আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।
শফিক রেহমান
ুন ১৯১৪-তে সূচিত হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেটি ওয়ার্ল্ড ওয়ার ওয়ান, সংক্ষেপে ডাবলিউ ডাবলিউ ওয়ান (ডডও) নামে পরিচিত। এই যুদ্ধ শেষ হয়েছিল পাচ বছর পরে ১৯১৯-এ। মোট হতাহতের সংখ্যা ছিল ৩৭ মিলিয়নের (তিন কোটি ৭০ লক্ষ) বেশি। মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ১৬ মিলিয়নের (এক কোটি ৬০ লক্ষ) বেশি এবং আহতের সংখ্যা ছিল ২০ মিলিয়নের (দুই কোটি) বেশি।
নিহতদের মধ্যে এক কোটি ছিল সামরিক ব্যক্তি এবং ৬০ লক্ষের বেশি ছিল বেসামরিক ব্যক্তি। (এক মিলিয়ন = দশ লক্ষ। দশ মিলিয়ন = এক কোটি)। এই যুদ্ধে অবিভক্ত ইনডিয়ায় নিহত হয়েছিল ৭৪,১৮৭। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লাতে ওয়ার সিমেটারিতে এদের কয়েকজনের কবর আছে যা এখনো পরোক্ষভাবে দেখাশোনা করে বৃটিশ সরকার।
মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মারাত্মক সামরিক সংঘর্ষগুলো হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেটি ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু, সংক্ষেপে ডাবলিউ ডাবলিউ টু (WWII) নামে পরিচিত। এই যুদ্ধ সূচিত হয় সেপ্টেম্বর ১৯৩৯-এ এবং শেষ হয় ছয় বছর পরে আগস্ট ১৯৪৫-এ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মাসে আগস্ট ১৯৪৫-এ আমেরিকান প্লেন থেকে জাপানের দুটি শহর, হিরোশিমা ও নাগাসাকি-তে এটম বোমা ফেলা হয়। মুহূর্তের মধ্যে দুটি শহরই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। জাপান আত্মসমর্পণ করে।
এর মাস তিনেক আগে মে ১৯৪৫-এ জার্মানি আত্মসমর্পণ করেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ছয় কোটি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৬০ মিলিয়নের (ছয় কোটি) বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। সেটা ছিল তখনকার বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২.৫%-এর বেশি। এই মোট মৃতের সংখ্যা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার পর সারা বিশ্বে এখন সেটা স্বীকৃত। তবে কারো কারো মতে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ছয় কোটি থেকে আট কোটির মধ্যে।
উইকিপিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন এনসাইকোপিডিয়া এবং সামরিক ইতিহাসের বইতে এই সংখ্যার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। যেমন, কোন দেশের কতো মানুষ কোন যুদ্ধক্ষেত্রে কোন বছরে নিহত হয়েছিল। সেই সময়ে (১৯৩৯-১৯৪৫) এই উপমহাদেশ ছিল অবিভক্ত। আজকের ইনডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের যারা তখন নিহত হয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল ৮৭,০৩২।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের মধ্যে ২২ মিলিয়ন (দুই কোটি ২০ লক্ষ) থেকে ২৫ মিলিয়ন (দুই কোটি ৫০ লক্ষ) ছিল সামরিক ব্যক্তি।
নিহত বেসামরিক ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৩৮ মিলিয়ন (তিন কোটি ৮০ লক্ষ) থেকে ৫৫ মিলিয়ন (পাচ কোটি ৫০ লক্ষ)। নিহতদের মধ্যে অনেকে যুদ্ধজনিত রোগে এবং দুর্ভিক্ষে মারা যায়।
ছয় বছরে গণহত্যায় নিহত ষাট লক্ষ
বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে ইহুদি হত্যায় নিহতদের সংখ্যা সাধারণত বলা হয় ছয় মিলিয়নের (৬০ লক্ষ) বেশি। এই মৃত্যুর সংখ্যা বিভিন্নভাবে যাচাই করা হয়েছে। গবেষক মার্টিন গিলবার্টের হিসাব মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জার্মানি অধিকৃত ইউরোপে ৭.৩ মিলিয়ন বেশি ইহুদিদের মধ্যে ৫.৭ মিলিয়নের (৫৭ লক্ষ) বেশি ইহুদিকে বিভিন্নভাবে, বিশেষত বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে পাঠিয়ে হত্যা করা হয়।
লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়। অর্থাৎ, প্রায় ৭৮% শতাংশ ইওরোপিয়ান ইহুদিকে হত্যা করা হয়। এই কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইহুদিরা দলে দলে মিডল ইস্টে গিয়ে নতুন রাষ্ট্র ইসরেল প্রতিষ্ঠা করে এবং সেখানেই বসবাস শুরু করে। তবে মার্টিন গিলবার্টের সংগে ভিন্ন মত পোষণকারীরা হিসাব করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ছয় বছরে নিহত ইহুদিদের সংখ্যা ৪.৯ মিলিয়ন (৪৯ লক্ষ) থেকে ৬.০ মিলিয়নের (৬০ লক্ষ) মধ্যে।
পাইকারিভাবে এই ইহুদি হত্যা বা জেনোসাইড (Genocide) বা গণহত্যাকে বলা হয় হলোকস্ট (Holocaust)।
জার্মানিতে ইহুদি হত্যা করা হয়েছিল কেন সে বিষয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির হেরে যাওয়ার একটি কারণ অনেক জার্মান মনে করতো ইহুদিদের বিশ্বাসঘাতকতা। তারা মনে করতো ইহুদি জাতি একটা চক্রান্ত করেছে গোটা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রিত করার। ইসরেলি পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক ইয়েহুদা বয়ার মনে করেন জার্মানদের মধ্যে যারা নিজেদের আর্য জাতির রক্ষক বলে মনে করতো তারা চাইছিল ইহুদিদের এই আধিপত্য আকাক্সাকে পরাজিত করতেই হবে। এই মনোভাবের পরিণতিতে ১৯২০-এ জার্মানিতে নাৎসি (Nazi) পার্টির অভ্যুদয় হয় যার নেতা ছিলেন এডলফ হিটলার।
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কিন্তু স্বৈরাচারী শাসক
১৯৩২-এ সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নাৎসি পার্টি ক্ষমতাসীন হয়। এরপর খুব দ্রুত নাৎসি পার্টি সারা জার্মানিতে ত্রাসের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও হিটলার হন প্রকৃতপক্ষে এক স্বৈরাচারী শাসক। হিটলার হন জার্মানির চান্সেলর। হিটলার ইহুদি নিধনের সরাসরি নির্দেশ দেননি কিন্তু তিনি এই ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হবার প্রেরণা দিয়েছিলেন।
তার সহকর্মীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব এবং আধিপত্য রক্ষা করতে হলে ইহুদি জাতিকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করতেই হবে। এই লক্ষ্যে নাৎসি জার্মানি পরিকল্পিতভাবে ইহুদি হত্যা ও বিতাড়ন শুরু করে। (এই কর্মসূচিকে বলা হয় ফাইনাল সলিউশন অব দি জুইশ কোয়েশ্চেন বা ইহুদি সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান। ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন জার্মানি একের পর এক ৩৫টি ইওরোপিয়ান দেশ দখল করে তখন তারা সেই সব দেশের ইহুদিদেরও হত্যা করে।
ইহুদিদের ইংরেজিতে বলা হয় ঔবি এবং ইহুদি জাতিকে বলা হয ঔবরিংয বা জুইশ।
জার্মানিদের এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো, এমনকি শিক্ষায়তনগুলো। ইহুদিদের চাকরি থেকে ছাটাই করা হয়। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। স্কুল কলেজ থেকে বিদায় নেওয়া হয়। অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি যারা সৌভাগ্যবান ছিলেন তারা তখন অন্য দেশে প্রধানত, আমেরিকাতে পালিয়ে যান।
