মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে যে কোনো দিন। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গতকাল বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। শুনানিতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে দাবি করে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্র পক্ষ)। অন্যদিকে সাকা চৌধুরীকে নির্দোষ দাবি করে তার খালাস চেয়েছে আসামি পক্ষ। জবাবে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছেন, মামলাটি সিএভি (কোর্ট অন অ্যাডজর্নমেন্ট ফর ভারডিক্ট) রাখা হলো।
যে কোনো দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এদিকে এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা আরও একটি মামলার কার্যক্রম শেষ হলো। এরই মধ্যে এ বিষয়ে আরও ছয়টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
সকালে ট্রাইব্যুনালে আসামি পক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক; এরপর প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ, জেয়াদ আল মালুম ও তুরিন আফরোজ রাষ্ট্র পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। বিকালে প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলা সিএভি রাখার বিষয়টি জানান ট্রাইব্যুনাল।
২৩ অভিযোগ_ছয়জনকে হত্যা : প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাড়ি গুডস হিলে ছয়জনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এছাড়া হিন্দুপাড়ায় হত্যা, নূতন চন্দ্রকে হত্যা, জগৎমল্লপাড়ায় হত্যা, সুলতানপুরে হত্যা, ঊনসত্তরপাড়ায় হত্যা, সতীশকে হত্যা, মোজাফফরকে পাওয়া যায়নি, শান্তি দেবকে হত্যা, গাড়ি লুট, শাকপুরায় হত্যা, জ্যোতিমল্ল গ্রামে হত্যা, ঘাসিমাঝিরপাড়ে হত্যা, হানিফকে হত্যা, মায়মুনকে নির্যাতন, ফারুককে হত্যা, নিজামকে নির্যাতন, সালেহউদ্দিনকে নির্যাতন, নূর মোহাম্মদকে নির্যাতন, আকলাচ হত্যা, ফজলুল হককে হত্যা, নূরুলকে নির্যাতন, সলিমুল্লাহকে নির্যাতন।
সাক্ষ্য গ্রহণ : সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
সাকা চৌধুরীর পক্ষে চারজনের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
যেভাবে এগুলো মামলাটি : ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ২৩ টি অভিযোগ গঠন করার মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাকা চৌধুরীর বিচার শুরু হয়। অভিযোগের মধ্যে রয়ৈছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ করে গুডস হিলে নির্যাতন, দেশান্তরে বাধ্য করা ও অগি্নসংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধ। এর আগে ২০১০ সালের ২৬ জুন রাজধানীর মগবাজার এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর সকালে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা।
একই বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৩ ও ৭ মে উদ্বোধনী বক্তব্য উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন। গত বছরের ১৪ মে থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলামসহ প্রসিকিউশনের ৪১ জন। অন্যদিকে ১৭ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সাকা চৌধুরীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন চার জন।
খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ৫ সেপ্টেম্বর : ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌর মেয়র ও বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠনের বিষয়ে ৫ সেপ্টম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। এ ছাড়া খোকনের অনুপস্থিতিতেই তার বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় খরচে অ্যাডভোকেট আবদুস শুকুর খানকে আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে হাজির হতে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও খোকন হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।
১৮ জুলাই প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে খোকনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে খোকনের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।