ে
স্বপ্নের ভূস্বর্গ কাশ্মীর
কাশ্মীর। প্রকৃতির এত বিচিত্র স্বাদের অলঙ্কার যেন মানায় এই ভূস্বর্গকেই। কাশ্মীর মানেই অভিজ্ঞতা। স্মৃতিমেদুরতা। গল্পকথা।
নীলিমায় নীল পাহাড়ের কোলে উইলো চিনার আর পপলারের দেশে বেড়াবার আদর্শ সময় মার্চের শেষ থেকে অক্টোবর মাস। এদিকে এপ্রিল ও মে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসেও বেড়ানো যেতে পারে। শীতে তাপমাত্রা থাকে ০.৯ থেকে ১২.১০ সেন্টিগ্রেড আর অন্যান্য সময় ১৩.৭০ থেকে ২৭ সেন্টিগ্রেড। মে-জুনে সাধারণ সোয়েটার, জ্যাকেট, চাদর হলে চলে।
মওসুমে অন্যান্য সময়ে মাঝারি উলেন আর শীতের সময় অবশ্যই ভারী সোয়েটার বা জ্যাকেট, ওভারকোট ইত্যাদি দরকার হয় ভূ-স্বর্গ দর্শনে।
http://www.mnabd.com/press/?p=164
জম্মু, কাশ্মীর মোটামুটি ১৭-১৮ দিন অবসর থাকলে ঘুরে আসতে পারেন। শ্রীনগর, পহেলগাঁও, গুলমার্গ, সোনমার্গ ও কাটরা। এর সাথে আরও ১০-১১ দিন সময় নিয়ে ঘুরতে পারেন ডালহৌসি, অমৃতসর, মানালী, কুলু, হিমাচল ও পাঞ্জাব। মোটের পর এক মাসের লম্বা ছুটি বা অবসর থাকলে আপনার এই বেড়ানোটা হবে উপভোগ্য এবং সাশ্রয়ী।
কেননা এই পর্যটন কেন্দ্রগুলো প্রত্যেকটি আলাদা আলাদাভাবে নয়নাভিরাম। এক ট্যুরেই যদি এই নয়নাভিরাম পর্যটনকেন্দ্র গুলো দেখে ফেলতে পারেন তাহলে মন্দ কি। যে কথা না বললেই নয় তাহলো এই একমাসের ট্যুরে ১২ থেকে ১৩ দিন চলে যাবে শুধু পথ চলতেই। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় আপনার এই পথ চলা হবে আনন্দের। দীর্ঘ এই পথ চলতে চলতে দু’চোখ ভরে উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য।
প্রথমে পাসপোর্ট ভিসা কমপ্লিট করুন। এরপর শীত ঠেকাতে পর্যাপ্ত গরম ও মোটা কাপড় ব্যাগে ভরে নিন। সাথে নিন হাজার চল্লিশেক টাকা। অবশ্য চার/পাঁচ জন একসাথে গেলে জনপ্রতি পয়ত্রিশ হাজার টাকা হলেই হবে।
দিন তারিখ ঠিক করে রওনা দেয়ার আগে ঢাকা থেকে কলকাতাগামী বাসের টিকিট করুন।
ঢাকার কমলাপুর থেকে প্রতিদিন বিআরটিসির দু’টো এসি স্যালুন বাস সরাসরি কলকাতায় যাতায়াত করে। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন অনেক সুপার স্যালুন এসি বাস বেনাপোল পর্যন্ত যায়। সেখান থেকে কলকাতার দূরত্ব ৭০/৭৫ কিলোমিটার। সীমান্তে দু’দেশের কাস্টমস ও ইমিগ্রেন্টের কাজ শেষে চলে যান কলকাতায়।
কলকাতা পৌঁছে ট্রেনে হিমগিরিতে যাওয়াই সমীচীন।
সপ্তাহে তিনদিন ট্রেন। মঙ্গল, শুক্র ও শনিবার হাওড়া থেকে ছাড়ে রাত সাড়ে এগারোটায়। প্রতিদিন শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস। দিল্লি হয়েও যাওয়া যায় কাশ্মীর। দিল্লি পৌঁছে রাত সাড়ে এগারোটায় পাওয়া যাবে জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেস।
সেই ট্রেন পৌঁছবে সকাল আটটা নাগাদ।
হিমগিরি ও জম্মু-তাওয়াই এক্সপ্রেসে দু’রাত কাটিয়ে তৃতীয় দিন সন্ধ্যের মুখে পৌঁছে যাবেন জম্মু। রেল স্টেশন থেকে রঘুনাথজির মন্দির বেশি দূরে নয়। মন্দির থেকে একটু এগোলেই জম্মু-কাশ্মীর ট্যুরিজমের ট্যুরিস্ট লজ। বাস স্ট্যান্ডের উপরে রয়েছে যাত্রিনিবাস।