এদের অন্যতম ছিলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।
যুদ্ধ অপরাধী বিষয়ে সফল উপন্যাস দি অডেসা ফাইল
ইহুদি হত্যার জন্য প্রায় ১৫,০০০ এক্সটার্মিনেশন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের ধরে ট্রেন যোগে এসব ক্যাম্পে নেয়া হতো। তারপর ক্যাম্প থেকে তাদের নেয়া হতো বিশেষভাবে তৈরি গ্যাস চেম্বারগুলোতে। সেখান তাদের কাপড়জামা খুলে রাখা হতো।
তারপর গ্যাস চেম্বারে তাদের দাড় করিয়ে রাখা হতো এবং সিলিং থেকে গ্যাস ছেড়ে দেয়া হতো। বিশ্বের ইতিহাসে এমনভাবে গণহত্যার আর কোনো ঘটনা কখনো ঘটেনি।
শিন্ডলার্স লিস্ট (Schindler’s List) নামে একটি বিখ্যাত মুভিতে স্টিভেন স্পিলবার্গ এই ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের কিছুটা তুলে ধরেছেন। এই মুভিটি সবারই দেখা উচিত।
এর আগে ১৯৭২-এ বৃটিশ সাংবাদিক-লেখক ফ্রেডারিক ফরসাইথ (Frederick Forsyth) দি অডেসা ফাইল (The Odessa File) নামে একটি বেস্টসেলার ক্রাইম থৃলার লিখেছিলেন।
এই উপন্যাসটির মুভি রূপান্তর বক্স অফিস হিট হয়েছিল।
ইহুদি হত্যা বা হলোকস্ট বিষয়ে বহু গবেষণা হয়েছে। লেখালেখি হয়েছে। উপন্যাস রচিত হয়েছে ও মুভি নির্মিত হয়েছে। তবে আমার বিবেচনায় এই হত্যাকাণ্ড বিষয়ে বিশ্ববাসীকে সবচেয়ে বেশি সচেতন করেছে শিন্ডলার্স লিস্ট এবং দি অডেসা ফাইল।
রুদ্ধশ্বাসে দি অডেসা ফাইল পড়ার সময়ে আমার বারবার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে এ রকম একটা বই কেউ লিখলে জাতি উপকৃত হতো।
হয়তো ভবিষ্যতে সেটা কেউ লিখবেন। সেই অনাগত লেখককে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে দি অডেসা ফাইল-এর সংক্ষিপ্ত ভাষান্তরটি প্রকাশ করেছে মৌচাকে ঢিল।
এখানে বলা উচিত ১৯৭১-এ বাংলাদেশের অধিকাংশ কবি-লেখক-ঔপন্যাসিক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেননি। কারণ যাই হোক না কেন।
আর তার ফলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও সত্য ঘটনাভিত্তিক উপন্যাস বাংলাদেশে আজো নেই বললেই চলে। অথচ বিশ্ব পৌরাণিক কাহিনী এবং সাহিত্যে অনেক অমর সৃষ্টি হয়েছে যুদ্ধভিত্তিক। যেমন, রামায়ণ ও মহাভারত। মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু। লিও টলস্টয়ের ওয়ার অ্যান্ড পিস (War and Peace), আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ফর হুম দি বেল টোলস (For Whom the Bell Tolls), জেমস জোনসের ফ্রম হিয়ার টু ইটারনিটি (From Here to Eternity), ফ্রেডারিক ফরসাইথের দি অডেসা ফাইল (১৯৭২)।
মুভিতে স্টিভেন স্পিলবার্গের শিল্ডলার্স লিস্ট (১৯৯৩, লেখক আর্নেস্ট টমাস কিনেলি)।
রিসার্চের বিকল্প নেই
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং যুদ্ধের সময়ে (১৯৩৯-১৯৪৫) জার্মানির নাৎসি পার্টি নিজেদের দেশে এবং ইওরোপে অধিকৃত অন্যান্য দেশে প্রায় ছয় মিলিয়ন (ষাট লাখ ) ইহুদি হত্যা করেছিল। মৃতের এই সংখ্যাটি কোনো কাল্পনিক সংখ্যা অথবা কোনো অনুমাননির্ভর তাৎক্ষণিক সংখ্যা নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পরক্ষণ থেকেই বেসামরিক এবং সামরিক ঐতিহাসিকেরা বিভিন্ন তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অস্টৃয়ার সাইমন ওয়েজেনথাল।
