আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিল্প এবং শিল্পী

আমার লেখাটা যদিও আমি খুব সিরিয়াসলি লিখেছি, তবু দয়া করে কেউ সিরিয়াসলি নেবেন না। পৃথিবীতে সাতশ কোটির ওপরে এখন মানুষ। প্রতিটা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে আমি শুধুমাত্র আমার মতামত উপস্থাপন করেছি। অতএব অন্যের সাথে তা না মেলাটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু মিলে গেলে বুঝে নেব, আমার দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের জীবনের সাথে মিলে যায়, যেটা আমার কাম্য। এবার কালবিলম্ব না করে শুরু করে দিলাম আমার বক্তব্য উপস্থাপন। যে শিল্প শিল্পীকে সন্তুষ্ট করতে পারে না, সেটা অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করবে এমন আশা করাটা ভুল। সেটা আসলে শিল্প না, উপার্জনের উপায়। মানুষ তখনই তার সৃষ্টির মাঝে থেকে মননশীলতা প্রত্যাহার করে নেয়, যখন সে তার সৃষ্টিকে পুঁজি করে কিছু উপার্জনের চেষ্টা চালায়।

তবে শিল্প যদি উপার্জনের উপায় হয়ে দাড়ায়, সেক্ষেত্রে একটা লাভও থাকতে পারে। আর সেটা নির্ভর করবে শিল্পীর মানসিকতার ওপর। শিল্পী যদি চায়, তার শিল্প মানুষের কাছে থাকবে আভিজাত্যের প্রকাশক হিসেবে, শিল্পী যদি চায় তার শিল্প মানুষের মন ভরিয়ে রাখবে যতদিন শিল্প বেচে থাকবে ততদিন, তাহলে সেই শিল্পে বানিজ্যিক চিন্তাধারার সাথে মননশীলতার এক অনন্য সংমিশ্রণ ঘটবে। যা আসলেই সৃষ্টি করবে দারুন কিছু। এক্ষেত্রে আমি স্টিভ জবস কে উদাহরন হিসেবে টানতে চাই।

তিনি চেয়েছিলেন, তার শিল্প শুধু মানুষের প্রয়োজনই মেটাবে না, সেই সাথে হৃদয় ছুঁয়ে যাবে সবার। আর তিনি সফলও হয়েছেন। আপনার যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে হাতের কাছে অ্যাপেল এর যে ডিভাইসটা আছে ( আমার কাছে নেই, তবে আমি আমার বন্ধুরটা দেখেছি এবং ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনেছি। ) সেটার বাইরের চেহারার সাথে সাথে ভেতরের চেহারাটা দেখার চেষ্টা করুন। সেখানেও দেখবেন, সার্কিটের এক অনন্য সজ্জা আছে।

সেখানেও রয়েছে এক শিল্পের ছোঁয়া। হয়তো ভাবছেন, আমি এমন আবোলতাবোল বকছি কেন? এবার আসল কথায় আসা যাক। আসল কথা খুব ছোট্ট। শিল্পী যদি নিজে তার শিল্পতে সন্তুষ্ট হতে পারে, তাহলেই একমাত্র গ্রাহককে সন্তুষ্ট করা সম্ভব পুরোপুরিভাবে। আমি একজন ক্ষুদ্র লেখক।

এখন পর্যন্ত আমার কোনও লেখা কোথাও প্রকাশ হয়নি। প্রকাশ হবেইবা কি করে? আজ পর্যন্ত কোথাও নিজের লেখা প্রকাশ হওয়ার জন্যে পাঠানর সাহস হয়নি আমার। তবে অনেক কষ্টে আগামী বইমেলাতে একটা বই প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহন করেছি। আল্লাহ সহায় থাকলে অবশ্যই তা প্রকাশিত হবে। আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত অনেক লেখক আছেন।

তারা অনেক জ্ঞানী, গুণী। এবং তাদের লেখায় শিল্পের কোনও কমতি থাকে না। আমিও আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে আমার লেখায় আমার নিজস্ব পদ্ধতিতে মননশীলতার পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করেছি। প্রতিটা লেখকের লেখার নিজস্ব ধরন থাকে। আমার নিজেরও আছে।

তবে আমি চেষ্টা করব সবসময়, প্রতিমুহূর্তে নিজের ধরনকে বদলানোর। একটা বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছে এবং আরও ৪টা গল্প ( খুনি জলিল, অসমাপ্ত, তৃতীয় পুরুষ, স্পন্দন) এক সাথে চলছে। চারটা চার রকমের গল্প। আমার প্রথম বই "অনুরনন" এর সাফল্যের ( পাঠক প্রিয়তা ) ওপর নির্ভর করবে বাকি গল্পগুলো পাঠকের কাছে যাবে কি না। আজ আরও একটা গল্পের প্লট মাথায় এসেছে।

ওটাও শুরু করব লেখা আজ অথবা কাল থেকে। আজ সন্ধ্যায় নামটাও ঠিক করে ফেলেছি গল্পটার-"দ্বিধা"। হয়তো ভাবছেন, একসাথে পাঁচটা গল্প কিভাবে লিখব বা আদৌ সম্ভব কি না। এক্ষেত্রে আমার উত্তর হল, হ্যা লেখা সম্ভব। কারন মানুষের মন কখনও একই রকম ভাবে ভাল বা খারাপ থাকে না।

আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন, এক দিনে আপনার মনের পরিবেশ কতবার পরিবর্তিত হয়? কখনও আপনার মেজাজ খুব খারাপ থাকে, কখনও বিমর্ষ থাকেন আপনি, কখনও খুব শান্ত থাকেন, কখনও আনন্দে উল্লাশিত থাকেন কারনে বা অকারনে, আবার কখনও কখনও মারমুখীও হয়ে উঠতে পারেন আপনি। এই যদি হয় মানুষের মনের অবস্থা, তাহলে আমি সারাদিন লেখালেখিতে ডুবে থাকতে চাইলে কি করে সম্ভব একটা গল্পে একই রকম মানসিকতা নিয়ে লেখা চালিয়ে যাওয়া? তাই আমি আমার মনের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে মনের পরিবেশ যখন যেমন থাকে, তখন তেমন ভাবেই গল্প লিখি। আমার চলমান চারটা গল্প এবং আজ থেকে শুরু হওয়া পঞ্চম গল্প পাচ রকমের স্বাদযুক্ত। অতএব মনের পরিবেশ যাচাই করে আমি খুব সহজেই বাছাই করে নিতে পারি, এখন আমার কোন গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। এবার আসি মননশীলতার প্রশ্নে।

আগেই বলেছি, শিল্পী যদি তার শিল্পে সন্তুষ্ট হতে পারে, তাহলে গ্রাহক সন্তুষ্ট হবে মুটামুটিভাবে ধরে নেয়া যায়। আর ঠিক এই কারনে আমি মনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। মন অনেক সময় আজগুবি কথাও বলে। কিন্তু সেই আজগুবি কথাটাও যদি যুক্তিসঙ্গত ভাবে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতে বাধ্য। আমি সর্বদা সে চেষ্টাই করি।

আমি কখনও অযৌক্তিক ব্যাপার ব্যক্তিজীবনে প্রশ্রয় দেই না, আমার লেখাতেও কখনও অযৌক্তিক ব্যাপার থাকবে না। মনের পরিবেশ যাচাই করে লেখা চালিয়ে যাই বলেই, আমি আমার শিল্পে সন্তুষ্ট। আপনি হয়তো ভাবছেন, এই ব্যাটা আবার কোথাকার কে এত বড় বড় কথা বলতে আসছে? আমার মাঝেও একই রকম প্রশ্ন উঠছে এই লেখাটা চালিয়ে নেয়ার সময়। কিন্তু মন থেকে কোনও বাধা আসছে না বলেই চালিয়ে যাচ্ছি এখনও। এবং শেষ পর্যন্ত কোনও বাধা না আসলে, আমি এই লেখা পোস্টও করব।

আর এখানেই একটা ছোট্ট পরীক্ষা হয়ে যাবে। এই লেখা যদি আপনার পছন্দ হয়, তাহলে বুঝব আমার সন্তুষ্টি আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পেরেছে। যদিও এমন প্রবন্ধ মুলক রচনা, আমি নিজেও খুব একটা পছন্দ করি না। অতএব এই লেখা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে ধরে নিয়েই আমি লেখা শুরু করেছি। এবং এটা শুধুই আমার মানসিক প্রশান্তির জন্যে লিখে চলেছি।

আমি আরেকটা ব্যাপার খুব বিশ্বাস করি। তা হলো, লেখায় লেখক-পাঠকের সহাবস্থান। লেখক যদি এমনভাবে লেখে যেখানে পাঠকের নিজস্ব মতামতের কোনও সুযোগ থাকবে না, অর্থাৎ পাঠক শুধুমাত্র লেখাটা পড়ে যাবে কিন্তু ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করার অবকাশ থাকবে না, তাহলে লেখাটার বেঁচে থাকার মেয়াদ খুব বেশিদিন থাকে না অর্থাৎ পাঠক লেখাটা খুব বেশিদিন মনে রাখে না। আমি আমার লেখায় সবসময় পাঠকের চিন্তা করার অবকাশ রাখার চেষ্টা করি। আমি যেসব গল্প লিখি, টা কখনই কল্পনাপ্রসূত না।

আশেপাশের চেনা পৃথিবী থেকে পরিচিতজনদের জীবনকে জেনে কিছু বাস্তবতা আর কিছু কল্পনার রঙ মাখিয়ে লেখা চালিয়ে যাই। আমি বিশ্বাস করি, পাঠকেরও এমন একটা ঘটনাবহুল পরিচিত পৃথিবী আছে। একই ঘটনা দুজন ভিন্ন মানুষের জীবনে ঘটে দুরকম ফলাফল বয়ে আনতে পারে। আমি কোথাকার কে ফলাফল নিরধারন করে দেয়ার? আর তাই চেষ্টা করি, লেখাতে বর্ণিত ঘটনার বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে পাঠক নিজেই একটা ফলাফলে পৌঁছাক। পড়া শেষ করেও পাঠক কিছুক্ষণ ভাবুক, ফলাফল কেমন হলে ভাল হয়।

আর আমার মতে, এভাবেই লেখক-পাঠক সহাবস্থান সম্ভব। এবং আমি সবসময় চেষ্টা করব, আমার লেখায় এমন পরিবেশ বিজায় রাখতে। ধন্যবাদ এতক্ষণ আমার আবোলতাবোল লেখা কষ্ট করে পড়ার জন্যে। ভাল থাকবেন সবসময়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।