প্রয়োজনেও সেখানেও থাকা যাবে। ইচ্ছে করলে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দুরত্বের কাটরা গিয়ে বৈষ্ণোদেবী দর্শন করতে পারেন। মন না চাইলে জম্মু-শ্রীনগর ১এ ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে চলে যেতে পারেন প্রায় একশো কিলোমিটার দূরের পাটনিটপ-এ। এখানে অবশ্য বাস যাবে না। যেতে হবে ট্যাক্সিতে।
ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্সেই রয়েছে ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের অফিস। সুতরাং গাড়ি পেতে কোনও অসুবিধা নেই। পাটনিটপ হয়ে শ্রীনগর যেতে পাঁচজনের জন্য ট্যাক্সি ভাড়া প্রায় আড়াই হাজার টাকা। একদিনের হল্টসমেত।
ন্যাশনাল হাইওয়ের উপরেই দেওদার গাছের ছাওয়ায় পাটনিটপ।
সুন্দর সুন্দর লগ হাউস, কটেজ, রেস্ট হাউস রয়েছে ট্যুরিজমের। রয়েছে কিছু প্রাইভেট হোটেলও। ঘণ্টা চারেক সময় লাগে গাড়িতে জম্মু থেকে পাটনিটপে আসতে। ভাড়া প্রায় তেরোশো টাকা। দেওদার গাছের জঙ্গলে সেরা পাটনিটপ একদিনের জন্য মন্দ লাগবে না।
পাটনিটপ দেখে শ্রীনগর ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে এবার কাশ্মীরের পথে। তার আগে পর্যন্ত জম্মু। বানিহাল টানেল কাশ্মীরের সঙ্গে আশ্চর্য যোগসেতু। প্রায় সোয়া দু-কিলোমিটার এই টানেল। টানেলের আগে রয়েছে বেশ কিছু অ্যাভালেঞ্চ জোন।
মনে রাখবেন ভ্রমনের সময় অথবা রাজনৈতিক আলোচনা বা কাশ্মীরের ইদানিং সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা না বলাই সমীচীন। রাস্তায় যাতে পাথর না পড়ে তার জন্য বিশেষ সতর্কতা। সতর্কতা রয়েছে আরও- পাহারাদারের দল, চেকিং। যে কারণে পরিচয়পত্র সব সময়ে সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। সেই পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে অন্ধকারের এক অনন্তযাত্রা বানিহাল টানেল বা জওহর টানেল পাড়ি।
যাত্রা শেষে হঠাৎই যেন আশ্চর্য এক সবুজের সাক্ষাৎ- কাশ্মীর। সবুজে সবুজে উদ্ভাসিত কাশ্মীর। অবন্তীপুর, অনন্তনাগ। সাড়া জাগানো নাম। উগ্রপন্থীদের কাজকর্মের শিহরণের স্থান।
কিন্তু এখন শান্তি। কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতার চিহ্ন নেই। পপলার, উইলো গাছের সারিবদ্ধ রাস্তা সবুজ শস্যখেত। মাঝে মধ্যে ঘোড়ার গাড়িতে পথচলা মানুষজন। সবুজ গাছের ফাঁকে নীল আকাশ।
দূরে রুক্ষ পাহাড়, নিশ্চুপ উপত্যাকা। আর মাইলের পর মাইল পাহাড় টপকেই যেন হঠাৎ কাশ্মীর। রোম্যান্টিক স্বপ্নের ভূস্বর্গ। স্বপ্নরাজ্য। শ্রীনগরের জীবনযাত্রা এখন স্বাভাবিক।
কোথাও কোনও অস্বস্তির চিহ্ন নেই। চতুর্দিকে স্বাভাবিক মানুষজন। তবে এখনও পুরোদস্তুর হোটেল খোলেনি। আস্তে আস্তে খুলছে। ফলে থাকবার সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্যবস্থা হাউসবোট।
সেই হাউসবোটে থেকেই উপভোগ করা যায় ভূস্বর্গ কাশ্মীর। একদিকে পিরপাঞ্জাল গিরিশৃঙ্গ, অন্যদিকে কারাকোরাম নাঙ্গা পর্যন্ত। আর তার আড়ালে কাশ্মীর। গোলাপি, সাদা রঙের সরষে আর পপি ফুলে সারা গ্রীষ্ম ঝলমল করে সমগ্র উপত্যাকা। জাফরান চিনারের রং বদলানো।
আর শীতে তো রয়েছেই বরফ চাদরে মোড়া সারা উপত্যাকা।
বাস জম্মু থেকে শ্রীনগর পৌঁছায় বিকেল নাগাদ। সরকারি বাস স্ট্যান্ডের পাশে ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার। সেখান থেকেই হাসউবোট, হোটেলের খোঁজ পাওয়া যায়। নয়তো সোজা চলে যান ডাল লেক।