আমৃত্যু তিনি চেষ্টা করে যান যুদ্ধ অপরাধী কারা ছিল সেটা প্রতিষ্ঠা করতে এবং তারা কোথায় আত্মগোপন করে আছে সেটা প্রকাশ করতে। যুদ্ধ অপরাধীদের বিরুদ্ধে সমাজ সচেতনতা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে আরো সহায়ক হন ফ্রেডারিক ফরসাইথের মতো লেখক-ঔপন্যাসিকেরা।
দি অডেসা ফাইল একটি সুদীর্ঘ উপন্যাস (পকেট বুক সাইজে পৃষ্ঠা ৩১৬)। মৌচাকে ঢিল ঈদসংখ্যার ১২৮ পৃষ্ঠাতে এই বইয়ের পূর্ণ অনুবাদ সম্ভব নয়। গণহত্যার নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতা এবং অমানবিকতা ও ভয়াবহতা।
এই সংক্ষিপ্ত ভাষান্তরে পাঠকরা আংশিকভাবে হলেও বুঝতে পারবেন। তারা এটাও নিশ্চয়ই বুঝবেন প্রকৃত ইতিহাস জানতে ও জানাতে গবেষণা ও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। রুদ্ধশ্বাসে দি অডেসা ফাইল পড়ার সময়ে আমার বারবার মনে হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে এ রকম একটা বই কেউ লিখলে জাতি উপকৃত হতো।
ফেব্রুয়ারি ২০১৩-তে শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বে এখানেই ছিল বিশাল ঘাটতি ও প্রচণ্ড ব্যর্থতা। এই আন্দোলনকারীরা দণ্ডিত অপরাধীদের (যারা অলরেডি জেলে তাদের) আরো গুরুদণ্ডের দাবি চেয়ে নিজেদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধারূপে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
শাহবাগীরা পড়াশোনা ও রিসার্চ নয়Ñ গলাবাজি ও টিভিক্যামেরাবাজি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সমর্থন, সরকারি দল আওয়ামী লীগের দলগত পৃষ্ঠপোষকতা, কিছু বুদ্ধিজীবীদের প্রশংসা এবং আওয়ামী সরকার অনুগত প্রথম আলো, স্টার, সমকাল, কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক প্রভৃতি দৈনিক পত্রিকা এবং সকল প্রধান টিভি স্টেশনের (দিগন্ত বাদে) খাবার-পানীয় অন্যান্য সহায়তার ফলে শাহবাগীরা মাস দুয়েক এদের সম্মিলিত প্রশ্রয়ে নিজেদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী রূপে আত্মপ্রসাদে ভোগেন। এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধারা কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে রাইফেল নিয়ে লড়াই নয়Ñ জনক্ষেত্রে মাইক নিয়ে বড়াই করেন, প্রতিপক্ষ কোনো যোদ্ধার বিরুদ্ধে নয় Ñ জেলবন্দিদের বিরুদ্ধে! এই দুই মাস ধরে রাজধানী ঢাকায় অতিরিক্ত যানজট এবং দেশের দুটি প্রধান হসপিটালের (বারডেম ও পিজি) শতশত কর্মী ও হাজার হাজার রোগীরা হন ভুক্তভোগী। কিন্তু তারপর ইন্টারনেট, ইনকিলাব এবং আমার দেশের রিপোর্টে এই আন্দোলনকারীদের অন্তঃসারশূন্যতা প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ে।
ট্রেড লাইসেন্স মুক্তিযুদ্ধ, রিনিউয়াল ফি যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার
দেশের সাধারণ মানুষের কাছে মনে হয় শাহবাগীদের সমর্থনকারীদের মতোই মুক্তিযুদ্ধ এখন হয়েছে ট্রেড লাইসেন্স, যে লাইসেন্স দেখিয়ে ক্ষমতা ভোগ করা যায় এবং যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার হয়েছে ওই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার প্রক্রিয়া মাত্র। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইবুনালÑএর মধ্যে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটির ব্যবহার থেকে শুরু করে একজন দলবাজ বিচারপতির স্কাইপ সংলাপ প্রকাশিত হবার পর দেশে এবং বিদেশে গোটা যুদ্ধ অপরাধ বিচারপ্রক্রিয়া হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। এতে লাভবান হয়েছে প্রকৃত যুদ্ধ অপরাধীরা। তারা পরিত্রাণের পথ খুজে পাচ্ছে।
