কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!!
প্রারম্ভিকা
নীলা একটা খামের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল খাম। ওয়ারড্রবের গোপন ড্রয়ারে খামটা পেয়েছে সে।
খামের উপর লেখাঃ
প্রেরক,
হাসনাত খান
বাংলাবাজার
ঢাকা
প্রাপক,
হাসনাহেনা বানু
ডেওরাপাড়া
ঢাকা
নীলা সন্তর্পণে খামের ভিতর থেকে চিঠিটা বের করে পড়া শুরু করল। এবং একটু পরেই থরথর করে তার সারা শরীর কাঁপতে লাগল।
এই ঘটনার ঠিক দুইদিন পর নীলার বয়ফ্রেন্ড নীলাকে বলল, গতকাল আমি একটা অদ্ভুত চিঠি পেয়েছি। নীল খামের চিঠি। ভিতরে একটা আইডিয়া লেখা। চমৎকার আইডিয়া।
পরিশিষ্ট ২
ফরহাদ আর পারভেজ এই মুহূর্তে “বেঁচে থাকা” নামক মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সিটিউটের ২০১ নাম্বার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
দরজার মধ্যে একটা ছোট চারকোণাকৃতি অংশ কাঁচের তৈরি, ওটা দিয়ে রুমের ভিতরটা দেখা যায়। ফরহাদ আর পারভেজ রুমের ভিতর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রুমের ভিতর মানসিক রোগীদের ফর্ম্যাল লাল পোশাক পরা এক রোগীকে দেখা যাচ্ছে। রোগী আপনমনে ছবি আঁকছে। রোগীর চারপাশে ছবি আঁকার নানারকম সরঞ্জামাদি।
হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই, রোগী পিছন ফিরল। পারভেজ আর ফরহাদের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল তার। দুই যুবক নিখাদ কৌতূহল ও আতঙ্ক নিয়ে রোগীর দিকে তাকিয়ে রইল।
অতঃপর রোগী উঠে দাঁড়াল। আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে সামনে এল সে।
দরজার একেবারে কাছে দাঁড়িয়ে ইশারা করল কাঁচটা ফাঁকা করে কথা বলার জন্য কিছুটা জায়গা তৈরি করতে।
পারভেজ তৎক্ষণাৎ কাঁচটা ঠেলে ফাঁকা জায়গা তৈরি করল।
রোগী বলল, ভালো আছেন?
পারভেজ বলল, আছি।
রোগী বলল, আমি ছবি আঁকছি। চমৎকার একটা ছবি।
দেখবেন?
পারভেজ বলল, দেখব।
রোগী আবার হেঁটে গিয়ে তার আঁকার কাগজটা নিয়ে এল। হুম, চমৎকার ছবিই বটে। সূর্যোদয়ের ছবি। অসাধারণ ছবি হতে যাচ্ছে এটি শেষ করার পর।
পারভেজ বলল, আপনি খুব সুন্দর আঁকেন।
রোগী বলল, থ্যাঙ্কস। অতঃপর হ্যান্ডশেকের ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে দিল সে।
আমি হাসনাত। আপনি?
আমি পারভেজ।
আচ্ছা...করবে করবে করে প্রশ্নটা করেই ফেলল পারভেজ, আপনি কি হাসনাহেনা বানু নামে কাউকে চেনেন?
দীর্ঘসময় চুপ করে থাকল রোগী। পারভেজ আর ফরহাদের মনে হল, হয়তো রোগী তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবে না।
ঠিক যখনই দুই যুবকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে চলেছে, ঠিক তখনই রোগী ভারী গলায় বলে উঠল -
দেয়ার ইজ নো হাসনাহেনা বানু।
হাসনাহেনার কথা
ছবি আঁকা একটা আর্ট।
আর্ট শব্দটাকে আমি খুব বিস্তৃত অর্থে ব্যবহার করি।
আপনি কবিতা ছড়া গান ছবি যা ইচ্ছা তাই লিখে বা এঁকে আনলেই তাকে আর্ট বলতে আমি অপারগ। প্রকৃত আর্টের মূলমন্ত্র হল প্রাণ। আপনি যা-ই লেখেন বা যা-ই আঁকেন না কেন তার মধ্যে প্রাণ থাকতে হবে, বুঝলেন? যাস শালা কিচ্ছু বোঝে নাই!
