হিংস্র কিছু শকুন আজ খামছে ধরেছে মানবতার পতাকা...জেগে উঠার এইতো সময়...
কদিন আগেই পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ ডাক বিভাগকে নতুন সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে। এনালগ সব কিছু বদলে ডিজিটাল করে ফেলা হচ্ছে। দেখে অন্য অনেকের মত আমিও একটু আশান্বিত হয়েছিলাম। যাক পোস্ট অফিস তাহলে মাঝে মাঝে ব্যবহার করা যাবে। এখন তো আর চিঠির যুগ নাই।
তাই পোস্ট অফিসে কখনো যাওয়া হত না। কিন্তু টাকা আদান প্রদান করার জন্য আগে মাঝে মাঝে ব্যবহার করতাম ওদের সেবা। এরপর আসলো এস এ পরিবহন সহ বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি। টাকা পাঠানোও খুবই সহজ। গ্রহন করাও অনেক সহজ ব্যাপার।
প্রেরক টাকা পাঠানোর সময় প্রাপকের মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে দিবে। টাকা তুলতে গেলে কাউন্টারে গিয়ে শুধু সেই মোবাইলটা থেকে কোম্পানির একটা নাম্বারে মিসকল দিলেই হবে। নাম্বার মিলে গেলেই টাকা পেয়ে যাবেন। লাখ লাখ টাকাও পাঠাতে দেখেছি মানুষকে এই সিস্টেমে।
ডাক বিভাগ ঠিক এইরকম একটা সার্ভিস চালু করাতে অনেক খুশিই হয়েছিলাম।
যেখানে এস এ পরিবহন নাই সেখানে অন্তত সহজে টাকা পাঠানো যাবে। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। নামে ডিজিটাল কামে তো দেখি পুরাই এনালগ। কিছু বিষয় যেগুলো না বললেই নয়...
১-ডাক বিভাগের এই সিস্টেমটাই এনালগ। যেখানে এই টাকা দেয়া বা নেয়া হচ্ছে সেখানে একটা কম্পিউটারও নেই।
নেই ডাটাবেজ সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা।
২-কোন ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি নেই।
৩-টাকা দেয়া বা নেয়ার লাইন হচ্ছে সবমিলে একটি। ফলে একজন মানুষকেই বিদায় করতে লেগে যাচ্ছে ২৫ মিনিটের মত।
৪-প্রেরক টাকা দেয়ার সময় তাকে একটি কোড দেয়া হয়।
সেই কোড ফোনে প্রাপককে তিনি জানিয়ে দেন। আর যিনি টাকা দিচ্ছেন পোস্ট অফিস থেকে তিনি একটা বাংলালিঙ্ক সিম সহ মোবাইল ব্যাবহার করছেন। সেই মোবাইল থেকে প্রাপকের নাম,ঠিকানা,কোড নাম্বার,মোবাইল নাম্বার,প্রেরকের নাম্বার সব টিপে টিপে ডায়াল করে বাংলালিঙ্ক অফিসে পাঠান। ওদের ডাটাবেজ থেকে যখন ইচ্ছা একটা এস এম এস আসে প্রাপকের টাকার পরিমাণটা জানিয়ে। সেটা নেটওয়ার্ক ব্যস্ত থাকলে অনেক দেরিও হয়ে যায়।
ফলে গ্রাহকের বিশাল একটা লাইন প্রায় সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে। টাউন হল পোস্ট অফিসে সকাল ৯টা থেকে একটানা মোবাইল টিপাটিপি করে মাত্র ১৪ জন কে টাকা দিতে দেখলাম ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে।
৫-অপারেটর একটা মোবাইলেই টিপাটিপি করছে। ফলে অনেক কী ই কাজ করছে না। উনি বারবার গুতাগুতি করছেন।
এটার কোন সমাধান নেই।
৬-কাজের মাঝখানে মোবাইলটার চার্জ চলে গেল। গ্রাহকের ভোগান্তি আবার শুরু। সবাই দাঁড়িয়ে থাকলাম চার্জ হওয়া পর্যন্ত।
৭-শেষে দেখা গেল মোবাইল নাম্বার,কোড নাম্বার সব কিছু ঠিক থাকার পরেও ঊনি ঠিকানা নিয়ে একজনের সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলেন।
৮-পোস্ট অফিসের ভিতরে অন্তত ১০ জন লোক। তাদের কেউই কাজ করছে না। সবাই গল্প গুজবে ব্যস্ত। অথচ বাইরের লাইন ততক্ষণে রাস্তায় এসে পড়েছে।
৯-আমি যখন টাকা নিতে গেলাম তখন দেখলাম সকাল থেকে সেই ভাঙ্গা মোবাইল টিপাটিপি করতে করতে অপারেটরের হাত কাঁপছে।
খুব মায়া লাগলো লোকটাকে দেখে। ২ ঘন্টা লাইনে অপেক্ষা করার সমস্ত কষ্ট আমি ভুলে গেলাম উনার অবস্থাটা দেখে। কেউ তাকে হেল্প করতেও এগিয়ে আসছে না। এ কি এনালগ সিস্টেম রে বাবা।
বাংলাদেশ ডাক বিভাগের এতো হাঁকাহাঁকি, বাংলালিঙ্ক এর মত কোম্পানি স্পন্সর থাকার পরেও একটা লেটেস্ট সার্ভিসের এই অবস্থা।
একটা করে ইন্টারনেট সংযোগ সহ কম্পিউটার এবং তার সাথে একজন দক্ষ অপারেটর প্রতিটা পোস্ট অফিসে বসানো কি খুবই ব্যায়বহুল?
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কতটুকু সদিচ্ছা সরকারের আছে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।
ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।