এই ব্যর্থতার বিপরীতে বিবেচনা করুন দি অডেসা ফাইল-এর মতো উপন্যাসের আন্তর্জাতিক এবং স্থায়ী সাফল্য।
সুতরাং সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের জন্য প্রকৃত সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রবন্ধ এবং কালজয়ী সাহিত্য সৃষ্টি করতে হলে প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। আর সেই ইতিহাস জানতে হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে দেশে-বিদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন বই পড়তে হবে এবং অবশ্যই প্রচুর রিসার্চ করতে হবেÑ ঠিক ফ্রেডারিক ফরসাইথের মতোই।
মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ অপরাধ বিষয়ে লেখালেখি করতে হলে নতুন প্রজন্মের লেখকদের নির্মোহ এবং তথ্যসমৃদ্ধ হতে হবে।
দি অডেসা ফাইল : লেখকের ভূমিকা
দি অডেসা ফাইল-এর ভূমিকায় ফরসাইথ জানিয়েছেন বইটি লেখার পেছনের কাহিনী।
অডেসা নামে দক্ষিণ রাশিয়াতে একটি শহর আছে। একই নামে আমেরিকাতেও একটি ছোট শহর আছে। কিন্তু এই লেখার শিরোনাম সেখান থেকে আসেনি। এই শিরোনাম অডেসা (ODESSA) একটি জার্মান সংস্থার নামের ছয়টি আদ্যক্ষর থেকে এসেছে। সংস্থাটির নাম Organisation Der Ehemaligen SS-Angehorigen ।
ইংরেজিতে এর মানে Organisation of Former Members of SS । বাংলায় এসএস-এর প্রাক্তন সদস্যদের সংস্থা।
অর্থাৎ, অডেসা হলো গোপন গোয়েন্দা বিভাগের প্রাক্তন সদস্যদের সংগঠন বা সংস্থা।
এসএস ছিল জার্মান আর্মির মধ্যে আরেকটি আর্মি। এটা বানিয়েছিলেন এডলফ হিটলার।
এর কমান্ডার ছিলেন হাইনরিখ হিমলার। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত নাৎসিরা জার্মানি শাসন করে। সেই সময়ে বিশেষ কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়নে এসএস-কে দায়িত্ব দেয়া হতো। বলা হয়েছিল এই বিশেষ কর্মসূচি ছিল জার্মানিকে রক্ষা করা। কিন্তু কার্যতঃ তাদের দায়িত্ব ছিল জার্মানি এবং ইউরোপ থেকে (হিটলারের মতে), যারা বেচে থাকার উপযুক্ত নয়, তাদের নিশ্চিহ্ন করা এবং প্রতিটি ইহুদি নারী, পুরুষ ও শিশুকে মেরে ফেলা।
এই কাজগুলো করতে গিয়ে এসএস প্রায় ১৪ মিলিয়ন (এক কোটি ৪০ লক্ষ) মানুষকে হত্যা করে। এর মধ্যে ছিল ৬ মিলিয়ন (৬০ লক্ষ) ইহুদি, ৫ মিলিয়ন (৫০ লক্ষ) রাশিয়ান, ২ মিলিয়ন (২০ লক্ষ) পোলিশ বা পোল্যান্ডের অধিবাসী, ৫০ লক্ষ জিপসি এবং অন্যান্য ৫০ লক্ষ। এই অন্যদের মধ্যে ছিল (যদিও তাদের কথা তেমন বলা হয় না) প্রায় দুই লক্ষ জার্মান ও অস্টৃয়ান যারা ইহুদি ছিল না। জার্মানরা এদের মনে করতো রাষ্ট্রদ্রোহী এবং প্রধানত এরা ছিলেন কমিউনিস্ট, সোশাল-ডেমক্রেট, লিবারাল, সম্পাদক, রিপোর্টার ও ধর্মযাজক যারা বিবেকের তাড়নায় সাহস করে হিটলারের সমালোচনা করেছিলেন। এদের মধ্যে আরো ছিলেন হিটলারেরই সামরিক অফিসার যাদের সন্দেহ করা হয়েছিল হিটলার-বিরোধী রূপে।
এসএস-এর দুই আদ্যক্ষর ঝঝ আকা হতো জোড়া বিদ্যুতপ্রবাহের মতো। বিশ্ব ইতিহাসে সবচাইতে অমানবিক ও সবচাইতে নিষ্ঠুর একটি সংস্থার প্রতীক হয়ে আছে এই দুই আদ্যক্ষর।
যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার আগেই এসএসের সিনিয়র সদস্যরা বুঝতে পেরেছিলেন জার্মানি হেরে গিয়েছে এবং ভবিষ্যতে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। দণ্ডিত হয়ে শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই তারা ছদ্মবেশে এবং ছদ্মনামে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকেন বিদেশে।