শুনেন। মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনার সাহিত্য কিংবা চিত্রকর্ম লিখলে বা আঁকলেই খালি হবে না, তাতে জীবনসঞ্চার হতে হবে; আপনার সাহিত্য পড়ে বা ছবি দেখে মনের মধ্যে সৃষ্টি হতে হবে দীর্ঘস্থায়ী গভীর ব্যঞ্জনা।
মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন হতে হবে অনুরণিত, রক্তে বাজতে হবে হরমোনের আর্তনাদ। শিল্পীর সত্ত্বার এক বা একাধিক বিশেষ দিকের সমন্বয়ে তিলে তিলে গড়ে উঠবে শিল্পের নিজস্ব সত্ত্বা। সাহিত্য পড়ে বা গান শুনে বা ছবি দেখে পাঠক শুধু শিল্পীকেই দেহমন অর্পণ করবে না, তার ভালোবাসার বিশেষ অংশ সমর্পিত হবে শিল্পেরও চরণতলে। প্রকৃত আর্ট বা সত্ত্বা জীবিতের মতই মুহুর্মুহু বিচরণ করবে দর্শক বা পাঠকের মানসপটে। নাহলে কিসের আপনার আর্ট, আর কি এমন জাউরার পুতের আর্টিস্ট আপনি?
আমার সম্বন্ধে যদি আপনি জানতে চান, আমি বলব, আমি একজন চিত্রশিল্পী।
আঁকা আমার নেশা। আঁকা আমার ধ্যান জ্ঞান। আঁকা ছাড়া আমি থাকতে পারি না।
এতদিনে আমি অনেক ছবি এঁকেছি। তবে কোথাও পাঠাই নাই।
প্রথমে পাঠাইতাম। পত্রিকায় পাঠাইতাম। এখন পাঠাই না। এমনকি এক্সিবিশনেও ছবি দেই না। কেন জানেন? কারণ এক্সিবিশনে ছবি দিলে আমার ঐখানে যেতে হবে।
অথচ এইটা সম্ভব না। কারণ মানুষ আমারে দেখতে পারে না। আমি নাকি একটা সাইকো।
সাইকো! শালার সাইকো! আরে মাগী সাইকোর তোরা কি বুঝিস? সাইকো হলে আমার মত ছবি কেউ আঁকতে পারে? হুদাই মাগীর পুতের পত্রিকারা আমাকে নিয়ে ফিচার করে? হুদাই আমার ছবি নিলামে ওঠে? এমনকি জানেন, এমন কয়েকজন ছাগলও পাওয়া গেছে যারা আমার আঁকা ছবি কিনে নিয়ে গেছে। নিয়ে কি করেছে কে জানে!
তবে আমি মনে করি, এতদিন আমি যা এঁকেছি সেগুলো শুধুই ছবি, আর্ট নয়।
ছবিগুলোতে সবই আছে, শুধু প্রাণটাই নেই। ছবিগুলোতে রংসঞ্চার হয়েছে, জীবনসঞ্চার হয় নি। ছবি দেখে কেউ মুখে হাত দিয়ে গোল গোল চোখে অবাক বিস্ময়ে বলে নি – “কি আশ্চর্য জীবন্ত এই ছবি!” কেউ বলে নি – “মনে হচ্ছিল যেন ওটা ছবি নয়, ওটা আমিই, আমিই দাঁড়িয়ে আছি ঐ ছবির মধ্যে!”
কারো বলা লাগবে কেন, আমার নিজের মনেই তো ছবিগুলো দেখে কোন অনুরণন সৃষ্টি হয় নি। ছবি আঁকার পর আমি নিজেই ভুলে গেছি ছবিটা কখন কিভাবে কেন কতটা আবেগ দিয়ে আঁকা হয়েছিল।
সুতরাং, আমি একটা নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি।
মাই মাইন্ডব্লোয়িং নিউ প্রজেক্ট। আমি এবার শুধু ছবিই আঁকব না, ছবিতে প্রতিষ্ঠা করব প্রাণ। করেই ছাড়ব। মানুষ দেখুক একটা সাইকোর ক্ষমতা কতটুকু। দেখুক মানুষ।
এই প্রজেক্টে ব্যর্থ হলে ছবি আঁকাই ছেঁড়ে দেব আমি। প্রমিজ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।