আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার ও জাতিসঙ্ঘের চেতনা এবং বাংলাদেশের কাছে তালেবানের প্রত্যাশা

এই ব্লগটি নোমান বিন আরমান'র দায়িত্বে প্রবর্তিত। এখানে মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। numanbinarmanbd@gmail.com

। । এক ।

। এমনিইতেই তো পারমাণবিক বেআদবিতে ইরানের প্রতি গোস্যা আমেরিকা তার উপর নতুন করে সেই গোস্যায় তেল ঢাললেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ড. আহমাদি নেযাদ। তার একটি বক্তব্য সাঙ্ঘাতিক রকমের ক্ষুব্ধ করেছে ‘সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী’ তকমার রাষ্ট্র Ñ আমেরিকাকে। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট বর্তমান বিশ্বের নরক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে বলেছেন, ৯/১১ এর পর আমেরিকা এককভাবে পুরো বিশ্বের সাথে যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে তার আদৌ নৈতিক কোনো ভিত্তি আছে কি না। তিনি ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ বিশ্বব্যাপী এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করেছেন।

বলছেনে, এটি যুদ্ধ না বাণিজ্য। যে বাণিজ্যের পণ্য নিরপরাধ মানুষের রক্ত। এই রক্ত শোষে তারা নিজেদের চরকায় তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়। প্রতিষ্ঠিত করতে চায় নিজেদের রাজত্ব। টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে বিমান হামলার পর কোনো রকমের তদন্ত ছাড়াই এর জন্যে আল-কায়দা নির্মূলের ব্রত নিয়ে ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে বুশের যুদ্ধ শুরুকে শান্তিপ্রিয় মানুষ কখনোই মেনে নিতে পারেনি।

তাদের মধ্যে এতে করে এই হামলার নেপথ্যশক্তি ও কাহিনী নিয়ে গুঞ্জন হয়েছে শুরুর সময়েই। সেই গুঞ্জন এখন প্রতিষ্ঠিত সত্যের মতোই উচ্চারিত। এখন অনেকেই স্পষ্ট করে বলছেন, আমেরিকা তার বাণিজ্যের ধ্বস ঠেকাতে ও মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি ইসরাইল রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে ৯/১১ নাটকের জন্ম দিয়েছে। এইসব বিষয়ই জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তুলে ধরেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। তিনি যা বলেছেন, এমন না যে এটি তিনি একাই বললেন বা প্রথম বলেছেন।

এসব তো এখন সবারই মুখেমুখে। কিন্তু এতেও যে ক্ষ্যাপেছে আমেরিকা ও তার মিত্রশক্তি Ñ এর কারণ পরিষ্কার। কারণ বিষয়টি আর সবখানে উচ্চারণ হলেও কখনো জাতিসঙ্ঘে এমনভাবে কথাও হয়নি। তাও সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে। ফলত যেটি হলো, তার এই বক্তব্য চলাকালেই অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাকে অনুসরণ করে জানি দোস্তরা।

আর তার বক্তব্য চলা অবস্থাতেই যুক্তরাষ্ট্র একে ‘ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে তারা বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট যে বক্তব্য রেখেছেন, তা খুবই ঘৃণ্য এবং আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার ও জাতিসঙ্ঘের চেতনা পরিপন্থী। বড় দাগে এইই তাদের বিবৃতির ফোকাস। শুরুতেই তাদের এই বিবৃতি নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করবো। ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেটি পুরোপুরি যারা পড়েছেন Ñ স্বীকার করবেন, এর কোথাও বলা হয়নি, আহমাদি নেযাদ যা বলেছেন, মিথ্যে বলেছেন।

তারা যেটি করলো, তার বক্তব্যকে নীতির কাঁথা ও ঐতিহ্য দিয়ে ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করলো। নীতিটি হলো ‘আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার’ আর ঐতিহ্য হলো ‘জাতিসঙ্ঘের চেতনা’। আমরা ‘তৃতিয় বিশ্বের’ নাগরিক। যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভু টাইপের একটি রাষ্ট্র ‘আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার’ বলতে কী বোঝে বা কী বোঝাতে চাইবে তা ধরতে পারার কথা নয়। একইভাবে ধরা সম্ভব নয় ‘জাতিসঙ্ঘের চেতনাটি’ও।

তার চেও বড় কথা, ‘আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার’ আর জাতিসঙ্ঘের চেতনা বলতেও যে কিছু আছে সেটিও জানা হলো কেবল ইরানের প্রেসিডেন্টের বেআদবির কারণেই। তার এই ‘বেআদবি’কে তাই একটি সালাম না করে পারছি না! শিষ্টাচারের প্রসঙ্গ যখন তখন একটা কথা বলতেই হবে, নিরপরাধ মানুষ খুনকে, অন্য দেশ জবরদখলকে শিষ্টাচার বলেই গণ্য করে আমেরিকা। আর এ কারণেই ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীটাকে তারা দুভাগে ভাগ করে নিয়েছে। হয় ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ তাদের সহচর না হয় এই যুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি। পক্ষ এই দুটাই।

হয় মারো। নয় মরো। জিন্দেগি বলতে এখানে কিছু নেই। পৃথিবীকে এই গোরস্থান বানানোর কর্মসূচি শুরু হয় আফগানিস্তানে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ জোটের সম্মিলিতি আক্রমণের মাধ্যমে। সে নয় বছর আগের কথা।

এখনো এই মারো আর মরো’র খেলাই সেখানে চলছে। এতোই বিভীষিকা এখন সেখানে যে, যাকে তারা ক্ষমতাই বসিয়েছে সেই কারজাই-ই এখন চোখের জলে হারিয়ে যাচ্ছেন। নিজের সাক্ষাৎ মৃত্যু তাকে দিগ-ভ্রান্ত করে তোলেছে। দিব্য চোখে দেখছেন তার ছোট্ট সন্তানটির মৃত্যুও। তবুও এই মৃত্যু থামাতে গা করছে না আমেরিকা।

বরঞ্চ মৃত্যুর দিনকে আরো প্রলম্বিত করতেই তৎপর সে। টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজারের মতন মানুষ। এই হামলা নাটক হোক বা কোনো গোষ্ঠির আক্রোশে হোক Ñ নিরপরাধ যে মানুষগুলো প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমাদের মমতায় কোনো সীমা নেই। কিন্তু একে অজুহাত করে আমেরিকা পৃথিবীকে গোরস্থান করার যে ব্রত নিয়েছে তাকে আমাদের নিরন্তর ধিক্কার। আমরা কোনোভাবেই নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে সমর্থন করতে পারি না।

এটি যদি আমেরিকার ‘শিষ্টাচার’ হয় তবুও না। কিন্তু এই বিষয়টিই প্রত্যক্ষ্য ও পরোক্ষ্যভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে, সব জাতি রাষ্ট্রের সংস্থা Ñ জাতিসঙ্ঘ। সে তার সদস্য রাষ্ট্রকে থামায়নি আফগানে, ইরাকে নিরপরাধ মানুষ হত্যা থেকে। এটি জাতিসঙ্ঘের কোন চেতনাবলে সম্ভব হয়েছে Ñ আমাদের জানা নেই। নোমান বিন আরমান


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.