আকাশটা ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে
মাদরাসায় পড়া লেখা করা কী অপরাধ? অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এটা আসলেই অপরাধ। আর যদি অপরাধই না হবে, তাহলে শর্তারোপ করে তাদের উচ্চ শিক্ষার পথ কেন রুদ্ধ করা হবে?
আমাদের সংবিধানের ২৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, “ধর্ম, গোষ্ঠী, নারী, পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা বাধ্য-বাধকতায় বাঁধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না। ” তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি না করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। সেই রিট শেষপর্যন্ত সুপ্রীম কোর্টে গড়ায় এবং ২০০৯ সালের ২৮ জানুয়ারী সুপ্রীম কোর্ট এক আদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিভাগে মাদরাসা থেকে পাশ করে আসা ছাত্রছাত্রীদের ভর্তিতে নতুন শর্তরোপকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেন।
দেশের সংবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্বেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা থেকে পাশ করে আশা ছাত্রছাত্রীরা যাতে ভর্তি হতে না পারে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শর্তারোপ করেই চলেছে।
এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ শর্তারোপ করে বন্ধ করা হয়েছে। যেমন- ঢাবিতে বাংলা, ইংরেজীসহ ৭টি বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা এবং ইংরেজীতে ২০০ নম্বর করে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু মাদরাসায় দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় বাংলা ও ইংরেজী পরীক্ষা হয় ১০০ নম্বরের। অতএব ঢাবির এসব বিভাগ মাদরাসা ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিষিদ্ধ।
একই শর্তারোপ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ বছর আগে থেকে বাংলা, ইংরেজী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে মাদরাসা থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নিষিদ্ধ ছিল। এবার নতুন করে শর্তারোপ করায় কলা ও মানবিক অনুষদের প্রতিটি বিভাগের জন্যই মাদরাসার ছাত্ররা নিষিদ্ধ হয়েছে। এ কারণে জাবির ৩২টি বিভাগের মধ্যে ১৩টি বিভাগেই মাদরাসার ছাত্ররা নিষিদ্ধ হলো। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের যোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, জীববিদ্যা ও ইংরেজী প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে জিপিএ- ২.০ থাকতে হবে।
কিন্তু মাদরাসায় এ বিষয়গুলো আলাদাভাবে পড়ানো হয় না। অর্থাৎ এখানেও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা নিষিদ্ধ। কিন্তু কেন এমন হবে?
হ্যাঁ, এক্ষেত্রে অনেকেই সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ছাত্রদের সাথে উল্লেখিত বিষয় সমুহে মাদরাসার ছাত্রদের মেধা বা জানা-শুনা কম থাকার যুক্তি দেখান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মাদরাসা থেকে পাশ করা কোন ছাত্র যদি ভর্তি পরীক্ষায় খারাপ করে তাহলে তো তাকে ভর্তি করার প্রশ্নই আসবে না। এটা ঠিক আছে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে মাদরাসার কোন ছাত্র যদি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ছাত্রদের চেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করে তাহলে তাকে সুযোগ দেয়া হবে না কেন? আর তার যদি সেই মেধা থাকেই তাহলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সেলেবাসে নম্বরের ঘাটতি দেখিয়ে তাকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে কেন বঞ্চিত করা হবে? মাদরাসার সেলেবাস তো আর এই ছাত্ররা প্রণয়ন করে নাই, যে এ অপরাধে তাদের শাস্তি দিতে হবে।
তাছাড়া যারা মাদরাসার সেলেবাস অনুমোদন করে তারাইতো একে সাধারণ শিক্ষার সমমর্যদা দিয়েছে। দেশের সংবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালতও এর পক্ষে। তারপরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্তারোপ করে মাদরাসার ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার পথ কেন রুদ্ধ করা হচ্ছে? মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি একবার ভেবে দেখবেন কি?
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।