আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাদাম তুসো মিউজিয়ামে স্থান পাক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি


বিশ্বের সুপরিচিত এবং প্রাচীনতম একটি মিউজিয়াম হচ্ছে Madame Tussauds Musem. বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের মোমের মূর্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে এ মিউজিয়ামের বিভিন্ন গ্যালারী। বিশ্বনেতৃবৃন্দ হিসাবে বারাক ওবামা, ডেভিড ক্যামেরুন, টনি ব্লেয়ার, নেলসন ম্যান্ডেলা, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, বরিস জনসন, ভ্লাদিমির পুতিন, মার্গারেট থ্যাচার, জন এফ. কেনেডি, হিটলার, ক্রীড়াতারকা শচীন টেন্ডুলকার, ডেভিড বেকহ্যাম, বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সালমান খান, ঋত্মিক রোশন, ঐশ্বরিয়া রাই, কারিনা কাপুর, মাধুরী দীক্ষিতসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের মোমের মূর্তি এখানে স্থান পেয়েছে। প্রতিদিনই সারা বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ ছুয়ে দেখে এসব মোমের পুতুল। হুব হু একই রকম দেখতে, যেন সেই বিখ্যাত মানুষটির পাশে দাড়িয়ে থাকার একধরণের রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে মেলে এই মিউজিয়াম প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। এখানে এসে বিখ্যাত ব্যক্তিদের পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলে তৃপ্ত হন আগুন্তকেরা।

বিশ্বখ্যাত এ মিউজিয়ামের কোন ব্রাঞ্চেই স্থান পাননি হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী, আমাদের জাতিরজনক হিসাবে স্বীকৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বা মোমের পুতুল। সংশ্লিষ্ট মিউজিয়ামের অফিসিয়্যাল ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা গেছে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও অস্টেলিয়ার ১৫টি দেশের কোন ব্রাঞ্চেই স্থান মেলেনি বঙ্গবন্ধুর। অথচ একটি রাষ্ট্রের জন্মর নেপথ্যে এই মানুষটির অবদানের কথা বিশ্ববাসীর অজানা নয়। "বাংলাদেশ" নামে রাষ্ট্রের কথা আলোচনায় আসলেই মনের অজান্তেই ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের প্রতিচ্ছবি। কেননা, পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ-বঞ্চনা, ঔপনিবেশিক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে মুক্ত করেছেন ।

তাঁরই আজীবন সংগ্রাম ও দূরদর্শী নেতৃত্বেই পাকিস্থান থেকে বিভক্ত হয়ে যায় পূর্ব পাকিস্তান। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় সার্বভৌম বাংলাদেশ। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিংশ শতাব্দীতে যাঁরা মহানায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সাম্য, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বিরামহীন সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকার কারণে বঙ্গবন্ধু ভূষিত হয়েছিলেন নোবেলখ্যাত বিশ্বশান্তি পরিষদের ‘জুলিওকুরি’ পদকে। বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালীর হৃদয়ের মণিকোঠায় বঙ্গবন্ধু যে অমলিন, তার প্রমাণ মেলে সারাবিশ্বের বাঙালীর ওপর পরিচালিত বিবিসির জরিপে।

সারাবিশ্বের বাঙালীর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালী হিসেবে নির্বাচিত হন। নানা ভাবেই বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীর কাছে ইতিহাসখ্যাত একজন রাজনীতিক। একজন রাষ্ট্রনায়ক। একজন স্বপ্নচারী মানুষ, যার অনুগত বা যার আদর্শে লালিত হাজারও ভক্ত, অনুসারী, শুভাকাঙ্খি রয়েছে পৃথিবীর সবপ্রান্তে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই মাদাম তুসো মিউজিয়ামে জনপ্রিয় এব্যক্তির মোমের পুতুল রাখার দাবি উত্থাপিত হওয়া উচিৎ।

মাদাম তুসো'র মোমের জাদুঘর প্রথম প্রতিষ্ঠা পায় লন্ডনে। মাদাম তুসো নামে একজন ভাস্কর্য শিল্পী সর্বপ্রথম ১৮৩৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জোসেফ গ্রোশোল্জ। শৈশবে তার নাম ছিল আনা মারিয়া গ্রোসোল্জ (১৭৬১ - ১৮৫০) তার মা সুইজারল্যান্ডের বার্নে ডাঃ ফিলিপ কার্টিয়াসের বাড়ীতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন।

