আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সামান্য একটু চিন্তিত হলাম।

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
গতকাল দেখলাম বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ বই মেলায় গিয়ে নিজের বইএ অটোগ্রাফ দিলেন। দারুন একটা বিষয় - এর আগে কোন সেনাকর্তাকে এইভাবে বইমেলার মতো যায়গায় দেখা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর গড়ে উঠা সেনাবাহিনী জনগনের সেনাবাহিনী হওয়ার কথা থাকলেও ক্ষমতালোভী সেনাকর্তাদের কারনে সেনাবাহিনী ১৯৭৫ থেকেই জনগনের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। একজন সাধারন মানুষের মতো যদি একজন সেনাপ্রধান লেখকের ভুমিকায় বইমেলায় স্বাভাবিক বিচরন করতে পারেন - সেইটা বাংলাদেশের জন্যে একটা ভাল লক্ষন বটে। তাইলে চিন্তাটা কেন আসলো? উনি যে বইটা প্রকাশ করেছেন - তা মুলত উনার বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বত্তৃতারই সংকলন।

যা ইতোমধ্যে আমরা টিভি/সংবাদপত্রের মাধ্যমে পড়েছি। তার মধ্যে একটা বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ন মনে হয়েছে। তা হলো উনি বাংলাদেশের জন্যে একটা নতুন ধরনের গনতন্ত্রের কথা বলা শুরু করেছে। সমস্যটা এখানেই......... একটু পিছনে ফিরে তাকালেই দেখবো ........ সামরিক শাসক আইউব খান মৌলিক গনতন্ত্র নামে একটা হজবরল পদ্ধতি তৈরী করে গনতন্ত্র বিকাশের বারটা বাজিয়ে গ্রাম পর্যায়ে টাউট তৈরী করেছিলো। আওয়ামীলীগ গনতান্ত্রিক ভাবে গনতন্ত্রকে কফিনে পুরেছিলো।

আরেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান "গ্রাম সরকার" থেকে শুরু করে রাবারস্ট্রাম্প সংসদ তৈরী করে স্বৈরশাসনের গায়ে গনতন্ত্রের চাদর জড়িয়ে সবাইকে বোকা বানিয়ে রেখেছিলো। পরের স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ গনতন্ত্রকে নিয়ে ক্যান্টনম্যান্টে আটকে রেখে ৯ বছর দেশ শাসন করেছে। তারপর এলো প্রত্যাশিত বিজয় - ৯০ এর ৬ই ডিসেম্বর। কিন্তু, যারা ক্ষমতায় গেল - তাদের কাছে গনতন্ত্রের অর্থ হলো - ৫ বছর পরপর নির্বাচন করে ক্ষমতা গিয়ে নিজেদের মতো করে ক্ষমতা ভোগ করা। সেই ভোটের গনতন্ত্ররে করুন পরিনতি হলো রাজনৈতিক দলগুলোতে চরম গনতন্ত্রহীনতা আর দূর্বিত্যায়নের মাধ্যমে একটা জরুরী শাসনের আড়ালে প্রচ্ছন্ন সেনা শাসন।

সেই শাসনের চালকের আসনে বসে যদি জেনারেল নতুন ধরনের গনতন্ত্রের কথা বলেন - তাহলে শ্রোতাদের কপালে একটু ভাঁজ পড়া কি স্বাভাবিক নয়। প্রশ্ন আসবেই - সেইটা কোন ধরনের গনতন্ত্র হবে। কথা হলো যেখানে গনতন্ত্র চর্চা স্বাভাবিক ভাবে চলেনি কখনই - সেখানে গনতন্ত্র নিয়ে নতুন ভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করার যুক্তিটা কি? গনতন্ত্রের একটাই রূপ - সংখ্যাগরিণ্ঠের শাসনের মধ্যে সংখ্যালঘিষ্টের অধিকার রক্ষা। আর গনতন্ত্র হলো একটা চলমান প্রক্রিয়া। চলার সময় যদি একটু বা#কের মধ্যে চলেও যায় - তাতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

অধিকতর গনতন্ত্ররে চর্চাই গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার ত্রুটি নিরাময়ের একমাত্র পথ - বাহ্যিকভাবে চাপিয়ে দেওয়া কোন পরীক্ষা নীরিক্ষা গনতন্ত্র বিকাশের পক্ষে অন্তরায়। আর একজন জেনারেল হলেন একজন রাষ্ট্রীয় কর্মচারী মাত্র। রাষ্ট্রের বা সমাজের নীতিনির্ধারনী বক্তব্য দেবার আগে সবারই উচিত নিজের সীমারেখাটা স্মরনে রাখা। সেনাবাহিনী ভোটার পরিচয়পত্র তৈরীতে সহায়তা আর দূর্নীতি নিয়ন্ত্রনে (!) সহায়তা করছে - যা নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু সেনাপ্রধানের গনতন্ত্রের স্বরূপ নিয়ে মাথাঘামানো মনে হয় তার উপর রাষ্ট্রীয় অর্পিত দায়িত্বের সীমার মধ্যে পড়ে না।

তাই একটু চিন্তিত হলাম।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।