ন অক্ষতিকর যা সবাই দেখতে পারে। যারা এই নোট পড়ছেন তারা একবার চিন্তা করুন তো আপনার কথা বা আপনার আশেপাশের ভাইদের/বন্ধুদের কথা। পর্নগ্রাফী দেখেনা এমন কতজন আপনি পাবেন খুঁজে??? ভেবে দেখেছেন এতক্ষন যা আলচনা করলাম তা প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খায় হাজার হাজার ছেলের মাথায়। তার উপর আগুনে ঘী ঢালার জন্য আমরা মেয়েরা তো আছিই যারা নিজের অজান্তে সেই আগুনকে উস্কে দিচ্ছি। একটা মেয়েকে দেখে এই সব ছেলেদের মাথায় কি আসে বলতে পারেন যাদে চিন্তাধারাই sexualize হয়ে গেছে বলিউড আর পর্নের প্রভাবে??? এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই।

আমাদের দেশে কোন যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে আমরা অপরাধীর শাস্তি নিয়ে এতটাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাই যে অন্য কোন দিক চিন্তা করার সুযোগই পাইনা। অতঃপর অপরাধীর সাজা হয় অথবা হয়না। কিন্তু ডজন খানেক টক শো বসে যায়। ঘুরে ফিরে একই কথা-"নারীকে সম্মান করতে হবে। যারা নারীর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকায় তারা পশু(?)।

" কিন্তু আমরা কখনই প্রশ্ন করিনা- ১। কেন এই সব পশু নারীদের সম্মান করেনা? ২। আমরা কেন কখনই পুরুষ যৌন নির্যাতনের ঘটনা শুনিনা? ৩। এই পশুদের সাইকলজি কেমন? উত্তরগুলো জানতে চান???আমিও চাই। তবে আগামী পর্বে।

ইনশাআল্লাহ। ________________________________________________ আরও যা থাকবে আগামী তেঃ __________________ ছদ্দবেশে ইভ টিজিং

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।