মোহামেডানসহ ছয় দল ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান কমিটি থাকা অবস্থায় হকির কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। তাদের এ সিদ্ধান্তে প্রিমিয়ার লিগে দলবদলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফেডারেশনের চেষ্টার কোনো কমতি থাকছে না। কিন্তু ছয় দল তাদের সিদ্ধান্ত বদল না করলে দলবদল শুরু করাটা সত্যিই মুশকিল। হকিতে দলবদল ও ক্রিকেটে ফিক্সিংকে ঘিরে অস্থিরতার শেষ নেই।
এদিক দিয়ে ফুটবল শান্তিতেই ছিল। খেলোয়াড়রা এখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে কঠিন অনুশীলনে ব্যস্ত রয়েছেন। না ফুটবলে শান্ত পরিবেশ অশান্ত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল থেকে আসছে মৌসুমে ফুটবলের দলবদল শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়।
এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেছেন, বাইলজ চূড়ান্ত করে বুধবারই নতুনভাবে দলবদলের তারিখ ঘোষণা করা হবে। তবে সেদিন তারিখ ঘোষণা করা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সোহাগ বাইলজের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে দলবদল স্থগিত করার কারণ ভিন্ন।
হকিতে দলবদল না হওয়ার পেছনে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডানের যেমন মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। ফুটবলেও তেমনিভাবে জটিলতা দেখা দিয়েছে মোহামেডানকে ঘিরেই।
প্রশ্ন উঠতে পারে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকই যেখানে বাইলজের কথা বলছেন। সেখানে মোহামেডানের কি করার আছে। বাস্তবে কিন্তু মোহামেডানের হুমকিতে দলবদল স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে ফেডারেশন। কারণ ঐতিহ্যবাহী এ ক্লাবটি অনেক আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছিল আসন্ন ফুটবল মৌসুমে তারা শক্তিশালী দল গড়বে। প্রায় এক যুগ ধরে লিগে তারা শিরোপা পাচ্ছে না।
তাই সাফল্যটা জরুরি বলে ঘর গোছানোর কাজ আগে থেকেই শুরু করে দিয়েছিল। তারকা খেলোয়াড় নিশ্চিত করতে জাহিদ, মামুন, নাহিদুল ও শাকিলকে মোটা অঙ্কের অগ্রিম পেমেন্টও করেন। পরবর্তীতে তারা আবার বেশি অর্থের অফার পেয়ে শেখ রাসেল থেকেও অগ্রিম পেমেন্ট নেন। এরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন মোহামেডান নয় তারা আগামী মৌসুমে শেখ রাসেলে খেলবেন। ব্যাপারটি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছে না মোহামেডান।
এদের ব্যাপারে বাফুফের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছে তারা। স্বয়ং সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন বলেছেন, দুই ক্লাব থেকে অর্থ নেওয়ার প্রমাণ পেলে অবশ্যই তারা শাস্তির ব্যবস্থা নেবে। অভিযুক্ত খেলোয়াড়দের বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চূড়ান্ত তারিখও নির্ধারণ করে দিয়েছিল ফেডারেশন। কিন্তু কোনো ফুটবলারই তা করেননি। এই অবস্থায় দলবদল হলে জাহিদ, মামুন, নাহিদুল ও শাকিল শেখ রাসেলে যোগ দিতে পারেন সেটা ভেবেই মোহামেডানের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঞা বাফুফের কাছে জানতে চান দুই দল থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলবদল হয় কিভাবে? বাফুফে তাই দলবদল স্থগিত করে দেয়।
বিষয়টি এখন কিভাবে নিষ্পত্তি হবে সেটা বলা মুশকিল। বড় জোর এসব খেলোয়াড়রা মোহামেডানের অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারেন। অতীতে এভাবেই ব্যাপারটি ফয়সালা হয়েছিল। কিন্তু টাকা ফেরত পেলেও মোহামেডান তা মানবে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন উঠতে পারে মোহামেডানে তাদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেছিল কিনা? এ ব্যাপারে ক্লাবের এক কর্মকর্তা জানান স্ট্যাম্প লাগিয়ে চুক্তি না হলেও তারা যে মোহামেডান থেকে অগ্রিম পেমেন্ট নিয়েছিল স্বাক্ষরসহ লিখিত ডকুমেন্ট রয়েছে।
কেউ কেউ আবার বলছেন, খেলোয়াড়রা অর্থ নিয়ে যেমন অপরাধ করেছেন। তেমনিভাবে মোহামেডানের উচিত হয়নি মৌসুম চলাকালে তাদের হাতে অর্থ তুলে দেওয়া। তবে এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়, শেখ রাসেল বা অন্য ক্লাবও এর আগে মৌসুম চলাকালে পছন্দের খেলোয়াড়দের আগাম পেমেন্ট দিয়েছিল। সমস্যা হয়েছে বাফুফে এবার বেশ সতর্ক। সালাউদ্দিন নিজেই বলেছেন এই প্রবণতা থামাতে আমরা কঠিন সিদ্ধান্তে যাব।
তা না হলে দুই ক্লাব থেকে অর্থ নেওয়ার প্রবণতা চলতেই থাকবে। অর্থাৎ আগে কোনো কিছু না হলেও বিষয়টি এবার জটিলতার রূপ নিয়েছে। মোহামেডান স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা দলবদলের কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। অন্যদিকে আবার পরবর্তীতে এসব খেলোয়াড়ের সঙ্গে শেখ রাসেলের চূড়ান্ত চুক্তি হয়েছে। সুতরাং জাহিদ, মামুন, নাহিদুল বা শাকিলের ওপর যদি দলবদলের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় তখন শেখ রাসেল তা মেনে নেবে বলে মনে হয় না।
এই অবস্থা সৃষ্টি হলে ফুটবলে দলবদলও ঝুলে যেতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।