আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুটিং থেকে 'ঘেটুপুত্র কমলা'

শুভ'র কারখানা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রামটির নাম হরিপুর। এই গ্রামের জমিদার কৃষ্ণপ্রসাদ রায়চৌধুরী গত হয়েছেন ৭৩ বছর আগে। হাওরের পাড়ঘেঁষা জমিদারবাড়িটি আজো মুগ্ধ করে যে কাউকেই। বাড়ির সামনেই চোখধাঁধানো শানবাঁধানো কারুকার্যময় ঘাটটি নেমে গেছে হাওরের পানিতে। ঠিক এমনই একটি বাড়ি খুঁজছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।

তাঁর নতুন ছবি 'ঘেটুপুত্র কমলা'র শুটিং করবেন। আর এই খোঁজাখুঁজিটা চলছে বছরখানেক ধরে। একটি-দুটি বাড়ি যা-ও পাওয়া গেছে, পছন্দ হয়নি। অল্প কয়েক দিন আগে নির্মাতা শাকুর মজিদ আর অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে খোঁজ পাওয়া গেল এই বাড়ির। পুরো ইউনিট চলে গেল সেখানে।

ছবি তুলে আনা হলো। সব দেখে পছন্দ হলো হুমায়ূন আহমেদের। কিন্তু অত পুরনো বাড়িটি ব্যবহারোপযোগী করতে হলে অনেক কাজ করতে হবে। এখন আর জমিদারদের কেউ থাকেন না। বসত গড়েছেন শ দেড়েক মানুষ।

শুটিংয়ের প্রয়োজনে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলো। তাঁদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করে শুরু হলো ভবন সংস্কারের কাজ। দেয়ালজুড়ে গজিয়ে ওঠা আগাছা পরিষ্কার করা হলো, ঘষেমেজে রং করা হলো, ভাড়া করে নৌকা এনে ঘাটে বাঁধা হলো, আনা হলো সুন্দর একটি ঘোড়া। পুরো জমিদারবাড়ি যেন পুরনো জৌলুসে হেসে উঠল। এরই মধ্যে ছবির প্রধান সহকারী পরিচালক জুয়েল রানা, এই ছবির স্থিরচিত্রগ্রাহক ও পরিচালকের সহকারী মাসুদ আখন্দ, শিল্প নির্দেশক মাসুম রহমানসহ সবাই গুছিয়ে এনেছেন স্পট।

ঢাকায় মহরত শেষে পুরো পরিবার নিয়ে পরিচালক চলে গেলেন শুটিং স্পটে। হুমায়ূন আহমেদ শুটিং করবেন, এ খবর আগেই রটে গেছে। ফলে শুটিং শুরু হতেই পুরো গ্রাম ভেঙে পড়ল জমিদারবাড়িতে। কাজের বেলায় হুমায়ূন আহমেদ কোনো ধরনের অনিয়ম পছন্দ করেন না। সবাই তাই আগে থেকেই সব গুছিয়ে রাখেন।

এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রায় দুই বছর ধরে ঘুরে ঘুরে এই ছবির প্রপস সংগ্রহ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ নিজে। কিছু জিনিস বানিয়েও নিয়েছেন। মেকআপে ছিলেন খলিলুর রহমান। পরিচালক যেমনটি বলেছেন, তেমনটি সাজিয়েছেন অভিনেতাদের।

মাসুদ আখন্দ অভিনয় করেছেন ঘোড়ার সহিস চরিত্রে। চরিত্রের সঙ্গে মানানসই চেহারা বানাতে তাঁর মাথা ন্যাড়া করা হলো, কিছুদিন পর অল্প অল্প চুল গজাল, শুটিংয়ের আগে টানা দুই দিন গায়ে সরিষার তেল মাখিয়ে রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হলো। সঙ্গে যোগ হলো আলগা গোঁফ। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই আঁতকে উঠলেন মাসুদ। তাঁর ভাইবোনও প্রথমটায় চিনতে পারেননি মাসুদকে।

এই ছবির কোরিওগ্রাফি করেছেন শাওন। চিত্রগ্রহণে মাহফুজুর রহমান। আগে থেকেই নির্দেশ ছিল, সকাল ৮টায় ক্যামেরা ওপেন হবে। হয়েছেও তা-ই। প্রায় প্রতিদিন শুটিং হয়েছে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত।

২৫ থেকে ৩১ নভেম্বর পর্যন্ত টানা শুটিং শেষে ইউনিট ফিরেছে ঢাকায়। ২ নভেম্বর চলে গেছে নুহাশপল্লীতে। সেখানে সেট তৈরি হয়েছে। ছবির ইনডোর শুটিং হবে সেখানেই। চলতি মাসের ৮-৯ তারিখে আবারও হরিপুর গ্রামে।

দুই মৌসুমের শুটিং হবে। এই পর্যায়ে শেষ হয়েছে বর্ষার মৌসুম। হাওরে এখন থইথই পানি। সপ্তাহখানেক পরই সেই পানি নেমে যাবে হু হু করে। তারও সপ্তাহখানেক পর চাষিরা তৈরি হবেন জমি আবাদের জন্য।

তার আগেই শেষ করতে হবে ওখানকার শুটিং। এরপর আরো কিছু অংশের শুটিং বাকি থাকবে, ওগুলো শেষ করে রয়েছে সম্পাদনা। এরপর ইমপ্রেস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ছবি মুক্তির তারিখ। আশা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরের শেষ ভাগে হলে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে। ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান (জমিদার), মুনমুন আহমেদ (জমিদারপত্নী), প্রাপ্তি (জমিদারকন্যা), মামুন (ঘেটুপুত্র কমলা), প্রাণ রায় (কমলার নৃত্য শিক্ষক), জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় (ঘেটুপুত্র কমলার বাবা)।

অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন আবদুল্লাহ রানা, শামীমা নাজনীন, তমালিকা কর্মকার প্রমুখ। ইমপ্রেস প্রযোজিত ছবিটির চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনায় হুমায়ূন আহমেদ। কস্টিউম করেছে ফ্যাশন হাউস অঞ্জনস। পাঁচটি ঘেটুগানসহ ছয়টি গান রাখা হবে ছবিতে। শীর্ষসংগীতের কথা হুমায়ূন আহমেদের লেখা।

চারটি গান সেলিম চৌধুরী, কুদ্দুছ বয়াতি ও ফজলুর রহমান বাবু_তিনজন গেয়েছেন, আরেকটি গেয়েছেন এস আই টুটুল। সংগীত করেছেন মকসুদ জামিল মিন্টু -(কালের কণ্ঠ রঙের মেলা )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.