মোমিন মেহেদী
ইসির শর্তপূরণ করতে পারেনি নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল। একটি দলও মানুষের রাজনীতি করে না। করে ক্ষমতার- মোহের রাজনীতি। যেভাবে বাংলদেশ আওয়ামী লীগ-জাতীয়তাবাদী দল এবং জামায়াত ইসলাম করছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই সময়ে নির্বাচন ঘোষিত হলে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করবে।
প্রয়োজনে তারা নতুন কোন দলকে যোগ্যতর দলকে বেছে নেবে; যারা দেশ ও মানুষের রাজনীতি করে; ক্ষমতার নয়। আর তাই তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতকে প্রত্যাখানের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে আসবে বাংলাদেশের উজ্জল আগামী। যেই আগামী অপেক্ষায় আছে নতুন নেতৃত্বের, যোগ্য মানুষের আর সৎ সাহসের।
আমি যেহেতু তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দল ‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)’র আহবায়ক হিসেবে বাংলাদেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছি, সেহেতু তৃণমূল মানুষের মতামত তুলে ধরছি পাঠকদেও জন্য। সম্প্রতি সাতক্ষিরায় গেলে নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)’ জেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে আসেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির বেশ কিছু নেতৃবৃন্দ।
তারা তাদের বক্তব্যে যা বলেন, তা হলো- ‘আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি বাবা আর স্বামীর উত্তরসূরীদেরকে নিয়ে। উত্তরসূরী সরকার নয়; সত্যিকারের যোগ্য নেতৃত্বের জন্য নতুন প্রজন্মকে ভোট দেবো আমরা। আসছে নির্বাচনে নতুন প্রজন্মকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে প্রমাণ করে দিতে চাই, জনগন নতুনধারা’র পক্ষে। ’
২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশের পর মাত্র দেড় মাসে আমরা ১৭ জেলা কমিটি করেছি, গড়েছি সারাদেশে ‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)’র বলয়। যে বলয়ে আমরা পেয়েছি সৎ- যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব।
এই নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে দেশ-মাটি ও মানুষের জন্য। আগামী এপ্রিলের মধ্যে আমরা আমাদের ‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)’র ২১ জেলা ও ১০০ উপজেলা গঠন করার পর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেবো ইসিকে। যদি তারা সময় বাড়ায়, তাহলে আমার বিশ্বাস এবার নির্বাচন কমিশনের সব শর্ত পূরণ করে নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দলের একটিও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে সক্ষম না হওয়ার যে পরিচয় দিয়েছে, তা ‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)’র থাকবে না। ‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি) আবেদন করলে সকল শর্ত পূরণ করেই দেবে, যাতে আগামী নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে প্রকৃত দেশ-মাটি ও মানুষের জন্য নিবেদিত থেকে কাজ করতে পারে।
‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি) তো এখনো পাটার তলে মরিচ।
যারা রাজনীতিতে রাঘববোয়াল হিসেবে ব্যাপক পরিচিত, সেই মুরুব্বীদের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে থেকে দুই দফায় নিবন্ধনের জন্য মোট ৪৩টি দলের আবেদন জমা পড়েছে। নিবন্ধন কমিটি এরই মধ্যে সব আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা তৈরি করেছে। প্রতিটি দলের নামের পাশে দলগুলো শর্তপূরণের সপক্ষে যেসব কাগজপত্র বা দলিল জমা দিয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকায় প্রায় প্রতিটি দলের নামের পাশেই অনেকগুলো 'না' রয়েছে। এমন অনেক দল আবেদন করেছে, যারা আবেদনপত্রের সঙ্গে কোনো ইশতেহার জমা দেয়া হয়নি।
দলটি নিবন্ধন ফিও জমা দেয়নি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারও দেয়নি। তহবিল আছে কি নেই, তা জানায়নি। জেলা ও উপজেলায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক অফিস থাকার কথা উল্লেখ করেনি। এমনকি উপজেলা পর্যায়ে দলটির ২০০ সমর্থক আছে কি না, তা-ও জানায়নি।
পিপলস পার্টির আবেদনপত্রের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক কাঠামো সংযুক্ত করা হয়নি। জেলা ও উপজেলার প্রয়োজনীয় শর্তও পূরণ করেনি দলটি। মুসলিম লীগের আবেদনপত্রের সঙ্গে গঠনতন্ত্র, কেন্দ্রীয় কমিটি, ফি জমা দেয়ার সপক্ষে রসিদ এবং দলের তহবিল সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। নিউ সংসদ লীগ দলটি ইশতেহার, কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য সংযুক্ত করেনি। নাজমুল হুদার বিএনএফ অফিস কমিটি থাকার তথ্য দিলেও অফিসের ঠিকানা দেয়নি।