ডাঃ ফিলিপ কার্টিয়াস একজন চিকিৎসক হলেও তিনি মোমের ভাস্কর্য তৈরীতে পারদর্শী ছিলেন। তাঁরই স্পর্শে থেকে মাদাম তুসো মোমের ভাস্কর্য তৈরীর যাবতীয় কলা-কৌশল রপ্ত করেন। ১৭৭৭ সালে তুসো ভলতেয়ারের মোমের ভাস্কর্য্য বানানোর মধ্য দিয়ে প্রথম শুরু করেন ভাস্কর্য তৈরির কাজ। ওই সময়ের জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যক্তি জঁ জাক রুশো এবং বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ভাস্কর্যও তিনি তৈরী করেন। ফরাসী বিপ্লবের সময়কালে তিনি অনেকগুলো ঘটনার চিত্রকর্ম মূর্তি হিসেবে তৈরী করেন।

১৭৯৪ সালে ডাঃ ফিলিপ কার্টিয়াস মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর যাবতীয় মোমের মূর্তিগুলো তুসোকে দান করে যান। ম্যারি তুসো ঐ মূর্তিগুলোর মালিক হয়ে প্রদর্শনীর জন্য পরবর্তী ৩৩ বছর ইউরোপের সর্বত্র ভ্রমণ করেন। পরবর্তিতে ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে লণ্ডনের বেকার স্ট্রিট বাজারের উপরতলায় টুস্যাডো যে যাদুঘরটি তৈরি করেছিলেন, সেটাই তাঁর মূল যাদুঘর হিসাবে নির্দেশিত হয়ে থাকে। ইংল্যান্ডের রাজধানী, লণ্ডন শহরের (সেন্ট্রাল লন্ডনের উত্তরে) অলসপ প্লেস এবং মেরিলিবোন রোডের কোণায় এই জাদুঘরটি অবস্থিত। বিশেষ কায়দায় মোম দিয়ে তৈরি করা বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য্য নিয়ে করা মাদাম তুসো মিউজিয়াম বিশ্বজুড়ে এতই জনপ্রিয় যে, এটি ইংলান্ডের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।

দর্শকদের বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে আমস্টারডাম, ব্যাংকক, হংকং (ভিক্টোরিয়া পীক), লাস ভেগাস, সাংহাই, বার্লিন, ওয়াশিংটন ডি.সি, নিউ ইয়র্ক সিটি, এবং হলিউডসহ বিশ্বের ১৫ টি শহরে শাখা নির্মিত হয়। সেখানে চলচ্চিত্র তারকা, তারকা খেলোয়াড় থেকে শুরু করে খ্যাতনামা খুনী ব্যক্তিদের মূর্তিও স্থান পায়। মূলত বিশ্বব্যাপি নানা ভাবে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মোমের পুতুল নির্মানের কথা বিবেচনা করে এ মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ মার্লিন এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপ। একই সাথে তারা দর্শকদের চাহিদার কথাও বিবেচনা করে। মার্লিন এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপের অফিসিয়্যালর ওয়েবসাইট Click This Link সুত্রে জানা গেছে ২০১৩ সালে জাপানের টোকিওতে মাদাম তুসো মিউজিয়ামের আরও একটি শাখা চালু হতে যাচ্ছে।

মাদাম তুসো মিউজিয়ামে প্রথম ভারতীয় হিসাবে স্থান পান মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। এরপর চিত্র জগতের প্রথম তারকা হিসাবে সেখানে স্থান করে নেন বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন। কেবল তিনি একা নন। পুত্রবধু ঐশ্বরিয়া রাই এবং পুত্র অভিষেক বচ্চন সম্মনিত হন মিউজিয়ামের মোমের পুতুল হয়ে। অপরদিকে বলিউড তারকা শাহরুখ খান, সালমান খান, ঋত্মিক রোশন, সম্মানিত হয়েছেন বলিউড তারকা হিসাবে।

এসব তারকা নিজেরাই তারই মোমের মূর্তির পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলে পুলোকিত হয়েছেন। কোনটা আসল, কোনটা নকল, তা নিয়েও দ্ধিধা-বিভক্তি দেখা দিয়েছে তাদের নিজেদের মধ্যে। মাদাম তুসো মিউজিয়ামের অফিসিয়্যাল ওয়েব সাইট http://www.madametussauds.com/london এর তথ্য মতে বারাক ওবামা, ডেভিড ক্যামেরুন, টনি ব্লেয়ার, নেলসন ম্যান্ডেলা, বরিস জনসন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, নিকোলাস সারকোজি, ভ্লাদিমির পুতিন, মার্গারেট থ্যাচার, জন এফ. কেনেডি বিশ্বনেতা হিসাবে জায়গা করে নিয়েছেন। ওই তালিকায় স্থান পেয়েছেন ডালিয়া লামা। ক্রীড়া তারকার তালিকায় চলে এসেছে ডেভিড বেকহ্যাম, জেসিকা এনিস, লুইস হ্যামিলটন, মোহাম্মদ আলী, শচীন টেন্ডুলকার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোসহ সেরা ক্রিড়া তারকারা।

