আমি চিত্কার করে কাদিতে চাহিয়া
করিতে পারিনি চিত্কার,
বুকের ব্যাথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।
কত ব্যাথা বুকে চাপাইলে
তাকে বলি আমি ধৈর্য,
নির্মমতা কতদূর হলে
জাতি হবে নির্লজ্জ?
খেটে খাওয়া গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য হায়দার হোসেনের মত কেউ হয়তো এরকম শোকার্ত কন্ঠে গানও ধরবে না, এদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনও করা হবে না, অথচ দেশ গড়ায় এদের অবদান কোন অংশে কিন্তু কম নয় । এদের জন্যই টিকে আছে পোশাক শিল্পে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করা বাংলাদেশের অর্থনীতি । আর তাদের ঘাম ঝরানো সেই অর্থ দিয়ে এদেশের বড় বড় শিল্পপতি রাজনীতিবিদদের স্থান হয় সুবিশাল অট্টালিকায় এসি রুমের ভেতরে আর যাদের শ্রমে ঘামে এই অট্টালিকাগুলো গড়ে ওঠে তাদের স্থান হয় সেই সুবিশাল অট্টালিকাগুলোর ধ্বসে পড়া ইটের নিচে ।
আজ তিন দিন ধরে সাভারে শত শত প্রাণ ঝরে গেলেও আমাদের মানণীয় প্রধানমন্ত্রীর সময় হল না একবারের জন্যও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উদ্ধার কাজ তদারকি করা এবং আহত ও নিহতদের স্বজনদের সান্তনা জানানোর।
অথচ নাস্তিক ব্লগার থাবা বাবা যখন নিহত হল তখন ২৪ ঘন্টার আগেই প্রধানমন্ত্রী হাজির হলেন তার বাসভবনে। কার জন্য দরদ বেশি প্রধানমন্ত্রীর ? নাস্তিক ব্লগার থাবা বাবার জন্য নাকি সাভারের দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য ? এই থেকে বোঝা যায় নাস্তিকদের বিচারের জন্য সরকার কতটুকু আন্তরিক আর সাভার ট্র্যাজেডির জন্য দায়ীদের বিচারে কতটুকু আন্তরিক ?
শাহবাগের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রাণ পুড়ে, সংসদ ভবন ফেলে শাহবাগে ছুটে যেতে ইচ্ছা করে, অথচ সাভারে নিহতদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রাণ পুড়ে না, সেখানে ছুটে যেতেও ইচ্ছা করে না । কারণ, সাভারের নিহতরা হল দরিদ্র শ্রমিক আর শাহবাগের নাস্তিকরা হল তার ক্ষমতার মই।
অনেকে হয়তো বলবেন-
প্রধানমন্ত্রীর অনেক কাজ, তার সময় কোথায় ? আমার কথা হল প্রধানমন্ত্রী তার সকল কাজ পেলে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন সময়ে যদি একজন নাস্তিক ব্লগারের জন্য ছুটে যেতে পারেন তাহলে সাভারের শত সহস্র হতাহত দরিদ্র শ্রমিকদেরকে দেখার জন্য তার সময় হবে না কেন ?
কেউ কেউ হয়তো বলবেন প্রধানমন্ত্রী গেলেই বা কি লাভ হতো ?
নিহত রাজীব ব্লগারের বাসভবনে তিনি কি লাভে ছুটে গিয়েছেন ?
অথচ তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সাভারে গেলেতো অন্তত পক্ষে উদ্ধার কাজটা নিজ চোখে তদারকি করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারতেন, জনগণের অভিযোগ আছে সরকারি কর্মকর্তারা আন্তরিকতার সাথে উদ্ধার কাজ করতেছে না, তিনি গেলে অন্তত সেই ব্যাপারটা নিজ চোখে দেখে আসতে পারতেন ।
আসলে ব্যাপারটা কি ? ওখানে কি পঁচা লাশের দুর্গন্ধের ভয়ে যাচ্ছেন না নাকি আসলে গণরোষে পড়ার আশঙ্কায় তিনি সেখানে যাচ্ছেন না? অন্ততপক্ষে গতকাল পর্যন্ত তো দুর্গন্ধ কম ছিল, তাছাড়া বিরোধী দলীয় নেত্রীও তো গিয়েছেন, তাহলে তিনি কেন যেতে পারলেন না !
