জীবনে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি কোন চাওয়াই অপূর্ন নেই । বড়লোক হওয়ার খুব সখ
ভাইসব, আপনারা দয়া করে গ্যাঞ্জাম করবেন না। এখন আপনাদের সামনে আমাদের সেই গণ্যমান্য জঘন্য জনাব মদন ভাই ভাষণ দেবেন। সবাই বসে পড়ুন।
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মদন মিয়া তার নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন।
ভাইসব, আমি যদি নির্বাচনে জিততে পারি, তাহলে আমি প্রথমেই আপনাদের জীবনের নিরাপত্তা দান করব। কীভাবে জানেন? এই এলাকার সব পাকা রাস্তাগুলো খুঁড়ে খুঁড়ে কাঁচা রাস্তা করে দেব। কারণ পাকা রাস্তায় প্রতিদিন বড় বড় গাড়ি চলে। আর এই গাড়ির নিচে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ জীবন হারায়। সুতরাং কাঁচা রাস্তায় চলবে গরুর গাড়ি আর মানুষের গাড়ি, যাতে কোন অ্যাকসিডেন্টই হবে না, আর আপনাদেরও জীবন দিতে হবে না।
তারপরে আমি এলাকার সব পাকা ব্রিজ ভেঙে সেখানে কলাগাছের ব্রিজ করে দেব। কিসের জন্য জানেন? প্রতিবছর বন্যায় অনেক মানুষ আর গরু জীবন হারায়, কারণ মানুষ যখন বন্যায় আশ্রয় নেয়ার জন্য সেই পাকা ব্রিজগুলোতে উঠে তখন পানিতে ডুবেই সবাই মারা যায়, কিন্তু কলাগাছের যত পানি হবে— ব্রিজ তত উপরে উঠবে। এসব কথা এলাকাবাসীর কাছে ফালতু মনে হলো। ঠিক এমন সময় মদন মিয়া ঘোষণা দিলেন—‘নির্বাচনে জিতলে আমি আমার যা কিছু আছে সবই আপনাদের কল্যাণে ব্যয় করব এবং এলাকাকে ডিজিটাল এলাকায় পরিণত করব। আপনারা আমাকে ভোট দিন।
এ কথায় এলাকাবাসীর মনে আশার সঞ্চার হলো। নির্বাচনে এলাকাবাসী ভোট দিয়ে তাকে চেয়ারম্যান বানাল। চেয়ারম্যানের স্ত্রী গত বছর মারা গেছেন। একটি কাজের বুয়া আর যুবতী কন্যা নিয়েই তার সংসার। পরদিন চেয়ারম্যান বুয়াকে বলল—নির্বাচনের আগে আমি এলাকাবাসীকে সবকিছু দিয়ে দেব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, কেউ কিছু চাইলে তুমি কিছুই দেবে না।
এই বলে সে অফিসে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর এলাকার মজিদ এসে বলল—
‘চেয়ারম্যান সাব বাড়িতে আছেন নাকি? ও চেয়ারম্যান সাব : বুয়া বলল—চেয়ারম্যান বাড়িতে নেই, কী লাগবে কও। মফিজ বলল—বাজারে যেতে হবে তাই...। মফিজের কথা কেড়ে নিয়ে বুয়া বলল—তাতে চেয়ারম্যানের কাছে কি? মফিজ বলল—না, মানে চেয়ারম্যানের সাইকেলটা যদি একটু দিতেন। বুয়া বলল—এতসব ভঙ্গি করে লাভ নেই।
