আমার ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ: http://bit.ly/gaWV2X
অভ্র এমন একটা সফটওয়্যার যার রিভিউ করে কাটতি বাড়ানোর দরকার হয় না। তারপরেও অভ্র’র নতুন ফিচারগুলো আলোচনা করার জন্য এই পোস্টের অবতারণা।
প্রথমেই ছোট্ট করে দেখে নেয়া যাক অভ্র কি এবং এর ইতিহাস। অভ্র একটি ইউনিকোড সাপোর্টেড বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার যা একেবারে ফ্রি। সফটওয়্যারটির ডেভেলপার মেহদী হাসান খান।
যিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্র। তবে অভ্র’র পিছনে আরো অনেকের অবদান রয়েছে। বিশেষ করে বলতে হয় সিয়াম আর রিফাত নবী র কথা। অভ্র’র গ্রাফিক্যাল ডিজাইন আর ফন্ট (সিয়াম রুপালী) মূলত সিয়ামের হাতে। আর অন্যদিকে ফন্ট ফিক্সার আর আই কমপ্লেক্স এর মত বাংলা লেখা সহজ করার টুলগুলোর ডেভেলপার রিফাত নবী।
সেই সাথে বলতে হয় অভ্র’র ইউজারদের কথা। নিয়মিত ফিডব্যাকের কারণে সফটওয়্যারটি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অভ্র মূলত জনপ্রিয়তা পেয়েছে এর ফোনেটিক অপশনটির কারণে। ফোনেটিকের মাধ্যমে ইংরেজী হরফে টাইপ করে বাংলা লেখা যায়। অর্থাৎ bangla টাইপ করলে স্ক্রিণে ‘বাংলা’ দেখা যাবে।
বাংলা বর্ণমালার ৫০টি বর্ণ এবং আরো অনেকগুলো যুক্তাক্ষর থাকায় টাচ টাইপিং এ বাংলা লেখা খুবই কষ্টকর। বিশেষত যারা টাইপিং পারেন না তাদের জন্য ব্যাপারটা দুঃস্বপ্নের মত। আর এ কষ্টকর প্রক্রিয়া থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে অভ্র। বর্তমানে ইন্টারনেটে ফোনেটিক টাইপিং সিস্টেমের অভাব নেই। বাংলায় লেখালেখির কাজ আছে এমন সব ওয়েবসাইটে বিশেষ করে ব্লগিং সাইটগুলো যেমন সামু , আমার ব্লগ সবারই নিজস্ব ফোনেটিক টাইপিং পদ্ধতি আছে।
তবে এর শুরুটা অভ্র’র হাত ধরে। অভ্র’র সর্বশেষ স্টেবল ভার্সন ৪.৫.১ যেটি রিলিজ হয়েছিল ২ জুলাই, ২০০৭ এ। এরপর একটা দীর্ঘবিরতি। এর মাঝে ইউজারদের দাবীর মুখে অভ্র ফোনেটিকের উবুন্তু’র জন্য ভার্সন রিলিজ দেয়া হয়। অভ্র’র সাইট অমিক্রন ল্যাবের ফোরামে অভ্র’র নতুন ভার্সনের জন্য ইউজাররা দিনের পর দিন ধর্না দিয়েছে মেহদী ভাইয়ের কাছে।
বেশ কয়েকবার ফোরামে অনানুষ্ঠানিকভাব ঘোষণা করার পরেও নতুন ভার্সন রিলিজ দেয়া হয়নি। পরে জানা গেল পুরো সফটওয়্যারটিকে ভিজুয়াল বেসিক থেকে ডেলফিতে কনভার্ট করা হচ্ছে। এর জন্য প্রায় পুরো সফটওয়্যারটির কোড (প্রায় ৫০,০০০ লাইন!!!) নতুন করে লিখতে হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১০ এ অমিক্রন ল্যাব ব্লগে মেহদী ভাই ঘোষণা দেন অভ্র ৫ এর বেটা ভার্সন রিলিজ এর। তারপর সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে অভ্র ৫ এর পাবলিক বেটা ১ রিলিজ দেয়া হয়।