একদিকে সাভারে বয়ে চলেছে মৃত্যুর মিছিল, আর অন্যদিকে সরকারদলীয় কর্তারা মেতে উঠেছেন রাষ্ট্রীয় রসিকতায় ।
সাভারের ক্ষুব্দ শ্রমিকরা এবং সাধারণ জনতা যখন এই বিশাল মৃত্যুর মিছিলের জন্য বিল্ডিং কোড না মেনে গড়ে ওঠা মৃত্যুপুরী রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে দায়ী করছেন তখন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি আমাদের সফল(?) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর এই ঘটনার জন্য দায়ী হিসাবে আবিষ্কার করলেন পিকেটার ও মৌলবাদী শক্তির হেভি এনার্জি তত্ত্ব, ডক্টর ইউনুসের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসাবে নোবেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, নাকি সেরা আবিষ্কারকর্তা হিসাবে গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে নাম লেখাতে এই তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন তা অবশ্য তিনিই ভালো জানেন ।
আসলে এগুলো ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল পিকেটারতো । স্পিড খাইয়া হেভি এনার্জি বানাইয়া এক ধাক্কায় নয় তলা ভবনে ধ্বস নামাইয়া দেয় ।
এইজন্যই তো কই আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখ এত লাল থাকে কেন? আসল ব্যাপারখানা অইল গিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাতে খোয়াবে দেখে হরতালে পিকেটাররা স্পিড খাইয়া হেভি এনার্জি বানাইয়া কোন একদিন সংসদ ভবনে ধাক্কা দিয়া সংসদ ভবন ধ্বসাইয়া ফালাইছে আর সেই ধ্বংসস্তুপের নিচে তিনি চাপা পড়িয়া গিয়াছেন । হেই টেনশনে রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাতে ঘুম হয়না ।
তাই দিনের বেলা একটু আধটু ঘুমভাব হয় আর কি ।
আবিস্কারের দৌড়ে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এতটুকু এগিয়ে গেলেন তখন প্রধানমন্ত্রী তার থেকে পিছিয়ে থাকবেন কেন ? তিনিও আবিস্কার করলেন সোহেল রানা যুবলীগের কেউ নয়।
আর আমাদের মানণীয় প্রেসিডেন্ট অস্থায়ী থেকে স্থায়ী রাষ্ট্রপতি হওয়ার তর সইতে পারলেন না, সাভারে যখন চলছে মৃত্যুর হাহাকার তখন বঙ্গভবনে চলছে আড়ম্বরপূর্ণ শপথ উত্সব । এ যেন নির্মম এক রাষ্ট্রীয় রসিকতা ।
সাভারে নিহতদের স্বজনদের সান্তনা জানানোর চেয়ে তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোটা ।
আর তাই তিনি সাভারে যাওয়ার চেয়ে টুঙ্গিপাড়াকেই বেছে নিলেন ।
নতুন রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিবেন, আবার সেই শপথের কৃতজ্ঞতা জানাতে টুঙ্গিপাড়াও যাবেন, সবই ঠিক আছে । কিন্তু কথা হল এগুলো দু একদিন পরে করলে কোন কিছুতো শেষ হয়ে যেত না। আসলে সাভারে যাবেনই বা কেন, ওখানে গিয়ে কি পাবেন, তারাতো আপনাদের মত মানুষ না, তারাতো আসলে ভাঙ্গা কুলা যার প্রয়োজন শেষ হলে আপনাদের মত ভদ্র সমাজে তার আর উপযোগ থাকে না । এটাই যেন তাদের নিয়তি, "হাজার বছর ধরে" এই নিয়তি আমরাই গড়ে দিয়েছি তাদের জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।