থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।
তানভীর মোকাম্মেল কি পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী? না কি উনি সিপিএম করেন?
আমাদের কিছু জ্ঞানীগুণী লোকেরা কলকাতার ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর। তাদের সমস্ত অনুকরনের মূল বিন্দুই হলো কলকাতা। আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা, তাদের চোখে, বাঙ্গালীর আদর্শ। তারা [ ভারতীয়রা ] যে বাংলাদেশের মানুষদের পছন্দ করে না, এইটা এই সব ‘সুশীল’-দের বললে এরা সে কথা বিশ্বাসই করবে না।
হয়তো সেইটাই তাদের স্বরূপ, আমাদের যা দেখান, তা মেকি কোন ভেক!
তানভীর মোকাম্মেলের লেখা ‘সিপিএম ও কিছু পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক লেখাটি [ প্রথম আলো, ১০ অক্টোবর ২০১০ ] পড়ে আমার এই প্রতিক্রিয়া। লেখাটি আপনারা প্রদত্ত লিংক থেকে পড়তে পারবেন। [ Click This Link ]
এই লেখাটি পড়ে প্রথমেই প্রশ্ন জাগে যে, পশ্চিমবাংলায় সিপিএম নিয়ে লেখকের এতো মমত্ব আর হাহাকার কেন? আর তা প্রকাশের জায়গা তো এই দেশের পত্রিকা হওয়া উচিৎ ছিল না। এই লেখাটি বরং পশ্চিমবাংলার কোন সিপিএম সমর্থক পত্রিকাতে ছাপা হলে ভাল কাজে দিত। উনার সিপিএম-প্রিয়তা আমাদের দেশে জাহির করে কি কোন লাভ আছে, না কোন ফায়দা আছে?
নাকি প্রথম আলো-র সম্পাদক পুরাতন কম্যুনিষ্ট বলেই কি লেখাটি এই পত্রিকায় ছাপা হয়েছে? নাকি এক কমরেড আরেক কমরেডের কাছে কোন কৃতজ্ঞতা দেখাতে এই লেখা লেখির উদ্ভব হয়েছে।
সিপিএম যা যা করেছে, তার ফিরিস্তি আমাদের কাছে অজানা, তাই এই ব্যাপারে লেখকের এক-দেশদর্শী বয়ানের উপরেই নির্ভর করতে হয়েছে। উনি ভাল করে সে রাজ্যের বিষয়গুলো হয়তো জানেন, তাই তার মত করে বিস্তারিত লিখে গেছেন। তবে মাঝে মাঝে যে সব সিপিএম-এর খবর আমাদের দেশের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, যতদূর মনে পড়ে, সেগুলো সিপিএম-এর বিবিধ গুণ-কীর্তি বিষয়ক। তারা ক্ষমতায় থেকেও ‘বন্ধ’ পালন করে, ‘নিজেদের লোকদের’ তাদের প্রয়োজন মত পদে নিয়োগ দেয়, পঞ্চায়েত-শিক্ষক নিয়োগ-শশ্মান কমিটি-বিচার-সালিশ সব জায়গাতেই সিপিএম-এর ‘আপ্না লোক’ থাকবেই, বিরোধী দল কোন কর্মসূচী দিলে তারা মারমুখী হয়ে ওঠে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ঘটনা পড়ে মনে হয় যে আমাদের দেশের যে কোন ক্ষমতাসীন দল আর সিপিএম-এর ভেতরে পার্থক্য নেই তেমন একটা।
লেখকের মনে হয়েছে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত সিপিএম নেতাদের পাশে ‘স্নিকার্স পরা জর্জ ক্লুনির মত তিন দিনের খোঁচা খোঁচা দাড়িসহ সুদর্শন রাহুল গান্ধীর’ আলাদা একটা আবেদন তৈরী হচ্ছে তরুন সমাজের ভেতরে। ভোটের রাজনীতিতে প্রদর্শনটাই প্রচার, সেটা সিপিএম-কেও করতে হয় ভোটের আগে। তারাও ভোট টানার জন্যে বাংলা ছবির নায়ক-নায়িকাদের মাঠে নামায়। লেখকের কথায় মনে হচ্ছে, রাহুল গান্ধীর পশ্চিমবাংলা সফরকে তিনি খুবই অপছন্দ করছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, রাহুল গান্ধী পশ্চিম বাংলায় বিরোধী দলের হয়ে প্রচার চালাতে এসেছিলেন, এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
প্রকাশ কারাত নামের এক সিপিএম নেতা কি গেল নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে ভোট উপলক্ষে সফর করেন নাই? বাংলাদেশে বসে নিশ্চয়ই লেখক পশ্চিমবাংলায় রাহুল গান্ধীর আসা ঠেকাতে পারবেন না।
