আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমকালীন ভাবনা: দেশের ভবিষ্যত কি অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে ?



বাংলাদেশ ৩০ লাখ শহিদী বীরের উৎসর্গকৃত জীবনের বিনিময়ে অর্জিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। যে দেশকে নিয়ে গর্ব করে বহু কবি, সাহিত্যিক লিখেছেন কবিতা, গল্প, গান, উপন্যাসসহ বিভিন্ন রচনা। ইতিহাসে তাকালে আমরা দেখতে পায়, পর্যট্রক ইবনে বতুতা বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেশের প্রতি লক্ষ্য করলে বোঝা যায় আগের ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। দেশ চলেছে কোন পথে।

একদিকে প্রতিহিংসার রাজনীতি অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের আকাশ ছোয়া বাজার সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যদিও মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী গলা উঁচু করে বলছেন, দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গত ৮ অক্টোবর দিন দুপুরে বিএনপি সমর্থিত নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউলস্নাহ নূরকে মিছিলে হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণ, ছিনতাই এবং খুনের ঘটনাতো রয়েছে । গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের অধিবেশনে মাননীয় স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য মতে, দেশে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ১ হাজার ৯৫১ টি খুন হয়েছে।

এ ছাড়াও ১ হাজার ৫৮৬ টি ধর্ষণসহ সারা দেশে সাড়ে ১৭ হাজার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। কেন এসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে সে দিকে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটা দৃষ্টিগোচর করেছে তা আমাদের জানা নেই। এভাবে দেশে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দেশের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিবে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কিত হবে। মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় পড়তে হবে।

ইভটিজিং এর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেওয়ার পরও অনেক স্থানে ইভটিজিং বন্ধ হয় নি। বিভিন্ন কায়দায় তরুণীদের অর্থাৎ মোবাইল ফোন, ফেইসবুক, টুইটার এবং ইমেইলের মাধ্যমে ইভটিজিং করা হচ্ছে। যা আরো ভয়াবহ। প্রভা-রাজীবের নগ্ন ভিডিও চিত্র প্রচারের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিনোদপুর কলেজের এক প্রভাষক এবং বিবাহিত ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও চিত্র তরম্নণদের মোবাইলে মোবাইলে প্রচার হয়েছে। দেশে সাইবার আইন থাকলেও এর তেমন প্রয়োগ নেই বললেই চলে।

ফলে তরম্নণ-তরম্নণীদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। বেশ কিছু দিন আগে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকেও সন্ত্রাসীরা খুন করে। সাংবাদিক নির্যাতন, রাজনৈতিক কারণে হয়রানীর শিকার হচ্ছে এমন অভিযোগ বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা জোর গলায় বলছে। মিডিয়াও সে সব কথা গুরুত্বের সাথে প্রচার করছে। কুমিল্লাতে মুখোশ পরিহিত সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া করার ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে কিভাবে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরতে পারে। তাহলে কি এ স্বাধীন দেশ ধ্বংশের দিকে এগুচ্ছে। পাবনাতে সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে,দ্বন্দ দেখা দিয়েছিল তা দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতো যদি দ্রম্নত সমাধান না হতো। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস আশা করেন ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে মনে হয় না দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে শ্রমিকদের তান্ডবে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীতে সেনা সদস্য মোতায়েনের মাধ্যমে সরকারকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়েছে। সিরাজগঞ্জ ছয়েদাবাদ রেলস্ট্রেশনে ট্রেনে কাটা পড়ে কয়েকটি তাজা প্রাণ হারিয়ে গেল। বিএনপির জনসভায় যোগ দিতে গিয়ে তাদেরকে অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য ছুঁড়েছেন ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দল।

যে যাই মন্তব্য করুক না কেন যে কয়েকটি তাজা প্রাণ অকালে চলে গেছে তাদেরকে কখনও ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে ট্রেনে আগুন লাগিয়ে সরকারি সম্পদকে নষ্ট করা হয়েছে। এসব সভ্য সমাজের কাম্য নয়। সামান্য ঘটনা নিয়ে জালাও পোড়াও, লুটপাট এবং ভাংচুরের ঘটনা যে দেশে ঘটে সে দেশ কিভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকে দ্রম্নত অগ্রসর হতে পারে। এ দেশের জাগ্রত মানুষের বিবেক আজ দুর্নীতিবাজ, বাজিকর, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের হাতে জিম্মি।

কিছু করার নেই। প্রতিবাদ করতে গেলে জীবন হারাতে হবে। জীবনের মূল্যকে এখনও মানুষ দামী হিসেবেই বিবেচনা করে। আমাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে পশুর মত হয়ে যাচ্ছি।

আমাদের বিবেক এত নিচে নেমে গেছে। ছাত্রলীগ কর্মীদের ব্যাপারে জনগণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টেন্ডারবাজী, অভ্যমত্মরীণ কোন্দল এবং আধিপত্য বিসত্মারকে কেন্দ্র করে চলতি বছরে কয়েকজন মেধাবীর প্রাণ অকালে ঝরে গেছে। তাঁরপরেও যেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগকে থামানো যাচ্ছে না। অথচ এ ছাত্ররাই উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে একসময় দেশের হাল ধরার কথা।

যারা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালায় তারা সত্যিকারে দেশ প্রেমিক নয়। দেশের মানুষ আজ ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হাতে জিম্মি। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল’ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আগামীতে আরো আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সেটাই সবার প্রত্যাশা।

কিন্তু দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি সহনীয় পর্যায়ে নামানো সম্ভব না হয়। দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগেই থাকে। শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ঘোলাতে থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে। অকালে জাতির সুর্য সেনাদের প্রাণ হারাতে হয়।

তবে বর্তমান সরকারের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানো কতটুকু বাসত্মবে সম্ভব হবে? সবাইকে দেশ এবং জনগণের স্বার্থে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। ক্ষমতাসীন দলকেও মনে রাখতে হবে জনগণের সেবা করার জন্য যেমন তারা ক্ষমতায় এসেছেন তেমনি বিরোধী দলও একই উদ্দেশ্যে রাজনীতি করছে। সবাইকে দেশ এবং জাতির স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে। নইলে দেশ রশাতলে যাবে। যার দায় অপরাধীদের নিতে হবে।

বিষয়টির প্রতি ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দল উভয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লেখক- আজমাল হোসেন মামুন উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিক এবং বস্নগার মোবাইল নং-০১১৯১০৮৯০৭৫

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।