শিকারা চেপে লেকে পৌঁছে পছন্দ মতো হাউসবোট খুঁজে নেওয়া যায়।
রয়েছে বিউটি স্টার গ্রুপের হাউসবোট, এথেনা হাউসবোট, ফ্লাওয়ার গার্ডেন হাউসবোট-এর মতো আরও নানা নামের হাউসবোট। এলাহি ব্যাপার সেই সমস্ত বোটে। বারান্দা, ড্রইংরুম, ডাইনিং রুম, বেডরুম। কাশ্মীরি কার্পেটে মোড়া।
সুদৃশ্য পরদা, রুমহিটার, ফ্রিজ- আয়েস-আয়োজনের কোনও ত্রুটি নেই। বিস্মিত হতে হয় বোটের ব্যবস্থা দেখে। দু’জনের থাকা-খাওয়া সমেত বোটের ডিলাক্স রুমের ভাড়া দিনপ্রতি ৮০০ টাকা। এক একটা হাউসবোটে ঘর রয়েছে চারটে। তবে বারান্দা, ড্রয়িংরুম, ডাইনিং রুম কমন।
কিন্তু তা সত্ত্বেও যেন রাজসিক আয়োজন। আপ্যায়ন।
জম্মু কাশ্মীর ভ্রমণ করার উল্লেখযোগ্য স্থান সমূহ যেমন জম্মুতে রামনগর দূর্গ, ডোগরা আর্ট মিউজিয়াম, অমর মহল প্রাসাদ, রঘুনাথজির মন্দির, কিংবা বৈষ্ণোদেবী মন্দির, গুহামন্দির, বিয়াসী, আখনূর ফোর্ট, বারমুলা, উধমপুর-কুদ, পাটনিটপ, বাটোট, ভাদরওয়া, বাসুকি কুণ্ড, কিস্তরওয়ার, বানিহাল ট্যানেল, জহুহর ট্যানেল এবং ভেরিনাগ, শ্রীনগর, ঢাললেক, নেহেরু পার্ক, চারু চিনার, কবুতরখানা, হরি পর্বত, হরওয়ান, গাগরিবাল পার্ক, চশমাশাহী, পরিমহল, নিশাতবাগ, শালিমার বাগ, নাসিমবাগ, হজরতবাল মসজিদ, শাহহামচান মসজিদ, জুম্মা মসজিদ, বাদশাহ শঙ্করচার্য মন্দির, গুলমার্গ, খিলেন মার্গ ও গৌরি মার্গ, আলপাথার লেক, নিঙ্গেল নালা, লিয়েন মার্গ, ফিরোজপুর নালা, কণ্টার নাগ, তোষ ময়দান, বারারেশি আহার বল, পহেলগাঁও, পামপুর, অবন্তিপুর, খানাবল, অনন্তনাগ, আচ্ছাবল, কোকর নাগ, ঢাকসুম, ভাবন, বৈশরণ, তুলিয়ান লেক, আরু, তাসরস, সোনামার্গ ইত্যাদি। আবার অমরনাথ, চন্দকাবাড়ী, শেষ নাগ, পঞ্চতরণী, হয়ে আবার পহেল গাঁও যাওয়ার জন্য ৩ দিনের যাত্রার পথ। লাদাগ থেকে সোনমার্গ হয়ে জোজিলা, বালতাল, গিরিমার্গ যাওয়া যেতে পারে এবং আরো জায়গার নাম যেখানে পর্যটকরা যায় যেমন উলার ক্ষীরভবানি, গন্ধরবল, খাজিয়ার, হীমবাহ, বিসনসর লেক, কৃষ্ণসর লেক, দহিগাঁও, যুসমার্গ, চারার-ই শরিফ, হেমিস গুল্ফা, স্টক প্যালেস, থিকসে গুল্ফা, শঙ্কর গুল্ফা প্রভৃতি।
মোটামুটি দিন সাতেকের প্রোগ্রাম ‘ফিক্সড’ করে ফেলুন। তারপর হাউসবোট থেকে শিকারা নিয়ে শুরু করুন কাশ্মীর ভ্রমণ। ডাললেকের ভিতর নেহুরু পার্ক, ভাসমান বাজার, ভাসমান উদ্যান। যেন জলছবি। শিকারা করেই হজরতবাল, নাগিন লেক যাত্রা।
যাত্রাপথে কখনও শালিমার গার্ডেন, নিশাতবাগ। হ্রদের জলে ঘুরে ঘুরে শুধুই প্রকৃতিকে উপভোগ করা। সারা দিনের জন্য শিকারা ভাড়া ৩০০ টাকা। সেই স্বপ্নের রাজ্যে ভেসে নীল আকাশে পাহাড়ি রাস্তায় কঠিন জীবনযাত্রা দেখতে দেখতে কোনও দিন পহেলগাঁও, শোনমার্গের পথে; কোনও দিন অবন্তীপুর, গুলমার্গ। রোপওয়েতে খিলেনমার্গ।
কোনও দিন শালিমারবাগ, নিশাতবাগ। নিশাতবাগের সূর্যাস্ত অপরূপ। অস্ত যাওয়ার আগে রাঙিয়ে দেয় সামনের আকাশ-বাতাস। দূরের ডাললেকে ছোট্ট শিকারা। সে এক অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা।
মনে হয় যেন এখানেই ভাললাগা। এখানেই স্বপ্ন।
http://www.mnabd.com/press/?p=164
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।