লেখকের জবানিতে আরো জানা গেল যে একদা যে সব বুদ্ধিজীবিরা সিপিএম-কে সমর্থন করতেন, তাদের অনেকে সিপিএম-কে ছেড়ে বিরোধী দলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এর জন্যে তিনি দায়ী করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকা-কে। সিপিএম নেতাদের মতে এই পত্রিকাটি ‘অনেক মিথ্যা ও অর্ধসত্য খবর ছাপে’। এ প্রসঙ্গে তিনি সিপিএম-এর চালুকৃত একটি কৌতুকের কথা লিখেছেন।
যতদূর মনে পড়ে, এ কৌতুকটি এক সময়ে এ দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও সাধুভাষায় সংবাদ পরিবেশনকারী পত্রিকার নামে চালু ছিল। সিপিএম আমাদের সেই কৌতুকটিকে ‘টুকলিফাই’ করেছে।
সিপিএম-এর পক্ষে ঝান্ডা তোলার জন্যে সে দেশের ‘শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ আর কোন কারন খুঁজে পাচ্ছেন না’। সেটা জানা গেল লেখকের বিশ্লেষণ থেকে। সে দেশে চলমান ‘অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত’ আজকে তাদের অবস্থান আর আগামীতে তারা কি করতে পারবেন, তা মোটা দাগে হলেও বুঝে গেছেন।
ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে ‘অন্যান্য অঞ্চলের মত পশ্চিমবঙ্গেও সচ্ছল মধ্যবিত্তের সংখ্যা’ বেড়ে গেছে, যারা কিনা ‘ষাট ও সত্তরের দশকের ত্যাগ ও সংগ্রামের মানসিকতা’ পোষণ করেন না।
মুক্ত বাজার অর্থনীতির এই তো গুণ! সিপিএম কি ভারতে কোন রাষ্ট্রীয় নীতি ত্যাগ করে কিউবা বা উত্তর কোরিয়ার মত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করেছিল? না চালু করার চেষ্টা করেছিল? আমাদের জানা মতে তা তারা করে নাই। তারা চিনাদের মত তথাকথিত বাজার অর্থনীতির একটা পথে থাকার চেষ্টা করেছে। যাতে তাদের আমও থাকে, ছালাটিও না হারায়। এসবই তারা করেছিল যেন পশ্চিমবাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা তাদের পক্ষে থাকে।
কিন্তু লেখকের লেখাটি পড়ে হতাশার সুরটিই শোনা গেল।
নিপীড়িত, বঞ্চিতদের কথা বলার জন্য, তাদের পক্ষে ধুয়া তুলে যে সিপিএম এককালে মেঠো রাজনীতি করেছে, প্রচুর রক্ত ঝরিয়েছে, তারাই ক্ষমতাসীন হয়ে প্রান্তিক আদিবাসীদের দাবী ও অধিকারের প্রতি নজর দেয় নি। তারা সে সব প্রান্তিকজনদের প্রতি ছুঁড়ে দিয়েছে ক্ষমতার বিষ-অস্ত্র। ফলে রক্তাক্ত হয়েছে সে সব জনপদ। আর সে সুযোগে চিনপন্থী সে সব বিদ্রোহীদের সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন শক্তি, যাদের পরিচয় নিয়ে ধন্ধ আছে।
আর এই দুর্বল জায়গাতে অলোচনার সুত্রপাত ঘটাতে চাচ্ছেন সিপিএম-এর বিরোধীরা। সেটাকে লেখকের মনে হয়েছে ‘আগুন নিয়ে খেলা’।
লেখার শেষে তিনি অনেকটা নিজের প্রশান্তির জন্য সম্প্রতি কালে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র নির্বাচনে সিপিএম-পন্থীদের বিজয়কে খড়কুটোর আঁকড়ে ধরতে চেয়েছেন। তাতেই তিনি প্রমাণ পেয়ে গেলেন যে এই পড়তি বেলাতেও ‘সুশিক্ষিত তরুণদের কাছে সিপিএময়ের আবেদন খুব কমেনি’। লেখকের আশা, হয়তো শেষ বেলায় এসে সিপিএম-এর মত একটি বিশাল দল সব দিক সামলিয়ে উঠবে।
তার এই আশাবাদী কথাগুলো যদি সিপিএম-এর দাদাদের হাতে পৌছাতে পারত! সে জন্য বলতে বাধ্য হচ্ছি লেখাটি অসময়ে, অজায়গায় ছাপা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।