ঘটনা:
কাল আমার এক পরিচিতের বাসায় গিয়েছিলাম। চার সন্তান রেখে বউ মারা যাবার পর তিনি আবার বিয়ে করেছেন।
গল্প:
এক কাজ করা যায়, সে যখন ছাদে উঠবে তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া যায়। হালিমের প্রস্তাব। আমি হাসলাম।
ক্লাস নাইনের সবচেয়ে ভাল ছাত্র হয়ে এমন বোকার মতো ভাবল কি করে?
কথাটা তাকে বুঝিয়ে বললাম, আরে গাধা, দোতলা থেকে ফেললে কেউ মারা যায় বুঝি?
ও আচ্ছা। হালিমের মিটিমিটি হাসি দেখে বুঝা গেল সে তার বোকামী বুঝতে পেরে লজ্জা পাচ্ছে।
তানিয়ার প্রস্তাবটা বরং তার থেকে বেটার- পেটুকটা যখন ঘুমাবে, তখন বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেললেই হয়। ওতো ভাবাভাবির কী আছে?
তবু এটা সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি না। তাই বললাম , ডাইনীটা যা দশাশই শরীরের, তাতে আমাদের চারজনের শক্তিতে কুলানো যাবে কি না সন্দেহ আছে।
আর এটা তো সবাই বুঝতে পারতেসো যে কাজটাতে একবার ভুল করে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এ বাড়ি থেকে আমাদের চিরতরে চলে যেতে হবে। রাজা-রানী তারপর সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে থাকবে।
বৈঠক হচ্ছে আমাদের চার ভাই বোনদের মধ্যে। টপিক হল একটা মার্ডার করার উপায় বের করা।
বাড়ির বাকি দুইজন যৌবন লীলা শেষে এতোক্ষনে নিশ্চিত ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই এ মিটিং এ সাবধানতার কোন দরকার মনে করছি না। আমাদের চার ভাইবোনের সাথে পরিচয় করানো যাক। হালিম আমাদের সবার ছোট । নাইনে পড়ে।
তার ইমিডিয়েট বড় হল তানিয়া। এবার এসসসি দিয়েছে। নাজ আপি সবার বড় বিবিএ পড়ছে। ফাইনাল ইয়ার। আর আমি সবে মেডিকেলে ভর্তি হলাম।
ঘটনা হল আমাদের মা মারা গেছেন গত বছর। অথচ এক বছর যেতে না যেতেই গত মাসে কাউকে না জানিয়ে কোথা থেকে এক মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসে বাবা আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছেন, এই তোমাদের নতুন মা। সালাম কর সবাই। ইচ্ছে না থাকলেও সবাই সালাম করলাম। হালিম সবার ছোট।
ওর মেন্টাল গ্রোথও অতোটা হয়নি। সে সালাম করার সময় পায়ে থুথু ঢেলে দিল। তারপর বাবার সে কী রাগ! সাদিককে মারতে মারতে একেবারে অজ্ঞান করে ফেলেছিলেন। এখন অবশ্য অবস্থা মোটামোটি স্বাভাবিক। মায়ের আচার আচরণও বেশ ভাল।
তবু আমাদের কারুরই মহিলাটিকে পছন্দ হচ্ছে না। একদম মেনে নিতে পারছি না তাকে। মানবোই বা কেন? মায়ের জায়গা কি কখনো আরেকজনকে দেয়া যায়? এতোদিন মনে মনে সবাই পুড়ছিলাম। সবচেয়ে বেশি বোধহয় পুড়ছিলাম আমি। হোস্টেল থেকে প্লান করে এসেছি ডাইনীটাকে মেরে ফেলার।
আজ রাতেই সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে আমার মনের কথাটি সবাইকে বললাম। বুঝলাম এটা সবারই মনের কথা ছিল। প্রাথমিকভাবে ঠিক করেছি, খুন করে খুনের দায় স্বীকার করে সবাই মার কাছে চলে যাবো। পৃথিবীর সবাইকে ঘটনাটি জানিয়ে যাবো যাতে করে আর কোন সন্তান কখনো আমাদের মতো বিদঘুটে অবস্থায় না পরে।