প্রধানত সাউথ আমেরিকায়। তারা সঙ্গে নিয়ে যান বিশাল পরিমাণে সোনা এবং বিভিন্ন দেশে খোলেন গোপন ব্যাংক একাউন্ট। চূড়ান্তপর্যায়ে যখন মিত্রবাহিনী জার্মানিতে ঢোকে তখন অধিকাংশ হত্যাকারীই পালিয়ে গিয়েছিল।
যে সংগঠনটি তাদের পালানোর ব্যবস্থা করেছিল তার নাম ছিল অডেসা। হত্যাকারীরা স্বদেশে পলাতক থেকে অথবা বিদেশে নির্বাসিত থেকে অডেসা সংগঠনটি পরিচালনা করত।
অডেসার পাচটি লক্ষ্য ছিল : এক. ১৯৪৯-র মধ্যে মিত্রবাহিনী যে নতুন ফেডারাল রিপাবলিক (তখন পশ্চিম জার্মানি নামে পরিচিত) গঠন করেছিল তার মধ্যে যতোজন সম্ভব এসএস ব্যক্তিকে ঢুকিয়ে দেওয়া। দুই. রাজনৈতিক দলগুলোর নিচের স্তরে অনুপ্রবেশ করা। তিন. আদালতে কোনো এসএস ব্যক্তির বিচার হলে তার উকিল নিয়োগ ও মামলা পরিচালনার খরচ মেটানো এবং সাবেক এসএস অফিসারদের বিচারের সকল প্রক্রিয়াকে সর্বতোভাবে বাধা দেওয়া ও বিলম্বিত করা। চার. ১৯৪৫-এর পরে জার্মানির যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয় তার সুবিধা নিয়ে শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্রে এসএস স্টাফদের ছদ্মপরিচয়ে পুনর্বাসিত করা। এবং পাচ. জার্মানির সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন প্রপাগাণ্ডার মাধ্যমে বোঝানো যে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে স্বদেশপ্রেমিক সৈন্যরা তাদের ওপর দেয়া দায়িত্ব পালন করেছিল এবং এখন তাদের হয়রানি ও বিচার করা অন্যায়, অনুচিত।
এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অডেসা অনেক টাকা পেয়েছে। জার্মান সরকার চেষ্টা করেছে অডেসাকে অক্ষম করতে। কিন্তু পারেনি। অডেসা নতুন নামে নতুন ভাবে কাজ চালিয়ে গেছে। তাই অধিকাংশ জার্মান মনে করে অডেসার কোনো অস্তিত্ব নেই।
কিন্তু বাস্তবটা হচ্ছে এই যে, অডেসা আছে।
তবে অডেসা বহু ক্ষেত্রে সফল হলেও মাঝে মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে।
১৯৬৪-র গোড়ার দিকে বন (Bonn)-এ (তখনকার পশ্চিম জার্মানির রাজধানী) বিচার মন্ত্রণালয়ে এক প্যাকেট ডকুমেন্ট এসে পৌছায়। এই প্যাকেট কারা পাঠিয়েছে সেটা জানা যায় না। কারণ সেখানে কোনো নাম-ঠিকানা ছিল না।
এই প্যাকেটের মধ্যে ছিল একটা লিস্ট এবং সেখানে ছিল এসএসের সাবেক স্টাফদের নাম। এই লিস্ট দেখেছিলেন গুটি কয়েক সরকারি কর্মচারী। তারা এই প্যাকেটের নাম দিয়েছিলেন ‘দি অডেসা ফাইল’।
একটি বই লিখতে, বিশেষত একটি জটিল বিষয়ের ওপর এবং তার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে যারা সাহায্য করেন সাধারণত লেখক তাদের ধন্যবাদ জানান। আমি আমার হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে সাহায্যকারীদের।
কিন্তু তিনটি কারণে আমি তাদের নাম করছি না।
এক. এসএসের সাবেক সদস্যরা আমার সঙ্গে কথা বলার সময়ে জানতেন না আমার প্রকৃত পরিচয়। তারা জানতেন না যে তাদের বক্তব্য ও তথ্য একটি বইতে ব্যবহৃত হবে।
দুই. অনেকে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেন, এসএস সম্পর্কিত তথ্যসূত্র যে তারা, এটা যেন কখনোই প্রকাশিত না হয়।
তিন. আর যারা কিছুই বলেননি তাদের নামগুলোও আমি গোপন রেখেছি তাদেরই নিরাপত্তার স্বার্থে।
ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং থেকে ইনভেস্টিগেটিভ উপন্যাস
