আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিন্তিত হইয়া হাঁটার বিপত্তি

আমি তোমায় বুঝেছি সমগ্র বুঝহীনতার ভেতর দিয়ে।

কিছু দিন আগের কথা। গুলিস্তান যাবো। সক্কাল বেলা ঠেলাঠেলি করে বাস উঠব এটা ভাবতেই বিরক্ত লাগতেসিল। সেই ভাবের ঘরে হানা দিলো মনসা কন্যা।

সেই মহিলা সাপের ভয় দেখাইয়া দশ টাকা নিয়া নিসিল। তার বাক্সেও ভেতর কি ছিল সেই জানে। কিন্তু সাপের নাম শুনলেই আমি আধ-মরা। দশ টাকা দেবার পর সে আমার মাথায় বুলাইতে চাইলে সাহস করে তারে একখান ধমক দিসি। সে কিছু মনে করসে বলে মনে হয় নাই।

হিজড়া দেখলেও ভয়ে উল্টো দিকে হাঁটি। সেদিন মুদি দোকানে গেসিলাম। দোকানীকে বাজারের লিস্টি দিয়া একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। হঠাৎ সে যেন পেছন থেকে দাঁড়িতে হাত দিলো। চমকে পেছনে তাকাইয়া দেখি- এক হিজড়া, “'মাশাল্লাহ, তোমার দাঁড়িগুলা সুন্দর গো”'।

বললাম, “'থ্যাঙ্কু য়ু”'। সে বলল, “'ওয়েল কাম”'। দেখলাম ভয় পাই নাই। অবশ্যই এর আগে কেউ দাড়ি নিয়া প্রশংসা করসিল কিনা ইয়াদ হইল না। তারপর সে দোকানদারকে বলল, “'এই উনারে ছিড়া প্যাকেট দিসো কেন, পাল্টাইয়া দাও'”।

তার এই খাতিরটাও ভালো লাগসে। বিকেলে আমার এক বন্ধু বললেন,' “বেঁচে গেসেন, এরা খুব ডেনজারাস'”। ঠিক কথা, তবে সাপওয়ালী মতো না। গতকাল মিরপুর মাজারে গেসিলাম মানে যাইতেসিলাম। কি চিন্তা করতেসিলাম আল্লাহ মালুম।

সমস্যা হইল আমার চিন্তাগ্রস্ত মুখখানি দেখলে নাকি অসুস্থ্য অসুস্থ্য মনে হয়। অনেকদিন আগে আমার খুব পসন্দের টিচার আ ন ম ওয়াহিদুর রহমানের লেকচার শুনতেসিলাম। মনোযোগ দিয়া। হঠাৎ স্যার বললেন, 'এই তোমার কি হয়েছে, অসুস্থ্য নাকি'। বললাম, 'না স্যার ঠিক আছি'।

স্যার কিছু হিতোপদেশ দিসিলেন। বলতে পারতেসিলাম না, মনোযোগ দিয়া কিছু চিন্তা করলে বা শুনলে আমার চেহারা এমন হয়ে যায়। স্যারের সেই লেকচারটি হুবহু না হলেও আজও অনেকখানি মনে আছে। সমস্যা হলো সেই চেহারাখান কেমন থাকে তা আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না। আয়নার সামনে অনেকবার চিন্তিত মুখে তাকাইয়া সিলাম।

কিন্তু সেটা তো মুখ ঘোমড়া করে রাখার অভিনয়, বাস্তব নয়। চার-পাঁচ সাল আগে আন্দরকিল্লায় আমিন ভাইয়ের বাসার সামনে তার জন্য দাড়াইয়াসিলাম। কে যেন কাঁধে হাত রাখল। বলল, 'বাবা এতো দুঃচিন্তা কেন? সব ঠিক হইয়া যাবে'। মুশিবত।

আমি তখন কোন চিন্তায় ছিলাম না। পরে শুনলাম ভদ্রলোক জামাত নেতা শাজাহান চৌধুরী। এই জিনিসটা মজা লাগসিল। এইভাবে যদি মানুষকে ইমপ্রেস করা যায়, খারাপ না। শাহাজান চৌধুরী নিয়া আমার কিছুই জানা নাই।

তবে রাজনীতিবিদ’রা নিশ্চয় কিছু না কিছু দিয়া মানুষরে ইমপ্রেস করে। ওহ, মিরপুর মাজার নিয়া যা বলতে ছিলাম। নিচের দিকে তাকাইয়া হাঁটছি। রাস্তার মধ্যে একজন হাত চেপে ধরল। বুড়া একজন মানুষ।

লম্বা জোব্বা পরা। পান খাচ্ছে। বলল, 'মাকে সন্মান করবি। মাকে দেখে রাখবি'। ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পাইসিলাম বটে।

বললাম, 'ঠিক আছে। মাকে সন্মান করব'। মায়ের কথা শুনে মনটা কেমন আর্দ্র হয়ে গেল। যাই হোক সেই লোক হাত ছাড়তেসে না। আমি হাত টেনে নিই।

লোকটার হাতের কথা হইল, থাক না তোমার হাতটা ধরা। তারপর বলল, 'এতো টেনশন কিসের'? আমিও চিন্তায় পরলাম, 'আসলে এতো টেনশন কিসের'? সে বলল, 'টেনশনের কোন কারণ নাই'। আসলেই তো টেনশনের কোন কারণ নাই। বললাম, 'ঠিক আছে টেনশন করব না'। তারপর সে মাথায় হাত বুলাইয়া দিয়া বলল, 'তোরে বাপ ডাকলাম।

দশটা টাকা দে। বাপ ডাকসি কিন্তু, না করতে পারবি না'। আসলে বাপ ডাকলে কি না বলা যায়। যায়। কিন্তু ভয় পাইলে আর আত্ম-বিশ্বাস না থাকলে বাপ না বউয়ের ভাই বললেও ঘটনার হেরফের হয় না।

দশ টাকা দিতেই হয়। তাড়াতাড়ি দশ টাকা দিলাম। তারপর সেই লোক খোদার খাসির মতো জোব্বা পরা এক লোকরে সেই দশ টাকা দিলো। সেই তিনগুন মোটা লোক দশ টাকার নোটটা রিকসাওয়ালারে দিলো। যাক, যদি আক্কেল থাকে এই এক শিক্ষায় যথেষ্ট।

তা না হইলে আমার জীবনে বার বার এই ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।