হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে আইনে বিচার চলছে তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে চাইলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। যে রায় সরকার চেয়েছিল তা তারা পেয়েছে। কিন্তু সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়ায় পাঁচটি বিষয়কে ‘ত্রুটি’ হিসাবে তুলে ধরে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে পক্ষপাতেরও অভিযোগ আনা হয়েছে এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে।
‘বাংলাদেশ: আযম কনভিকশন বেইজড অন ফ্লড প্রোসিডিংস’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোলাম আযামের রায় দেয়ার আগে ট্রাইব্যুনাল নিজস্ব উদ্যোগে তদন্ত চালানোর যে কথা জানিয়েছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তা পারে না।
স্কাইপসহ ইন্টারনেটে প্রকাশিত কথোপকথন নিয়ে পক্ষপাতের যে অভিযোগ উঠেছে তার কোনো ব্যাখ্যা ট্রাইব্যুনাল দেয়নি। আসামিপক্ষের সাক্ষীদের সুরক্ষা দিতে ট্রাইব্যুনাল ব্যর্থ হয়েছে এবং বিচারক প্যানেলেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আর গোলাম আযমের রায়ে তাকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণের অভাব ছিল বলেও এইচআরডব্লিউ মনে করে।
অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য হলেও বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনায় গত ১৫ জুলাই গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর রায়ে বলেন, “তার যে অপরাধ, এর সবগুলোই সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।
তবে গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি আছেন। তার বয়স ও শরীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এই সাজা দেয়া হয়েছে।
রায়ে গোলাম আযমকে সর্বোচ্চ শাস্তি না দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় চালানো ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পেছনে মূল ব্যক্তি হিসাবে গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় জাতি অর্ধেক ন্যায়বিচার পেয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে খালাস চেয়ে আপিল করেছে গোলাম আযমের আইনজীবীরাও।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলছেন, সকল আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচার কাজ চালানোর পরও এইচআরডব্লিও যে বিবৃতি দিয়েছে তা একটি স্বাধীন দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের’ শামিল।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা নিজেদের আইনে একটি অপরাধের বিচার করছি। এই বিচারের (গোলাম আযমের) একটা পর্যায় শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় পর্যায় চলছে।
সেখানে ট্রাইব্যুনালের রায় পর্যালোচনা হবে। এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের মন্তব্য করা যায় না। এর মাধ্যমে তারা (এইচ আরডব্লিউ) বিচারাধীন বিষয় প্রভাবিত করতে চাচ্ছেন। ”
মানবাধিকার সংস্থাটির বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে আদালত চাইলে ‘অবমাননার’ অভিযোগ আনতে পারে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
এইচ আরডব্লিউর ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, “আযমের বিচারের ক্ষেত্রে সমস্যা বহুমুখী।
তবে সবগুলো বিষয় থেকে মাত্র একটি উপসংহারেই আসা যায়, আর তা হলো ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের প্রতি অনেক বেশি পক্ষপাতদুষ্ট। বিচার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের অনিয়মও এক্ষেত্রে ঘটেছে। ”
আইনমন্ত্রী বলেন, “আমাদের এই বিচার সকল আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই করা হচ্ছে। যাদের বিচার এখানে হচ্ছে, তারা এতো সুবিধা পেয়েছেন যেটা অনেক বিচারের আসামিরা পাননি। মোট কথা এখানে স্বচ্ছতার কোনো অভাব ছিল না।
”
“অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর আদালত দণ্ড দিয়েছেন। এরপরও তারা সমালোচনা করছে। আদালত মনে করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। ”
রায়ের আগে বিচারকদের ‘তদন্তের’ যে বিষয়টি নিয়ে এইচআরডব্লিউ প্রশ্ন তুলেছে, সে বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “বিচারকরা চাইলে নিজেদের মতো করে কোনো রেফারেন্স ব্যবহার করতে পারেন। বিশ্বজুড়েই এটা হয়ে আসছে।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এর প্রয়োজনও রয়েছে। সর্বমহলে স্বীকৃত একটি ব্যাপার নিয়ে তারা প্রশ্ন তুললো!”
ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের যে অভিযোগ এইচআরডব্লিউ এনেছে তা ‘মারাত্মক আদালত অবমাননার শামিল’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
“একটি আদালতের বিরুদ্ধে কীভাবে এটা করা যেতে পারে? এটা তারা করতে পারে না। ”
আসামিপক্ষের সাক্ষীদের বিষয়ে অভিযোগের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আসামিপক্ষকে সাক্ষী হাজিরে যথাযথ সময় দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়েছে।
শফিক আহমেদ বলেন, “ট্রায়াল কোর্ট প্যানেলের পরিবর্তন নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে। আরে এটাতো একটি সাধারণ বিষয় এবং আইন মেনেই এটা করা হয়েছে। আসামিরা কোনো কোনো অপরাধে খালাস পাচ্ছে। আবার তাদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো অভিযোগ প্রমাণিতও হচ্ছে। এটাই প্রমাণ করে, আদালত সাক্ষ্য প্রমাণ এবং দলিলের ভিত্তিতে অভিযোগ রাখছে বা খারিজ করে দিচ্ছে।
তাই বিচার নিয়ে তাদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।