এই ব্লগটি নোমান বিন আরমান'র দায়িত্বে প্রবর্তিত। এখানে মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। numanbinarmanbd@gmail.com
মাদরাসায় আরবী উর্দুর প্রাধানের কারণ ও এসমেয়র ....
নোমান বিন আরমান :
বাংলা সাহিত্যের চূড়োয় আরোহণ করতে নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন কওমী মাদ্রাসার আলেম ও ছাত্ররা। এই সংগ্রাম চলছে ব্যক্তি উদ্যোগ ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতায়। হুজুর ছাত্ররা সময় দিচ্ছেন বাংলাভাষা ও সাহিত্য নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি অর্জনে।
এমনই ক’জন আলেমের সাথে কথা হলে তারা জানালেন, হুজুর-মাওলানারা বাংলা জানে নাÑ এমন বদনাম দীর্ঘদিন ঘিরে ছিলো কওমীর আলেম ও ছাত্রদের। একটা সময়ে বাংলাভাষা বা সাহিত্যে তাদের কোনো ভূমিকা ছিলো না। এ কারণে অনেক পিছিয়ে ছিলেন তারা। ছিলেন অবহেলার পাত্র। এর থেকে এখন দেশের প্রায় ৩০ হাজার মাদ্রাসার ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রী বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন।
বাংলা সাহিত্যের বারান্দায় তারা ছড়াচ্ছেন সৃষ্টিশীলতার আলো। রচনা করছেন বিশ্বাসের আলো-বিদৌত সাহিত্যের বিশেষ একধারা। এমন দাবী করলেন এসময়ের আলেম লেখকরা।
তারা জানিয়েছেন, সমাজের বিশেষ শ্রেণীর অবহেলা আর অবজ্ঞাই মাতৃভাষা চর্চা ও লালনে প্রতিজ্ঞ করে তুলছে এ সময়ের আলেম ও ছাত্রদের। পিছনের যে সময়টা তাদের আকাবিররা (বাংলাদেশের) শুধু উর্দু আর ফার্সির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন তার বিশেষ কারণ ছিলো।
এখন সময় বদলেছে। তাই আমাদেরও যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৌশল পরিবর্তন করতে হচ্ছে। আর এটাই ইসলামের শতসিদ্ধ রীতি।
প্রভাতবেলার সাথে কথা বলার সময় তারা জানিয়েছেন, আর দশটি শিাব্যবস্থার মত কওমী মাদ্রাসার শিা শুধু জৈবিক চাহিদা পূরণেরই জ্ঞান দেয় না। এর পাশাপশি কওমী মাদ্রাসা শিার বড় ভূমিকা হলো এদেশের গণমানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সুষ্ঠু লালন ও সংরণ।
আর এটাই এ শিার মূল ল্য। এ কারণে অনেক কিছুর ব্যাপারে এ শিা ব্যবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। সস্তা প্রাপ্তি আর ঝোঁক উপো করে কোনো কিছু গ্রহণ ও রর্জন করতে গভীর নিরিখ ও বিশ্লেষণ করতে হয়। সবকিছুর উপরে গুরুত্ব দিতে হয় গণামানুষের ধর্মীয় চেতনা সংরণ রাখার বিষয়টিকে। তাই হুটকে এ ধারার শিাব্যবস্থা যেকোনো কিছুর প্রতি ঝুঁকে না।
১৯৫২ সালে বাংলাভাষা আন্দোলন যখন হয়, তখন পুরো রাষ্ট্রে (তৎকালীন পাকিস্তান) উর্দুর প্রচলন ছিলো বেশি। রাষ্ট্রভাষাও ছিলো উর্দু। এর আগে ব্রিটিশ শাসিত সময়ে ও তার আগে ভারত ও দণি এশিয়াসহ আশপাশের বেশ কটি দেশে ফার্সি ছিলো রাষ্ট্রীয়ভাষা। একারণে সঙ্গত কারণেই কওমী ধারার শিাব্যবস্থা উর্দু ও ফার্সির প্রতি নির্ভরশীল ছিলো। এই প্রভাব পাকিস্তান আমলেও অব্যাহত ছিলো।
কারণ তখনও এসব অঞ্চলের সংখ্যাঘরিষ্ঠ মানুষের ভাষা উর্দু না হয় ফার্সি ছিলো। তাই মূলধারার সাথে থাকতে উর্দু ও ফার্সিকেই কওমী মাদ্রাসার শিাভাষা করা হয়। সিলেবাসের সকল বইকিতাব এ দু’ ভাষাতেই রচনা হয়।
তারা বললেন, কিন্তু ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আগের সেই প্রভাবমুক্ত হওয়া যায়নি শুরুতেই। তখন কেবল বাংলাদেশী মানুষের চিন্তাচেতনা লালন করার মতো একক ভাষাশক্তি কওমী মাদ্রাসার ছিলো না।
সিলেবাসে অর্ন্তভূক্ত করার মতো বাংলাভাষায় লিখিত বইকিতাবও প্রস্তুত ছিলো না। তাই বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো উর্দু ও ফার্সিকেই শিাভাষা রাখে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে মূল ধারার সাথে যুক্ত হতে কি কারণে যেনো সময় নেয় বেশি। এই দায় কারো উপর এককভাবে চাপানো কঠিন বলে মন্তব্য করেন আলেম লেখকরা।
