দেশে উত্ত্যক্ততা (ইভ টিজিং) সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে। ওই ব্যাধির সংক্রমণ থেকে কিশোর-তরুণী-নারীদের কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। সরকার উত্ত্যক্তকারীদের ঠেকাতে পদক্ষেপ হিসেবে আইন প্রণয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বখাটেদের রুখতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু বখাটেদের ঠেকানো যায়নি।
এ অবস্থায় অনেকে নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বখাটেদের ঠেকাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন। গত পাঁচ মাসে ১৩৮ জন বখাটেদের হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন মারাও গেছেন।
গত ১২ অক্টোবর নাটোরে বাগাতীপাড়ার কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান বখাটেদের হামলার শিকার হন। উত্ত্যক্ততার প্রতিবাদ করায় বখাটেরা মোটরসাইকেল দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে।
তিনি এখন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এরই মধ্যে গত বুধবার ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এক স্কুলছাত্রীকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে বখাটেরা। এ সময় বাধা দিলে সেই স্কুলছাত্রী ও তার মাকে বেড়ধক মারধর করে বখাটেরা। একইদিন সহকর্মীদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মাগুরার প্রাথমিক শিক্ষক ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক শরিফুজ্জামান। বখাটেরা তাকে পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তার গায়ে গরম ডাল ঢেলে দিয়েছে।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কচুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা বিল্লাহ একই এলাকার অহিদুল্লাহ শেখের স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে লাঞ্ছিত করে। বাধা দিলে বখাটেরা অহিদুল্লাহ শেখকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। এ রকম অনেক ঘটনাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে চলেছে। অনেক খবর গণমাধ্যমের অন্তরালে রয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তথ্যে জানা যায়, গত পাঁচ মাসে দেশে উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন মোট ১৩৮ জন।
মে মাসে ১৬, জুনে ২৭, জুলাইয়ে ৩১, আগস্টে ২৮ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩৬ জন বখাটেদের হামলার শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, ইভ টিজিং প্রতিরোধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। ইভ টিজিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার এক ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া অপসংস্কৃতি, মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদের সমাজের ভারসাম্যকে বিনষ্ট করে ফেলে। এ সময় নানা ধরনের অপরাধের জন্ম হয়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি দেশবাসীকে সব বখাটে ও কুলাঙ্গারদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
সেই সঙ্গে আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব ঘটনা প্রতিরোধে সচেতন থাকতে বলছি।
ডিএমপির সাবেক পুলিশ কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ডিএমপি নিয়মিতভাবে প্রতি রবিবার আটককৃত বখাটেদের একটি তালিকা তৈরি করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আটক হওয়া বখাটেদের অভিভাবকের কাকুতি-মিনতি ও মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। আটক হওয়া বখাটেদের একটি অংশকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে চালানও করা হয়।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, ইভ টিজিংয়ের সঙ্গে যারা জড়িত তারা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।
মানসিকভাবে সুস্থ না হওয়ায় একশ্রেণীর বিকারগ্রস্ত যুবক এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত ইভ টিজিং বন্ধ হবে না। এই সামাজিক ব্যাধির প্রতিবাদকারীকেও নির্যাতনের শিকার হতে হবে। তার মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে বর্তমানে অস্থিরতা কাজ করছে। এলিনা খান আরও বলেন, ইভ টিজিংয়ের জন্য যে কারও সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে এবং এর প্রতিবাদ করে বখাটেদের হামলায় মৃত্যু হলে ওই বখাটের সর্বনিম্ন ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে।
বখাটেদের প্রতিরোধে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বখাটেদের প্রতিরোধে পুলিশের এআইজি শাহ আলম (অপরাধ-৩) দেশের সব পুলিশ স্টেশনে আট দফা দাবি সংবলিত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। যেখানে ইভ টিজিং বিষয়ে মৌখিক, টেলিফোনে বা অন্যকোনো মাধ্যমে থানায় সংবাদ আসার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের গ্রেফতার ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও ইভ টিজিং প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএনসিসির দেবীদ্বার প্রশিক্ষণ শিবির বখাটেদের হামলা ভাঙচুর
কুমিল্লার দেবীদ্বার সুজাত আলী সরকারি কলেজে 'বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) ক্যাপসুল প্রশিক্ষণ শিবিরে একদল বখাটে বৃহস্পতিবার রাতে এক সেনাসদস্যকে পিটিয়ে আহত করেছে।
বখাটেরা তার মাইক্রোবাস, প্রশিক্ষণকক্ষের দরজা-জানালা ও বেঞ্চ ভাঙচুর করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, ১৮ অক্টোবর থেকে সাত-আটজন চিহ্নিত বখাটে বিএনসিসির ক্যাপসুল প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তারা মেয়েদের উদ্দেশ করে শিস দেওয়া, অশালীন উক্তি করা, আপত্তিকর অবস্থায় মেয়েদের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়াসহ নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বৃহস্পতিবার বিকালে কলেজমাঠে বহিরাগত দুটি ছেলে মেয়েদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলতে চাইলে করপোরাল শিব্রত বখাটেদের ধমক দিয়ে বের করে দেন। এ সময় বখাটেরা শিব্রতকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় এবং রাত সোয়া আটটায় হামলা চালায় বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনসিসির একাধিক সদস্য জানান, সোহাগ (২২), নাদিম (২৩), সজীব (২১), মাহফুজ (২৩), ফরহাদ (২২), সাজ্জাদসহ (২২) ৮-১০ চিহ্নিত বখাটে রাতে প্রশিক্ষণ চলাকালে লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা প্রশিক্ষণকক্ষে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় মেজর ইলিয়াস, সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত করপোরাল শিব্রত নিজেদের পরিচয় দিয়ে তাদের এভাবে চড়াও হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বখাটেরা অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে থাকে। তারা বেঞ্চের পায়া ভেঙে পেটাতে থাকে। মেজর ইসরাত দরজা বন্ধ করে দিলে তারা দরজা-জানালা ভাঙচুর করে মেয়েদের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।
আতঙ্কিত মেয়েরা চিৎকার করতে থাকলে আশপাশে লোকজন জড়ো হতে দেখে বখাটেরা পালিয়ে যায়।
জানা যায়, সোমবার (১৮ অক্টোবর) দেবীদ্বার সুজাত আলী সরকারি কলেজে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের ৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) একটি ক্যাপসুল প্রশিক্ষণ শিবির উদ্বোধন হয়। এতে ১২ স্কুলছাত্র, ৫০ কলেজছাত্র ও ১৪ কলেজছাত্রীসহ ৭৬ জন অংশ নেন।
এ ব্যাপারে শুক্রবার সন্ধ্যায় দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, বিএনসিসি ও কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনো মামলা করতে আসেনি। আমরা জিডি করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশীদ ভূইয়া জানান, বিএনসিসির পক্ষ থেকে মামলা হবে না, কলেজ কর্তৃপক্ষই মামলা করবে বলে জানিয়েছে।
মেজর ইলিয়াস জানান, সংঘটিত ঘটনায় আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। পুরো ঘটনাটি আমার সামনেই ঘটেছে। ছাত্রছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে এবং নানা জটিলতার আশঙ্কায় প্রতিরোধে এগিয়ে যাইনি।
সূত্র ঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
বাংলাদেশের আইনকে কাচকলা দেখিয়ে বখাটেরা বীরের মত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ......এই হচ্ছে বাংলাদেশের আইন ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।