অপরদিকে রাজকীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে প্রিন্স চার্লস, রাণী ২য় এলিজাবেথ, প্রিন্স উইলিয়াম, প্রিন্সেস ডায়ানা, প্রিন্স হ্যারী, ডাচেস অব কর্নওয়ালের মোমরে পুতুল রয়েছে। অপরদিকে পপ তারকা রিহানা, জাস্টিন বাইবার, চেরিল কোল, লেডি গাগা, এমি ওয়াইনহাউজ, ব্রিটনী স্পিয়ারস, জাস্টিন টিম্বারলেক, রোবি উইলিয়ামস্, জেনিফার লোপেজ, মাইকেল জ্যাকসন, কাইলি মিনোগু আছেন। হলিউড তারকাদের মধ্যে ব্রুশ উইলিস, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও, রবার্ট প্যাটিনসন, জিম ক্যারে, নিকোলে কিডম্যান, টম ক্রুজ, জর্জ ক্লুনে, জনি ডিপ, হ্যারিসন ফোর্ড, জুলিয়া রবার্টস, জ্যাক এফরন, ড্যানিয়েল ক্রেইগ, জুডি ডেঞ্চ, চার্লি চ্যাপলিন, ড্যাম হেলেন মিরেন, ব্রাড পিট এর মোমের পুতুল রয়েছে। আরও আছে ইতিহাসের খল নায়ক হিসাবে খ্যাত হিটলার। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন।

সেখানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চার্লস ডিকেন্স, পাবলো পিকাসো, মাদাম তুসোর মোমের পুতুল রয়েছে। এমনকি ফ্যাশন জগতের পোশ এণ্ড বেকস্, এলি ম্যাকফারসন, জিন পল গলতিয়ার, কেট মসকে তুলে ধরা হয়েছে। অপরদিকে কাল্পনিক চরিত্রে বিশ্বব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টিকারী শার্লক হোমস, স্পাইডার ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো, ওলভারিন, দ্য হাক, নিক ফুরি, দি ইনভাইসিবল ওম্যান, আইরন ম্যান এর প্রতিকৃতি রাখা হয়েছে। কিন্তু কোথাও নেই আমাদের বঙ্গবন্ধু। কেনো? এই বিষয়টি নিয়ে মাদাম তুসো মিউজিয়ামের স্বত্তাধিকারী প্রতিষ্ঠান মারলিন এন্টারটেইনমেন্ট এর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।

তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের আবেদনও জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিত্তুরে মারলিন এন্টারটেইনমেন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে মাদাম তুসো মিউজিয়াম করার কোন পরিকল্পনা তাদের নেই। বঙ্গবন্ধুর মোমের পুতুল সংশ্লিষ্ট যাদুঘরে রাখার দাবি বা আবেদন প্রসঙ্গে Merlin Entertainments এর হেডকোয়াটার থেকেছে নীরব। যে কারণেই প্রশ্ন জাগে, কেবল কি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রয়েছে বাঙালী জাতির এই মহাপুরুষের গ্রহনযোগ্যতা ? বিশ্বজুড়ে থাকা কোটি কোটি বাঙালীর কাছে কি তাঁর কোন জনপ্রিয়তা নেই? মাদাম তুসো মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধুর মোমের পুতুল যে থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই। সেখানে থাকলেই যে তাঁর মর্যাদা বা জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে তা প্রমান করেনা।

তেমনই ভাবে বলা যায়, না থাকাটাও অজনপ্রিয়তার লক্ষণ নয়। তবে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের মহান রুপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মোমের পুতুল স্থাপিত হলে বাংলাদেশের পরিচিতিটা ব্যপকতা লাভ করতো অনেক বেশি। মাদাম তুসো মিউজিয়ামের ১৫ টি শাখার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে চিনতে ও জানতে পারতো বিশ্ববাসী। একজন বাঙালী এবং বাংলাদেশেী হিসেবে আসুন আমরা মাদাম তুসো মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষর কাছে বঙ্গবন্ধুর মোমের পুতুল স্থাপনের দাবি জানায়। এই ঠিকানায় মেইল করে অনুরোধ জানাতে পারেন।


 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।