ব্যভিচার একটি সামাজিক ব্যাধি। যে সমাজে ব্যভিচার এর পরিমান বেড়ে যায় সে সমাজ অতি দ্রুত ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনিত হয়। প্রত্যেক ধর্মে ব্যভিচারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাইবেল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিনী উভয়কে মৃত্যুদন্ডের বিধান দিয়েছে। বলা হয়েছে যে, " যদি কোন পুরুষ কোন মহিলার সাথে ব্যভিচার করে , আর ব্যভিচারীনী তার নিকটাত্বীয় হয় তাহলে, তাদের উভয়কেই মৃত্যুদন্ড দিতে হবে।
(লেভিটিকাসঃ ২০/১০)
ইসলামও ব্যভিচারীদের জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেছে। আল্লাহ বলেনঃ
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ (2)
অর্থাৎ, ব্যভিচারিনী নারী, ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ' করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে গিয়ে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তার রাসুলের প্রতি প্রকৃতপক্ষেই বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর মুসলমানদের মধ্যকার একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। (সূরা নূরঃ ২)
তবে, ব্যভিচারের সংগায় কুরআন ও বাইবেলে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
কুরআনে বলা হয়েছে- ব্যভিচার হচ্ছে পুরুষ ও নারীর মধ্যকার অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক। পক্ষান্তরে বাইবেলে ব্যভিচারকে শুধুমাত্র বিবাহিতদের মাঝে আবদ্ধ করা হয়েছে। যখন বিবাহিত পুরুষ ও বিবাহিতা নারীর মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক পাওয়া যাবে তখনই তাদেরকে ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিনী হিসেবে গণ্য করা হবে। " যখন কোন বিবাহিত পুরুষকে অপরের স্ত্রীর সাথে পাওয়া যাবে তখন তাদের উভয়কেই হত্যা করা হবে; এবং বনী ইসরাইল থেকে এসব আপদ দূর করতে হবে। (ডিউটারনমী:২২/২২) "আর কোন পুরুষ যদি তার নিকটাত্মীয় মহিলার সাথে ব্যভিচার করে তাদের উভয়কেই হত্যা করা হবে"।
(লেভিটিকাসঃ২০/১০)
বাইবেলের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন বিবাহিত পুরুষ কোন অবিবাহিত মহিলার সাথে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করলে তা ব্যভিচার বলে ধর্তব্য হবে না। এমতাবস্থায় উক্ত পুরুষ ও নারী ব্যভিচারী বা ব্যভিচারিনী হিসেবে গণ্য হবে না। বরং ব্যভিচারী হিসেবে গণ্য হবে যখন কোন পুরুষ বিবাহিত হোক বা না হোক নারী বিবাহিতা হয়।
সংক্ষেপে, ব্যভিচার হল বিবাহিতা নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক। বিবাহিত পুরুষ ব্যভিচারী হিসেবে পরিগণিত হবে না।
এখানে নারী ও পুরুষের মধ্যে দু'রকম বিধান কেন?! ইহুদী বিশ্বকোষের মতে নারীরা পুরুষের মালিকানাধিন পণ্যের মত। পুরুষের অধিকার নষ্ট করলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে পক্ষান্তরে, নারীরা পুরুষের মালিকানাধীন পণ্য হওয়ার কারণে তার এ ধরণের কোন অধিকার নেই।
কোন পুরুষ অপরের স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে তা আরেক জনের (মহিলার স্বামীর) অধিকারে হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয় তাই, তাকে এ জন্য শাস্তি পেতে হবে। বর্তমানে ইসরাইলে যদি কোন পুরুষ অবিবাহিতা মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার ফলে সন্তান হয় তারা বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হয়। আর যদি বিবাহিতা মহিলার সাথে কোন পুরুষ (বিবাহিত হোক বা না হোক) অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করার ফলে সন্তান হয়; তাদের সন্তানরা শুধু অবৈধই নয় বরং তারা সমাজ থেকে বিতাড়িত হয় এবং তাদেরকে অনুরুপ বিতাড়িত বা ধর্ম ত্যাগকারী ছাড়া অন্য কেউ বিবাহ করতে পারে না।
এ শাস্তি পরবর্তী দশটি প্রজন্ম পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে যাতে তাদের অপমান কিছুটা হলেও কমে যায়। ১৬
কিন্তু, ইসলাম নারীকে এরুপ মনে করে না বরং কুরআন বলেঃ
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ (21)
অর্থাৎ, আর আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন সমুহের মধ্যে এটাও একটা নিদর্শন যে, তিনি তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা রুমঃ ২১)
এটা হচ্ছে কুরআনে বর্ণিত বিবাহের চিত্র যা হবে ভালবাসা, দয়া, সম্প্রীতি ও শান্তির ঠিকানা। এখানে কেউ কারো পণ্য বা দাস নয়।
নারী পুরুষ উভয়ের জন্য এখানে নেই কোন দ্বিমুখী বিধান।
সূত্র:
ইসলামে নারী বনাম পুস্তক ও বাস্তবতায় ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মে নারী
মূল লেখক: ড.শারীফ আব্দুল আজীম
অনুবাদ: মুহাম্মদ ইসমাইল জাবীহুল্লাহ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।