আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাঁপা রানী হত্যা, হীরা-মুক্তার বুকফাটা আর্তনাদ



হীরা, মুক্তার বুকফাটা আর্তনাদ, স্বজনদের আহজারি আর সহমর্মীদের বোবা কান্নার মধ্য দিয়ে গতকাল মধুখালীতে শেষ কৃত্য হয়েছে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় খুন হওয়া চাঁপা রানী ভৌমিকের। শোকের মাতম নিহতের বাড়িতে। শোকার্ত মানুষের ঢল। চাঁপা রানীর কন্যা মুক্তা চিৎকার করে বলছিলো- আমার মাকে যেভাবে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকারীকেও সেভাবে রোলারপিষ্ট করে বিচার করুন। চাঁপা রানী নিহত হবার পর থেকে বাকরুদ্ধ তার স্বামী স্বপন বিশ্বাস।

কোন কথাই তিনি বলছেন না। নিহত চাঁপা রানীর ভাই অরুন ভৌমিক চিন্তিত হীরা-মুক্তার ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি বলেন, বখাটেদের খুঁটির জোর অনেক। ওদের আটকাবে কে? পুলিশ শেষ পর্যন্ত হত্যা মামলা গ্রহণ করলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি ঘাতক রনি সাহা সহ তার সহযোগীদের। অন্যদিকে অভিযোগ উঠেছে, মধুখালীর এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাইপো রনি সাহার আশ্রয়দাতা হিসেবে পরিচিত মিলন এবং তার লোকেরা ঘটনার পর থেকে রনি সাহার বাড়ি পাহারা দিচ্ছে।

গতকাল নিহত চাঁপা রানীর বাড়িতে যান এলাকার এমপি আব্দুর রহমান, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক হেলালউদ্দিন এবং পুলিশ সুপার আওলাদ আলী ফকির। ফরিদপুর চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাদের সহকর্মী চাঁপা রানী হত্যার প্রতিবাদে উপজেলায় তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বখাটেদের বিচারের দাবিতে গতকাল মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ফরিদপুর জেলা মহিলা পরিষদ। হত্যা মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার নেই শেষ পর্যন্ত মধুখালী থানা পুলিশ চাঁপা রানী নিহত হওয়ার ঘটনায় হত্যা মামলা গ্রহণ করলেও এখন পর্যন্ত ঘাতক রনি সাহা এবং তার সহযোগী আলাউদ্দিন, আলমগীর ও সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। হদিস করতে পারেনি ঘটনার সময় রনি সাহার সঙ্গে আরও দুটি মোটরসাইকেলে কারা ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনটি মোটরসাইকেল ছিল। কিন্তু পুলিশ শুধু রনি সাহার মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করতে পেরেছে। ২৭শে অক্টোবর চাঁপা রানীর ভাই অরুন ভৌমিক থানায় এজাহার দায়ের করতে গেলে পুলিশ ইভটিজিংয়ের আইন নেই বলে সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলা রুজু করতে চায়। পরে পুলিশ সুপার এবং বিক্ষুব্ধ মানুষের কারণে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। এখন পর্যন্ত পুলিশ অন্য দুটি মোটরসাইকেল উদ্বার এবং ওই মোটরসাইকেলে কারা ছিল সে ব্যাপারে কোন কথা বলছে না।

মধুখালী থানার ওসি মোহসিনুল হক বলেন, আসামিদের ধরতে দেশের সকল থানায় ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে। আশা করি অচিরেই তারা ধরা পড়বে। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। পুলিশও তৎপর। ঘটনার সময় রনির সহযোগী অন্য দুটি মোটরসাইকেল সম্পর্কে ওসি বলেন, আরও মোটরসাইকেল ছিল বলে আমার জানা নেই।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আওলাদ আলী ফকির বলেন, রনি সাহাকে ধরতে যতটা কঠোর হওয়া দরকার আমরা সেটাই হবো। অচিরেই আমরা রনির গ্রেপ্তারের খবর দিতে পারবো বলে আশা করি। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ দু’জনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের একজন ঘাতক রনি সাহার সৎমা প্রমিতা সাহা এবং রনি সাহার সহযোগী আলাউদ্দিনের মা খোদেজা বেগম। পুলিশ বলেছে, প্রয়োজনে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

মেধাবী হীরা-মুক্তাকে নিয়ে চিন্তা মধুখালী চিনিকল উচ্চবিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী হীরাকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছেন তার মা। মায়ের খুনের ঘটনায় ভেঙে পড়েছে দুই যমজ বোন হীরা এবং মুক্তা। দু’জনই একই স্কুলে দশম শ্রেণীর ছাত্রী। দু’জনেই ক্লাস ফাইভ এবং এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসিতে তারা ভাল ফল করে স্কুলের সুনাম বাড়াবে এমন প্রত্যাশা ছিল স্কুল শিক্ষকদের।

স্কুলের শিক্ষক আমিরুজ্জামান বলেন, আমাদের বড় আশা মেয়ে দুটিকে নিয়ে। কিন্তু এখন চিন্তায় আছি। প্রথমত তাদের মায়ের মৃত্যু এবং বখাটেদের উৎপাত। তিনি বলেন, বখাটেরা তো শক্তিশালী। তাদের রুখবে কে।

ক’দিন বাদে তো ওরা ফিরে আসবে। এক ধরনের দুশ্চিন্তার কথা বললেন নিহত চাঁপা রানীর ভাই অরুন ভৌমিক। তার বক্তব্য- বখাটেদের শেকড় অনেক গভীরে। আমরা নিরীহ মানুষ। এখন মাতৃহীন মেয়ে চারটি কার আশ্রয়ে থাকবে? ওদের বাবা সকালে অফিসে যায় রাতে ফিরে।

তাছাড়া বখাটেদের বিরুদ্ধে নালিশ করতে গিয়েই তাকে জীবন দিতে হয়েছে। নিহত চাঁপা রানী এবং স্বপন বিশ্বাস দম্পতির চার কন্যার মধ্যে বড় মেয়ে শম্পার বিয়ে হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়ে সোমা ইডেন কলেজে পড়ে। ছোট হীরা এবং মুক্তা যমজ। পড়ে একই ক্লাসে।

ইভটিজিংয়ের শিকার হীরা ভেঙে পড়েছে। তার একটাই দাবি, মায়ের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। রনি সাহা যে ভাবে বখাটে বাংলা মদের ব্যবসায়ী বিত্তবান পিতা রতন সাহার ছেলে রনি সাহাকে এলাকার মানুষ চিনে নেশাখোর, উচ্ছৃঙ্খল যুবক হিসেবে। অভিযোগ, রনির পিতা রতন সাহা তার স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়ে পার পেয়ে যান টাকার জোরে। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করেন রতন সাহা।

তার নানা অপকর্মে যাতে ছেলে রনি বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য দাবি মতো টাকা দিয়ে তাকে বখাটে করেন। মধুখালী বাজারের ব্যবসায়ী বিমল জানান, রনি কেবল হীরাকেই উত্ত্যক্ত করতো তা নয়, তার কাজই ছিল আরও বখাটেদের নিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে মেয়েদের বিরক্ত করা। মাস কয়েক আগে সে মধুখালী বাজারের এক চা দোকানির গায়ে গরম পানি ঢেলে তার গা ঝলসে দেয়। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারেনি তার সহযোগীদের কারণে। এলাকার প্রভাবশালী লোকের ছেলেরা তার বন্ধু।

Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।