চেয়ারম্যান সাইকেল দিতে মানা করেছেন। মফিজ রাগে গজগজ করে বলতে লাগল—‘কী, এত বড় কথা, নির্বাচন আসুক দেখব শালায় কেমনে চেয়ারম্যান হয়। ’ চেয়ারম্যান সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বুয়াকে জিজ্ঞেস করল—কেউ কি এসেছিল? বুয়া বলল—এলাকার মফিজ এসে আপনার সাইকেলটা চেয়েছিল, বাজারে যাবে বলে। আমি বলে দিয়েছি সাইকেল দেয়া যাবে না। আপনার মানা আছে।
চেয়ারম্যান বলল—‘তুই করছিস কী, আমাকে তো ডুবাবি। বলবি— সাইকেল চলে না। ব্রেক ফেল, স্পোক ভাঙা, টিউব লিক, ইত্যাদি...। পরের দিন চেয়ারম্যান অফিসে যাওয়ার পর এলাকার মন্টু এসে বলল—চেয়ারম্যান বাড়িতে আছেন? বুয়া বলল—সে বাড়িতে নেই, কী লাগবে কও। মন্টু বলল— আমার একটি হালের গরুর পা ভেঙে গেছে, তাই আইছিলাম চেয়ারম্যানের গরুটার জন্য।
বুয়া বলল—ওসব সুর লইয়েন না। গরু চলতে পারে না, গরুর স্পোক ভাঙা, গরুর ব্রেক ফেল, গরুতে পাম নাই...। মন্টু বলল—এসব কি কইলা?... চেয়ারম্যান গরু দিব না, তাই কও। নির্বাচন আসুক, হারামজাদায় জিতে কীভাবে তা দেখব। এই বলে সে বাড়ি ফিরে গেল।
রাতে চেয়ারম্যান বাড়িতে এলে বুয়া সব খুলে বলে। চেয়ারম্যান কপালে হাত দিয়ে বলল—আরে শয়তান তুই তো আমার মান ইজ্জত খোয়াবি। তারপর বুয়াকে বোঝাতে লাগল—‘কেউ যদি গরু নিতে আসে তুই বলবি, গরুর পিঠে ফোঁড়া, পা খোঁড়া, নাকে ঘা, মুখে ব্যথা, অন্ধ, চলতে পারে না। পরদিন সে অফিসে চলে যায়। পাশের এলাকার মজনু ঘটক চেয়ারম্যানের হবু বেয়াইকে নিয়ে তার বাড়িতে আসে চেয়ারম্যানের মেয়েকে দেখার জন্য।
উল্লেখ্য, বিয়ের কথা আগেই চেয়ারম্যানের সঙ্গে পাকাপোক্ত হয়ে গিয়েছিল। ঘটকের ডাকাডাকিতে বুয়া বলল—চেয়ারম্যান সাব বাড়িতে নেই, সে অফিসে চলে গেছে। কী লাগবে আমারে কন। কাজের বুয়ার কথা শুনে ঘটক আমতা আমতা করে বলল—
‘না মানে, চেয়ারম্যান সাবের মেয়ে.., অমনি ঘটকের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বুয়া বলল—‘চেয়ারম্যানের মেয়ে ভালো না, তার পিঠে ফোঁড়া, পা খোঁড়া, মুখে ব্যথা, নাকে ঘা, অন্ধ, চলতে পারে না। একথা শুনে তারা বিয়ে ভেঙে দিয়ে অন্যত্র চলে যান।
এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। রাতে চেয়ারম্যান বাড়িতে এলে বুয়া বলতে শুরু করে— চেয়ারম্যান সাব, এলাকার লোকজন একেবারে মাথায় উঠে গেছে, একদিন সাইকেল, একদিন গরু, আবার এখন আপনার মেয়েকে নিতে আসছিল। চেয়ারম্যান জিজ্ঞেস করল—কারা আমার মেয়েকে নিতে এসেছিল? বুয়া বলল— দু’জন লোক, তারা কিছু বলার আগেই আমি বলে দিয়েছি, ‘চেয়ারম্যানের মেয়ের পিঠে ফোঁড়া, পা খোঁড়া, মুখে ঘা, নাকে ব্যথা, অন্ধ, চলতে পারে না। ’
চেয়ারম্যানের মনে পড়ল আজকে তার হবু বেয়াই আর মজনু ঘটকের আসার কথা ছিল, মেয়ে দেখার জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।