নিজেকে নিয়ে ভাবছি
ব্রিটিশ আইনজ্ঞ, যুগোশ্লাভিয়া ও রুয়ান্ডা যুদ্ধাপরাধ বিচারের আইনজীবী স্টিভেন কেয়ি কিউসি’র বক্তব্যকে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বলে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যে মন্তব্য করেছেন, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্টিভেন। যুদ্ধাপরাধ বিচারের লক্ষ্যে প্রণীত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) (সংশোধন) অ্যাক্ট ২০০৯-এর সমালোচনা করে স্টিভেন কেয়ি সম্প্রতি ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য প্রদান করেন। স্টিভেনের সে বক্তব্য সম্পর্কে গত শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় আইনমন্ত্রীর মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। আইনমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে স্টিভেন কেয়ি লিখিতভাবে আইনমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন আইনটি নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্কে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য।
প্রতিবাদে স্টিভেন কেয়ি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে আমি যে বক্তব্য রেখেছি তার কোথাও আমি বলিনি যে, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই।
আমি এ কথাও বলিনি যে, অভিযুক্ত পক্ষ সাক্ষীকে জেরা করতে পারবে না। আমার বক্তব্য সম্পর্কে আইনমন্ত্রীকে হয় ভুল বোঝানো হয়েছে অথবা তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করছেন বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে।
স্টিভেন কেয়ি সুপ্রিম কোর্ট বারের অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যের উল্লেখ করে বলেন, আমি সেখানে বলেছিলাম ‘১৯৭৩ সালে সংবিধান সংশোধন করে ৪৭(৩) ও ৪৭(এ)(২) ধারা সংযোজনের কারণে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে অসাংবিধানিক হিসেবে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। কারণ ৪৭(৩) ধারায় বলা হয়েছে, এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোনো সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান সংবলিত কোনো আইন বা আইনের বিধান সংবিধানের কোনো বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না। ’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এর মাধ্যমে সংবিধানে যেসব নাগরিক অধিকারের অঙ্গীকার করা হয়েছে যেমন ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সকলের আইনের সমান আশ্রয় লাভের সুযোগ থাকবে।
৩৫ অনুচ্ছেদের বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ এবং ৪৪ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ সম্পর্কে যে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে তা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রহিত করা হয়েছে। ’
মি. স্টিভেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান নিয়োগ, বিচারক নিয়োগের বিষয়ে আসামি পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি তোলা যাবে না। ট্রাইব্যুনালের সেকশন ১০ (এইচ) অনুসারে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালের বিচারের বিষয়ে আপত্তি উথাপনের সুযোগ নেই। ফলে বিচারক যদি কোনো সাক্ষীকে জেরা করেন তার কোনো প্রতিবাদ করতে পারবেন না আসামি পক্ষের আইনজীবী। ’
তিনি বলেন, এ আইনের অন্য অনেক ধারার বৈধতা নিয়ে আমি প্রশ্ন উথাপন করেছি যেটা ‘বাংলাদেশ তার বিচারব্যবস্খায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আমদানি করেছে কিন্তু সংবিধানে মৌলিক নাগরিক অধিকার রক্ষার যে অঙ্গীকার করেছে তা রফতানি করেছে’ এই শিরোনামে লেখা আমার মূল বক্তব্য থেকে জেনে নেয়া সম্ভব।
মি. স্টিভেন বলেন, এ আইন নিয়ে আইনমন্ত্রী যদি প্রকাশ্যে বিতর্কে অবতীর্ণ হতে চান তবে আমি তাকে স্বাগত জানাব অবশ্য আইনমন্ত্রী যদি সত্যিই চান তিনি এই আইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদ অনুসারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন নিরপেক্ষ নয় যে বিষয়ে আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশন তাকে আগেই পরামর্শ দিয়েছিল।
সূত্রঃ দৈনিক নয়া দিগন্ত। ১৭/১০/২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।