৯০ দশক থেকে মাদ্রাসাগুলোয় মোটামুটিভাবে উর্দু আরবি, ফার্সির সাথে বাংলা যুক্ত হতে থাকে।
ঐসময় প্রায় সবগুলো মক্তবে (প্রাইমারি) বাংলা গুরুত্বসহ পাঠভূক্ত হয়। এর পর ধীরে ধীরে এই ধারা ইন্নত হতে থাকে। এখন সব কওমী মাদ্রাসার মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুল-মাদ্রসার বাংলা সাহিত্য অবশ্য পাঠ্য করা হয়েছে। একই সাথে এই সময় থেকে বাংলা সাহিত্য চর্চায় আলেমদের বিচরণ বাড়ে। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আলেমরা লেখালেখি শুরু করেন ব্যাপকভাবে।
সম্পাদনা করেন বিভিন্ন সময়িকী। দু’হাতে লিখেন প্রবন্ধ, গল্প, নাটক, কবিতা। এই সময়ে বেশ কটি পত্রিকা আলেমদের হাতে সম্পাদিত হয়ে ঢাকা থেকে প্রকাশ হতে থাকে। এগুলোর মধ্যে এখন ‘মাসিক আদর্শনারী’ বহুল প্রচলিত। এর সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসান শামশাবাদী।
এই পত্রিকাটি সাধারণ পাঠদের প্রতি বিশেষ নজর রেখেই প্রকাশ হয়।
এর আগে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকার মধ্যে অন্যতম প্রধান পত্রিকা মাওলানা মুহি উদ্দিন খান সম্পাদিত ‘মাসিক মদীনা’। এটি একসময় ইসলামী পত্রিকাগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলো। এটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৬১ সালে। আশির দশকে মোহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুরের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘মাসিক রহমত’ আলেম-লেখক ও সাংবাদিকদের হাতে সম্পাদিত ভিন্নধারা একটি পত্রিকা।
এটি প্রধানত সমসাময়িক ইস্যুগুলো সম্পর্কে বিশিষ্টজনদের সাাৎকার, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশের পাশাপাশি দেশীবিদেশী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশ হয়। রহমতের সম্পাদনা করছেন মনযূর আহমাদ। তার সম্পাদনায় ঢাকা থেকে ‘জাগো প্রহরী’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাও এখন বেরোচ্ছে। মাসিক আল-কাউসার নামে গবেষণা ধর্মী একটি পত্রিকা নিয়মিত বের হচ্ছে। মুহি উদ্দিন খানের বড় ছেলে মুস্তফা মঈনুদ্দিন খানের সম্পাদনায় প্রকাশ হচ্ছে ‘মুসলিম জাহান’ নামে আরো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।
এটিই এসময় পর্যন্ত ইসলামী ঘরনার সবচে বেশি সময় ধরে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা। এছাড়া মাসিক রহমানী পয়গাম, শিশু কিশোর পত্রিকা মাসিক গোলাপকুঁড়ি, মাসিক চেতনা, সাপ্তাহিক ইসলাহ, মাসিক মেহরাব, মাসিক আল ফুরকান, মাসিক হেফাজতে ইসলাম, মাসিক আল ফারুকসহ প্রায় ১৫০টি মাসিক পত্রিকা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে।
এইসব পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপশি এখন অনেক আলেম জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে রিপোর্টিংসহ বিভিন্ন সক্টবে কাজ করছেন। এর মধ্যে বেশ ক’জন কয়েকটি পত্রিকার সাব-এডিটর ও বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবেও কাজ করছেন। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনেও এখন অনেক আলেম কাজ করছেন।
বাংলাভাষায় ইসলামের মৌলিক কিতাবগুলো অনুবাদ-রচনা করছেন। টিভি চ্যানেলেও প্রোগ্রাম করছেন তারা। এইভাবে প্রতিনিয়ত বাংলাভাষা চর্চা ও লালনে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছেন কওমীর আলেমছাত্ররা। এই ধারাকে গতীশীল করতে বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠান সাহিত্য ও সাংবাদিকতার উপর ২ বছরের বিশেষ কোর্স চালু করেছে। আর এগুলোর পথিকৃত হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ঢাকা মিরপুর-১২’র দারুর রাশাদ মাদ্রসা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।