হালিম বলল, তাইলে তোমার প্রস্তাবটা বললেই পারো।
আমার প্রস্তাব অতি সহজ। এবং কার্যকরও বটে। কাল বিকেলে ডাইনিটা যখন ঘুমাবে তথন আমরা চারজন চারটা ছুরি দিয়ে বুড়িটার বুকে ঢুকিয়ে দিব। চার চারটা ছুরি ঢুকলে বুড়িটা নির্ঘাত অক্কা যাবে সাথে সাথে।
চারটা ছুরি পাবো কই আমরা? হালিমের প্রশ্ন।
ঠিক ঠিক। তানিয়া সমর্থন জানাল।
তাদের আশ্বাস দিয়ে বললাম, ছুরি আমি নিয়ে এসেছি। আসার সময় খুব ধারালো দেখে চারটে ছুরি কিনেছি।
কিন্তু, আপি, আমরা যে ভীতুর ডিম একেক জন।
এরকম একটা ভয়াবহ কাজ করতে গেলে কিন্তু আমাদের সবার হাত কাঁপবে।
তানিয়ার কথায় সম্মতি দিয়ে হালিম বলল, হ্যা, আপি। আমিও মনে হয় পারবো না। ওটা করতে প্রফেসনাল হতে হয়।
একটা মার্ডারের সময় খুনীর সাইকোলজিকেল ব্যাপার নিয়ে আসলেই ভাবিনি।
এটা ঠিক, হাতে ছুরি নিয়ে কারু দিকে তেড়ে যাওয়া বোধহয় আমার দ্বারাও সম্ভব না।
তানিয়া বলল, আমি বলি কি, বুড়িটা প্রতিদিন সকালে দুধ খায়। আমরা যদি দুধের পটে ঘুমের টেবলেট মিশিয়ে দেই?
ঠিক ঠিক। তুলনামূলক সহজতর পদ্ধতি জেনে সাদিক যথেষ্ট সাহসী হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
কিন্তু ঘুমের টেবলেটেতো ভেজাল থাকে বলে শুনেছি।
কিছুই হয় না।
না আপি, আমরা ভাল কোম্পনির পাওয়ার ফুল ওষুধ কিনবো। একটা দুইটা না। একসাথে দ্ইুশটা টেবলেট গুনে গুনে গুলে দেব দুধের মধ্যে। কাকপক্ষীও টের পাবে না।
কিন্তু এতোগুলা ওষুধ কোথায় পাবো।
ডোন্ট ওরি, আপি। আমি প্রদীপ ডাক্তারের একটা প্রেসকিপশনের পাতা চুরি করে আনবো। তাতে ওষুধের নাম লিখে চারজনের প্রত্যেকে চারবারে ভিন্ন ভিন্ন ফার্মেসী থেকে পাঁচ পাতা করে কিনে নিয়ে আসব। পাঁচ দশে পঞ্চাশ আর চার পঞ্চাশে দুইশ! হয়ে গেল! প্রয়োজনে কাজটা কাল না করে বরং দুদিন পরে করব।
চমৎকার বুদ্ধি। তানিয়া যে এতো বুদ্ধিমতী এটা জানা ছিল না। তার কথায় সম্মতি না দেবার কোন প্রশ্নই উঠে না।
এতোক্ষনে নাজ আপি মুখ খুলল। নাতাশা, আমার একটা কথা আছে।
বলো। সভাপতি হিসেবে সবার কথা শুনতে পেলে ভাল হয়!
শোন, তুমি ঐ মহিলাটার উপর রেগে আছো কেন? ঐ মহিলার তো কোন দোষ নাই। আমার মতে সব দোষ তো বাপির। বাপি নিজেই তো ঐটাকে বিয়ে করে এনেছে। হ্যামলেট পড়ো নাই? গোটা কাহিনীটাই আবর্তিত হইসে হ্যামলেটের তার বাবার খুনী মানে তার চাচাকে খুন করার চেষ্টায়।
অথচ তার চাচাকে তো নিয়ে এসেছিল তার মা। হ্যামলেটের উচিত ছিল আগে তার মাকে খুন করা। তাই নয় কি? আমাদেরও সেটাই করা উচিত। খুন যদি করতে হয় তবে বাপিকেই করা উচিত।
নাতাশার কথা শুনে একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম সবাই।
কিছু বলার খুঁজে পেলাম না। তাই সভা সেদিনের মতো মূলতবি ঘোষনা করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। আজও পরবর্তী সভাটা ডাকা হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।