অভ্র ৫ রিলিজ দেয়া হয়েছে মজিলা পাবলিক লাইসেন্স ১.১ এর আওতায়। এখনো অভ্র ৫ এর স্টেবল ভার্সন রিলিজ দেয়া হয়নি। বিভিন্ন বাগ ফিক্স করা হচ্ছে। আশা করা যায় শিঘ্রই আমরা এর স্টেবল ভার্সন দেখতে পাব।
অভ্র ৫ এর আকর্ষণীয় কিছু নতুন ফিচার:
=> শিফটবিহীন বাংলা ফোনেটিক টাইপিং: যেকোন ধরনের টাইপিংয়েই শিফট দিয় টাইপ করাটা কিছুটা বিরক্তিকর।
ইংরেজী টাইপিং শিফট দিয়ে শুধু ক্যাপিট্যাল লেটার টাইপ করতে হব বলে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু বাংলা টাইপিং এর ক্ষেত্রে শিফট ব্যবহার করতে হয় বহুবার। কেননা ‘ত’ আর ‘ট’ দুটো অক্ষরই প্রায় সমানভাবে ব্যবহার হয়। আর তাই ডেভেলপারদের প্রতি ইউজারদের দাবী ছিল শিফটবিহীন বাংলা ফোনেটিক টাইপিং। অভ্র ৫ এর সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে শিফটবিহীন বাংলা টাইপিং।
অভ্র ৫ এ পুরোপুরি শিফটবিহীন বাংলা ফোনেটিক টাইপিং সম্ভব। অভ্র’র নিজস্ব একটি ডাটাবেজ থাকায় খুব সহজেই শিফট ছাড়াই বাংলা ফোনেটিক টাইপিং সম্ভব।
=> ANSI টাইপিং মোড: অভ্র মূলত ইউনিকোড সাপোর্টেড বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার। এতদিন অভ্র দিয়ে ANSI মোডে টাইপিং করা যেত না। যার কারণে ফটোশপের মত ইউনিকোড সাপোর্টবিহীন সফটওয়্যারগুলোতে অভ্র দিয়ে লেখা যেত না।
অভ্র ৫ এর আরেকটি বড় চমক ANSI টাইপিং মোড। এর মাধ্যমে এখন ফটোশপের মত সফটওয়্যারে খুব সহজেই অভ্র দিয়ে বাংলা টাইপিং করা যাবে। তবে অভ্র ৫ এর ইন্সটলার ফাইলের সাথে কোন ANSI ফন্ট দেয়া হয় না। ANSI ফন্ট SutonnyMJ ডাউনলোড করা যাবে এই লিংক থেকে।
=> স্পেল চেকার: অভ্র ৫ এ যোগ করা হয়েছে স্পেল চেকার।
যার মাধ্যমে খুব সহজেই বানান ভুল ঠিক করা সম্ভব।
=> নতুন ফন্ট: অভ্র ৫ এ রয়েছে সিয়ামের আর একটি চমৎকার ফন্ট কালপুরুষ।
অনেকেই ফোনেটিক টাইপিং এ টাইপিং করা নিয়ে ভিন্নমত পোষন করেন। তাদের জন্য রয়েছে ফিক্সড লেআউট টাইপিং। অভ্রতে বেশ কয়েকটি লেআউট রয়েছে- অভ্র ইজি, বর্ণনা, মুনীর, জাতীয় কিবোর্ড আর প্রভাত।
এগুলোর মাঝে আমার কাছে সবচেয়ে সোজা মনে হয় বর্ণনা কিবোর্ড। অভ্র দিয়ে ফিক্সড কিবোর্ড টাইপিং এর আমার টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে এখানে। চাইলে আপনি অভ্র’র লেআউট ডিজাইনার দিয়ে নিজের মত লেআউট ডিজাইন করে নিতে পারেন।
অভ্র’র বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে মেহদী হাসান খানের সাক্ষাৎকার- অংশ ১ | অংশ ২
অভ্র ৫ এর পাবলিক বেটা ৩ এর ডাউনলোড লিংক আর পোর্টেবল ভার্সন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।