লাশ! মানুষটির কথা শুনে তাঁর দিকে চকিতে তাকান একজন। একটু কেঁপে উঠল তাঁর চোখের পাতা। শূন্যদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ পানির দিকে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। তারপর অনেকের মধ্যে ঘাসে বসে থাকা বিষণ্ন চেহারার এক নারীর দিকে তাকালেন। আমাদের দৃষ্টিও তাঁর চোখ অনুসরণ করে।
ওই নারীর শূন্যদৃষ্টিই বলে দেয়, তিনি দুর্ঘটনা দেখতে আসা সাধারণ কেউ নন। … ‘ওর ভাই। … ‘বাইশ কি তেইশ। পড়ত এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে। পলিটিক্যাল সায়েন্সে।
’… আরিফ’ আর ‘লাশ’ শব্দ দুটি একই বাক্যে উচ্চারণ করতে কি কষ্ট হয় আরিফের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফার? জানতে ইচ্ছে করে, শ্যালক বেড়াতে আসবে বলে কী রান্না হচ্ছিল বাড়িতে, কত দিন পর সাভার যাচ্ছিল আরিফ। কিন্তু কিছুই জিজ্ঞেস করা হয় না। যাঁরা জলজ্যান্ত এক তরুণের প্রতীক্ষায় কাটাচ্ছিলেন রোববারের সকাল-দুপুর, যাঁরা এখন নির্জীব একটি লাশের অপেক্ষায় আছেন, তাঁদের সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলা যায় না।
... লাশটা পেলেই সান্ত্বনা। চাঁদপুরের মতলবের বাড়িতেও সবাই লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ওর মা-বাবা...। ’
আরিফের বোনের দিকে তাকাই। কথা বলার সাহস পাই না। শোকে কোনো সান্ত্বনা হয় না। তাঁর চোখে জল নেই।
গুমোট হয়ে আছে মুখ। ঝড়ের পূর্বাভাস। আরিফ যখন ‘লাশ’ হয়ে আসবে বোনের কাছে, তখনই কি সেই ঝড় আছড়ে পড়বে বোনের অস্তিত্বে? তুরাগ নদীতে গাড়ি দুর্ঘটনা সংক্রান্ত সংবাদ
সকালে সংবাদ দুটো পড়ে চোখের পানি সামলাতে পারিনি। ফিলিপিনো এক সহকর্মী জানতে চাইলো তোমার কি কেউ মারা গেছে? আমি বলি না। তাহলে তুমি কাদছো কেন? ...
আমারো একটা বোন আছে।
... কেবল ফাইব সিক্সে পড়ে, বাড়ি ফিরার পূর্বে কেবলই জানতে চাইতো, কবে আসবো, গাড়িতে কখন চড়বো, এখন কোথায় আছি, কয়টার সময় গাড়ি থেকে নামবো। ওর উচ্ছাসের শেষ নেই। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে এসে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতো। আমাকে দেখা মাত্র দৌড়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরত। এখনও বড় হয়েছে, এখনো বাড়ি গেলে পথে মধ্যেই গলা জড়িয়ে ধরে।
... যদি কোন একদিন সকাল বেলা এসে দেখতে পায় ওর ভাই আসেনি, ও যদি শুনতে পায় গাড়ি সহ আমি ডুবে আছি পদ্মার জলে, সে দিন ও কার গলা জড়িয়ে ধরবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।