দলটি তহবিল সম্পর্কেও কোনো তথ্য দেয়নি। বাংলাদেশ তৃণমূল লীগ, বিএনডিপি, গণশক্তি পার্টি, বামফ্রন্ট, কৃষক শ্রমিক পার্টি ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টি অফিস কমিটি থাকার দাবি করলেও ঠিকানা জানায়নি। এ রকম ৪৩টি দলই কোনো না কোনো শর্ত অসম্পূর্ণ রেখে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায় ইসি থেকে বলা হয়েছে, নতুন দলগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই চলছে। কমিশনের দেয়া শর্ত যেসব দল সঠিকভাবে পূরণ করবে, তাদেরই নিবন্ধন দেয়া হবে।
এর আগে মাঠপর্যায়ে এসব দলের তথ্য অনুসন্ধান করা হবে। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, কোনো দল নিবন্ধন পেতে তাৎক্ষণিকভাবে অফিস ভাড়া নিয়েছে কি না, সংশ্লিষ্ট জেলায় ওই দলের রাজনৈতিক তৎপরতা আছে কি না, তা একাধিকবার অনুসন্ধান করা হবে। যেসব দল প্রতারণার মাধ্যমে সাংগঠনিক অফিস খুলে নিবন্ধনের চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হবে। নিবন্ধন পেতে হলে ২১ জেলায় এবং ১০০টি উপজেলায় অবশ্যই অফিস থাকতে হবে। প্রতিটি উপজেলায় দলের সক্রিয় ২০০ সদস্য থাকা বাধ্যতামূলক।
কমিশনের নতুন দলগুলো সদস্যের যে তালিকা জমা দিয়েছে, তারা আসলে ওই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না, তা-ও যাচাই করা হবে। তিন মাস অনুসন্ধানের পর নতুন দলগুলোকে চূড়ান্ত নিবন্ধনের আওতায় আনবে নির্বাচন কমিশন। কমিশন থেকে নিবন্ধন শাখাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, একটি শর্ত বাদ পড়লে কোনো দলকে এবার নিবন্ধন দেয়া হবে না। কারণ, ২০০৮ সালে বেশ কিছু নামসর্বস্ব দল নিবন্ধিত হয়েছে। নিয়ম-নীতি না মানলেও সহজে এদের নিবন্ধন বাতিল করতে পারছে না ইসি।
নামসর্বস্ব এসব দল নিয়ে অনেকটা সমালোচনার মুখে রয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চাইলেই নিবন্ধিত কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করা সম্ভব নয়। এ জন্য এবার নিবন্ধন দেয়ার আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ইসি, যাতে কোনো নামসর্বস্ব দল নিবন্ধিত হতে না পারে। ইসির গণবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা শর্ত অনুযায়ী, নিবন্ধনে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের প্যাডে দরখাস্ত করতে হবে। একই সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), লোগো, দলীয় পতাকার ছবি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবিসহ নামের তালিকা, দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার ও ব্যাংকের নাম এবং ওই অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ স্থিতি, দলের তহবিলের বিবরণ, নিবন্ধনের দরখাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি, স্বাধীনতার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যেকোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল অথবা সংসদ নির্বাচনের যেকোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোটের শতকরা ৫ ভাগ ভোট লাভের সমর্থন।
এ ছাড়া কমিশন বা কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যু করা প্রত্যয়নপত্র অথবা কেন্দ্রীয় কমিটি, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে, মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং প্রতি উপজেলায় বা ক্ষেত্রমতে, থানায় অন্যূন ২০০ ভোটার সদস্য হিসেবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল সংযুক্ত করার শর্ত দেয়া হয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সুষ্ঠ বিবেচনা হলে ‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)’র নিবন্ধন অবশ্যই হবে এবং বাংলাদেশের মানুষের রায় নিয়ে ‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি) একটি স্থান তৈরি করবেই। যেই স্থানে দাঁড়িয়ে অন্তত বলতে পারবে বাংলাদেশের রাজনীতিকে সুন্দর-স্বচ্ছ করার কথা। বলতে পারবে জনগনের ভোট ও ভাতের অধিকারের কথা। অতএব, বাংলাদেশকে বাঁচাতে তৈরি হোন নতুন প্রজন্ম; ঐক্যব্ধ হোন ‘নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)’র সাথে।
যাতে করে রাজনীতি হয় আপামর জনসাধারনের জন্য; নিজের-বাবার-স্বামীর বা সন্তানের জন্য নয়...
মোমিন মেহেদী, কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।