যুদ্ধ অপরাধীদের খুজে বের করা এবং তাদের সম্পর্কে লেখার দুঃসাধ্য কাজটি কি ভাবে সম্ভব সেটা জানতে হলে ফ্রেডারিক ফরসাইথ সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম কে জানতে হবে।
ফ্রেডারিক ফরসাইথের জন্ম হয়েছিল দক্ষিণ ইংল্যান্ডে অ্যাশফোর্ড শহরে। তার বাবা ছিলেন চামড়ার ব্যবসায়ী। স্পেনের ইউনিভার্সিটি অফ গ্রানাডা-তে পড়াশোনার পর তিনি বৃটেনের রয়াল এয়ার ফোর্সে যোগ দিয়ে জেট ফাইটার পাইলট হন। এরপর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।
১৯৬১-তে তিনি রয়টার্সে যোগ দেন। তারপর ১৯৬৫-তে তিনি বিবিসিতে যোগ দেন।
বিবিসির পক্ষে তিনি প্রথমে ফ্রান্সের খবর এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট চার্লস ডি গল-কে হত্যা প্রচেষ্টার খবর কভার করেন। এরপর তিনি বিবিসি সংবাদদাতা রূপে নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ কভার করতে আফৃকায় যান। ১৯৬৭-তে প্রথম ছয় মাস তিনি সেখানে থাকেন এবং তার পরেও সেখান থেকে রিপোর্টিং করে যেতে চান।
বিবিসি এতে রাজি হয় না। এর কারণ ছিল এই গৃহযুদ্ধে বৃটিশ সরকার পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছিল এবং এতে বৃটিশ সরকারের কূটনৈতিক ও সামরিক ব্যর্থতা বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশ পাচ্ছিল। বিবিসি (যে সংস্থাটি বৃটিশ সরকারের অনুদানে চলে) তখন ফ্রেডারিক ফরসাইথকে আফৃকা থেকে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনতে চায়। বিবিসির এই সিদ্ধান্তে ফরসাইথ প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীকালে তিনি লেখেন : ‘সেই সময়ে বিবিসি খোলাখুলিভাবে আমাকে জানিয়ে দিল, এই যুদ্ধটা কভার করা আমাদের পলিসি নয়।
তখন ভিয়েতনাম যুদ্ধ প্রতিদিনই ফ্রন্ট পেইজ হেডলাইনে থাকতো এবং ধারণা করা হতো আমেরিকানরা সেখানে বিশাল ভুল করছে। এরই পাশাপাশি নাইজেরিয়াতে বৃটিশরা যে ভুল করছিল সেটা প্রকাশে বিবিসি ইচ্ছুক ছিল না। আমি বুঝতে পারি “নিউজ ম্যানেজমেন্ট†হচ্ছে। অর্থাৎ নিজের সুবিধা অনুযায়ী নিউজ ম্যানেজ করা হচ্ছে। আমি নিউজ ম্যানেজমেন্ট পছন্দ করি না।
তাই আমি নিজের কাছেই শপথ করি, জেন্টলমেন, তোমরা (বিবিসি) এই যুদ্ধটা কভার না করতে পারো, কিন্তু আমি কভার করবো। তাই আমি বিবিসির চাকরি ছেড়ে দেই এবং পরবর্তী দুই বছরের অধিকাংশ সময় আফৃকাতে থেকে যাই। ’
বিবিসির চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি ফৃলান্স রিপোর্টার রূপে আফৃকায় বায়াফ্রা-তে ফিরে যান এবং ১৯৬৯-তে তার প্রথম বই দি বায়াফ্রা স্টোরি প্রকাশ করেন।
জার্নালিজমে যে টেকনিক ফরসাইথ প্রয়োগ করেছিলেন সেই একই টেকনিকে তিনি উপন্যাস লিখতে মনস্থির করেন। ১৯৭১-এ তার প্রথম উপন্যাস দি ডে অব দি জ্যাকল (The Day of the Jackal) প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার হয়।
বছরের সেরা উপন্যাস রূপে বিবেচিত হওয়ায় ফরসাইথ পান এডগার অ্যালেন পো এওয়ার্ড। এই উপন্যাসের মূল বিষয় হচ্ছে একটি সত্য ঘটনা তদানীন্তন ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট চার্লস ডি গল-কে একজন ভাড়াটে খুনির হত্যাপ্রচেষ্টা। পরবর্তীকালে এই উপন্যাসটি মুভিতে রূপান্তরিত হয়।
পরের বছরেই ১৯৭২-এ ফরসাইথের দ্বিতীয় উপন্যাস দি অডেসা ফাইল প্রকাশিত হয় এবং এটাও বেস্টসেলার হয়। এই উপন্যাসের মূল বিষয় হচ্ছে একজন নাৎসি খুনিকে ধরার জন্য একজন রিপোর্টারের প্রচেষ্টা।
এটি সফল মুভিতে রূপান্তরিত হয়।
