আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তানভীর মোকাম্মেল-এর ‘অচিন পাখি’

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
অনেকেই এর আগে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘লালন’ ছবিটি দেখেছেন। আমার কাছেও ছবিটি ভালো লেগেছে। তার কারণ আছে।

আমি উনিশ শতককে বুঝতে চাই। উনিশ শতক লালনের শতক, রবীন্দ্রনাথের উত্থানের শতক। কাজেই যত বেশি করে উনিশ শতককে বোঝা যায়। তানভীর মোকাম্মেল এর লালন ছবিটি জুড়ে উনিশ শতক। বাংলা।

নদীয়া । কুষ্টিয়া। বোঝাই যায়-বাউল দর্শন নিয়ে তানভীর মোকাম্মেল এর রয়েছে আতীব্র কৌতূহল; আর, এ কারণেই তিনি নিরন্তর বাউলদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সেদিন আমি ভাবছিলাম, হঠাৎ করে ফ্রান্সে কেন লালনের ভাস্কর্য গড়ার কথা উঠল। সম্প্রতি তানভীর মোকাম্মেল ‘অচিন পাখি’ নামে আরেকটি প্রামাণ্যচিত্র নিমার্ণ করেছেন।

এই প্রামাণ্যচিত্রটির বিষয়ও: লালন শাহর জীবন ও দর্শন। আমার বিশ্বাস, আমার মতো প্রামাণ্যচিত্র অনেকেরই ভালো লাগবে ... সচরাচর ব্লগার আকাশ অম্বর আমার ডেরায় এলে কখনোই খালি হাতে আসে না। তার মানে এই নয় যে সে গন্ডা গন্ডা মিঠাই মন্ডা নিয়ে আসে। না, তা নয়। গন্ডা গন্ডা মিঠাই মন্ডার বদলে ওর হাতে থাকেই বই বা ডিভিডি।

যা আমার জন্য খুলে দেয় নতুন দুয়ার ... কাল সন্ধ্যায় ও এল । হাতে ছিল তানভীর মোকাম্মেল এর ‘অচিন পাখি’ ও দি বাইসাইকেল থিফ। রাত নটা অবধি আমরা বকবক করলাম। নানান বিষয়ে। তারপর ও চলে গেলে ‘অচিন পাখি'-র ডিভিডিটা ডিভিডি রমে ঢুকালাম।

প্রথমেই যেটা ভালো লাগল - প্রামাণ্যচিত্রটির প্রিন্ট ভালো। শুধু ঝকঝকে না, মনে হল যা দেখাতে চাইছেন পরিচালক- আমার ভিউসনিক এলসিডি মনিটর উপছে পড়ছে -এমন রিয়েল। একটু পর বুঝলাম 'অচিনপাখি'-র উপস্থানার স্টাইলটিও ভালো। নদীয়া জেলার পুতুল নাচ দিয়ে শুরু। ...দেখতে দেখতে ভালো লাগছে।

কেবল সাবটাইটেল নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারলাম না; আমি ইংরেজির পন্ডিত নই- তারপরও সাবটাইটেল নিয়ে সন্তুষ্ট হলাম না। বাউল অঙ্গের গানের ইংরেজি কি 'বাউলিশ' হবে? ঠিক কি হবে আমি জানি না। বললাম না আমি ইংরেজির পন্ডিত নই। তবে আমার মনে হল যে বাউল অঙ্গের গানের ইংরেজি কি 'বাউলিশ' না -অন্যকিছু। ‘অচিন পাখি’ তে অনেক লালনের অনেক গান ।

একের পর এক বাজছে। প্রায় সবই প্রাকৃতশিল্পীদের কন্ঠে গাওয়া। তবে ফরিদা পারভীন-এর গানও আছে। লালনের প্রসঙ্গে এই নারীকে এড়ানো কঠিন! তবে ফরিদা পারভীন কে ছবিটায় অন্যরুপে দেখলাম। আগে এমনটা দেখিনি।

কেমন ঘরোয়া। উঠানে কবুতরদের দানাপাখি খাওয়াচ্ছে। লালনের দর্শনের নারীবাদী দিকটির উপস্থাপনাও ভালো লাগল। আমার সবচে ভালো লাগার একটি দৃশ্য হল-এক জন বাউল-বেশ বৃদ্ধ- নদীর ধারে বসে লালনের প্রসঙ্গে বলছেন-লালন আর ইসলামের প্রসঙ্গে ...ক্যামেরা তখন সরে গেল নৌকার দিকে, নদীর দিকে; কী একটা গভীর মিনিং আছে। শাস্ত্রের কূটকচাল বাদ দাও-এসো আমরা নৌকা দেখি, নদী দেখি-এরকম; -নদীটা মনে হল গড়াই।

যদি তাইই হয়তো তা হলে আমি ঐ নদীর পাড়ে ১৯৯৪ সালের ২১ নভেম্বরের এক ধূসর বিকেলে বসে ছিলাম ... আরেকটা দৃশ্যও ভালো লাগল। পুতুল যারা নাচাচ্ছেন -তাদেরও দেখাল। ভাষ্যকার তখন বলছিলেন, একদিন আমরা সম্ভবত অচিন পাখিকে চিনতে পারব ...তখনই দেখা গেল - পুতুল যারা নাচাচ্ছেন -তাদের ...কী অদ্ভুত। বোঝাই যায়-বাউল দর্শন নিয়ে তানভীর মোকাম্মেল এর রয়েছে আতীব্র কৌতূহল; আর, এ কারণেই তিনি নিরন্তর বাউলদের নিয়ে করে যাচ্ছেন। সেদিন আমি ভাবছিলাম, হঠাৎ করে ফ্রান্সে কেন লালনের ভাস্কর্য গড়ার কথা উঠল।

পশ্চিম বাংলার বিশিষ্ট লালন গবেষক সুধীর চক্রবর্তীর আলোচনা ও গান সম্ভবত ‘অচিন পাখি’-র সবচে বড় দিক। আমি সুধীর চক্রবর্তীর বিরাট ফ্যান। সুধীর চক্রবর্তীর মতো করে লিখতে চেয়েছি। পারিনি। পারবও না কোনওদিন।

তিনি যে গানও গান, জানতাম না। পরে মনে হল বাঙালি বুদ্ধিজীবি তো ...আমাদের কাছে গানটা তো অন্যরকম হওয়ারই কথা ... বিশিষ্ট লালন গবেষক আবুল আহসান চৌধরীরর আলোচনাও ‘অচিন পাখি’-র আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। তিনি বললেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। যা হোক। প্রামাণ্যচিত্রটি ৬০ মিনিটের ।

সিনেমাটোগ্রাফি: আনোয়ার হোসেন। সম্পাদনা: মহাদেব শী। প্রযোজনা: কিনো-আই ফিলমস। চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : তানভীর মোকাম্মেল। আশা করি প্রামাণ্যচিত্রটি সবর্ত্র পাওয়া যাবে।

এমন একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আকাশ অম্বরকে একরাশ শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা ...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.