ফরসাইথের তৃতীয় উপন্যাস দি ডগস অব ওয়ার (The Dogs of War) প্রকাশিত হয় ১৯৭৪-এ। এই উপন্যাসের পটভূমিকা হচ্ছে আফৃকার একটি দেশ যেখানে এক বৃটিশ ব্যবসায়ী চেষ্টা করছেন ভাড়াটে সৈন্য নিয়োগ করে দুর্বল আফৃকান সরকারের পতন ঘটাতে। এই উপন্যাসটিও মুভিতে রূপান্তরিত হয়।
এরপর ফরসাইথ আরো নয়টি উপন্যাস লেখেন যার মধ্যে দি ফোর্থ প্রটোকল মুভিতে রূপান্তরিত হয়।
এ ছাড়া তার গল্পের তিনটি সঙ্কলন প্রকাশিত হয়। দেয়ার আর নো স্নেইকস ইন আয়ারল্যান্ড (আয়ারল্যান্ডে কোনো সাপ নেই) গল্পটির জন্য ফরসাইথ দ্বিতীয়বার এডগার অ্যালেন পো এওয়ার্ড পান। এ ছাড়া ফরসাইথ প্রায় প্রতি সপ্তাহে ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি এক্সপ্রেস-এ কলাম লেখেন।
রিসার্চ, ফ্যাক্টস ও ইনফর্মেশন
ফ্রেডারিক ফরসাইথের লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অত্যন্ত সাবধানী অনুসন্ধান। রিসার্চে তিনি প্রচুর শ্রম ও সময় খরচ করেন।
তার প্রতিটি উপন্যাস ও গল্পে অনেক ফ্যাক্টস এবং ইনফর্মেশন পাওয়া যায়। মানিলন্ডারিং, অস্ত্র চোরাচালান, পাসপোর্ট জালিয়াতি, সন্ত্রাস, ড্রাগস, ভাড়াটে খুনি, ডিপ্লম্যাট, বিজনেসম্যান, পলিটিশিয়ান, প্রভৃতি তার লেখার প্রধান উপাদান। তার বই পড়লে মনে হবে উপন্যাস কর্মে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। ফ্রেডারিক ফরসাইথের লেখায় বারবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার মতে এই পৃথিবীতে শুধু দুই ধরনের মানুষ আছে, এক যারা শিকারি এবং দুই. যারা শিকার। এদের মধ্যে যে শক্তিশালী কেবল সে-ই বেচে যায়।
দি অডেসা ফাইলের এই ভাষান্তর সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্যে বহু ফ্যাক্টস ও ইনফর্মেশন এবং সাবপ্লট ও ইতিহাস বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে পাঠকেরা বঞ্চিত হবেন ফরসাইথের লেখার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য থেকে। যারা ফরসাইথের লেখার রিয়াল টেস্ট চান তারা তার অরিজিনাল ইংরেজি বইগুলো পড়তে পারেন ইন্টারনেটে।
বিবিসির নিউজ ম্যানেজমেন্ট
বিবিসি সম্পর্কে ফরসাইথের মতামতের সঙ্গে অনেকেই একাত্মতা প্রকাশ করবেন। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঘটনা বিষয়ে বিবিসি একপেশে মতামত প্রচার করে সমালোচিত হয়েছে।
সর্বশেষ একটি ঘটনা হলো, সাভারে রানা প্লাজায় ২৪ এপৃল ২০১৩-তে দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর গার্মেন্টস কর্মী রেশমার ‘অলৌকিক’ উদ্ধারের সংবাদ।
বিবিসি সেটা বিস্তারিতভাবে প্রচার করলেও ৩০ জুন ২০১৩-তে লন্ডনের দুটি বহুল প্রচারিত পত্রিকা মেইল এবং মিরর যখন সেটা ভুয়া আখ্যায়িত করে রিপোর্ট ছাপে তখন বিবিসি তার ভুল স্বীকার করতে ব্যর্থ হয়। অনেকের মতে বিবিসি এখন বাংলাদেশে হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য (ফরসাইথের ভাষায়) নিউজ ম্যানেজমেন্টে লিপ্ত হয়েছে। তবে বিবিসি বাংলা বিভাগের কেউ ফরসাইথের মতো পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়নি।
২৭ জুলাই ২০১৩
শফিক রেহমান, বিবিসির সাবেক কর্মী (১৯৫৭-১৯৯১) এবং লন্ডনে বহুভাষাভিত্তিক স্পেকট্রাম রেডিও-র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও (১৯৮৭-১৯৯২), দি অডেসা ফাইল-এর সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ঈদসংখ্যা মৌচাকে ঢিল-এ প্রকাশ করেছেন।
- সম্পাদক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।