একজন নির্ভিক পুংটার কোন বন্ধু নেই।
এটি একেবারে টাটকা একটি ঘটনা।
আজ ভৈরব গিয়েছিলাম নৌকা বাইচ দেখতে। ১০টার দিকে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে দেড়টার দিকে যখন ভৈবর ফেরীঘটে পৌছুলাম তখন ভৈরব ব্রীজের নীচ থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ। ঈদের পর হওয়ার প্রায় সবাই নতুন জামা পরে বেশ মাঞ্জা মেরে এসেছে।
ভাল একটা উৎসব উৎসব ভাব।
দুটার সময় বাইট শুরু হওয়ার কথা। ভৈরব ব্রীজের উপর মানুষের ঢল। যেদিকে তাকাই সেদিকে মানুষ। অনেক ঠেলে ঠুলে মেঘনা পাড়ের পাথরের বাধের উপর একটু যায়গা করে নিলাম।
ওরে বা..!! মেঘনা নদীতে শত শত নৌকা। এদিক ওদিক সেদিক ছুটোছুটি করছে। নৌকা জ্যাম। হযবরল অবস্থা। সবাই আনন্দ করছে।
ফাকে ফাকে দু একটা বাইচের নৌকা ট্রাইল দিচ্ছে।
মেঘনা নদী বিরাট চওড়া। কাছের নৌকাগুলোকেই দুরে মনে হচ্ছে আর দুরের নৌকাগুলো কার্টুনের মত লাগছে। কোন কোন নৌকায় মাইক বাজছে। নাচ-গান বাহ্।
বাধের উপর থেকে বাইচ কর্তৃপক্ষ মাইকে বাইচের নৌকা ছাড়া সকল এলেবেলে নৌকা গুলোকে একপাশে সরে যাবার জন্য চেচিয়েই যাচ্ছে। কোন লাভ হচ্ছে না। লাভ হবে কেমন করে। মাইকের আওয়াজ বাধ পার হয়ে নদীর মুখে গিয়েই নাই হয়ে যাচ্ছে।
দুটা পার হয়ে আড়াইটা...পৌনে তিনটা...তিনটা।
বাইচ শুরু হয় না। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষের বুদ্ধি উদয় হয়েছে। তারা একটি বড় লঞ্চে মাইক বেধে চেচানো শুরু করলো। এবং চেচাতে চেচাতে নদীর মধ্যে চলে গেল। কিন্তু আমার তো মনে হয় কোন লাভ হল না।
এদিকে আমরা যারা বাইচ দেখার জন্য অপেক্ষা করছি তারা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লাম। ......এএএএইইইইই বাইইইইচচচচ শুরুরুরুরু কররররর..... চেচাতে লাগলাম। খবর পেলাম প্রধান অতিথি এমপি সাহেব ছানা আসতে দেরি করছেন দেখে বাইচ শুরু হতে দেরি হচ্ছে। সাড়ে তিনটার দিকে হঠাৎ একজন বয়স্ক মানুষকে উত্তেজিত হয়ে ঘাট দিয়ে নেমে লঞ্চে উঠতে দেখলাম। তার পিছে পিছে বেশ কিছু মানুষ কর্তৃপক্ষের লঞ্চে উঠলো।
তাদের গায়ের গেঞ্জিতে গাঙ সমিতি লেখা। পাশের জনকে জিজ্ঞিস করলাম গাঙ সমিতি টা কি? সে বলনো ভৌববের এই গাঙ সমিতিই বাইচের আয়োজন করেছে। গাঙ সমিতির ওরা বলছিল... এমপি হইছে দেখে লাটের বাট হইছে। টাইম জ্ঞান নাই। এতগুলো মানুষ অপেক্ষা করছে আর তার কোন খোজ নেই, থাক তোর এমপি বাইচ শুরু কর........পনেরো মিনিটের মধ্যে বাইচ শুরু হল।
দারুন উত্তেজনায় তা শেষও হয়ে গেল।
তখন সাড়ে চার টা। এমপি সাহেব ছানা তার সম্মানিত উপস্থিতি ঘোষনা করলেন। কিন্তু ততক্ষনে বাইচ শেষ। সব নৌকা ঘাটে ভিড়ে গেছে।
পুরস্কার দেবার কাজ চলছে। বিষয় শুনে এমপি সাহেব ছানার মুখখানা দেখার মত হল। হয়তো সে রাগ করেছে.. অপমানিত হয়েছে.. অথবা দেরি করার জন্য লজ্জা পেয়েছে।
গাঙ সমিতির কযেকজন এমপি সাহেব ছানার দিকে এগিয়ে এসে কি যেন বললেন। এমপি হাস্যউজ্জল মুখে ষ্টেজের দিকে এগিয়ে গিয়ে পুরস্কার বিতরণ শুরু করলেন।
আসে-পাশে কয়েকজনকে চাপা একধরনের হাসি মুখে বলতে শুনলাম ঠিক শিক্ষা হইছে। ব্যাটা কোন দিন কোন অনুষ্ঠানে ঠিক সময়মত আসেনা। ভৌরবের গাঙ সমিতির সাহস দেখে আমি অবাক। প্রধান অতিথি এমপি সাহেব ছানা বলে কথা। তকে বাদ দিয়ে বাইচ উদ্বোধন বুকের পাঠা আছে বলতে হবে।
এই ছ্যাচাটি মত ছ্যাচা যদি প্রতি পদে পদে সাহেব ছানাদেরকে দেওযা যেত.. যদি ছ্যাচার সাথে একটু নুড়া ঘসা দেওয়া যেতো তাহলে সবাই সময়মত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন। আসলে দেশে একটু ছ্যাচার দরকার।
ভৌরবের এই এমপি সাহেব ছানাই শুধু না... বাংলাদেশের সকল জনপ্রতিনিধি, আমলা বা এধরনের হাই প্রোফাইল সাহেব ছানা গুলো কখনই সময় মত কোন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় না। এটা বর্তমানে এদেশের একটি ট্রেডিশন। দেশকে উন্নত করতে আমাদের মনভাবের উন্নয়ন আগে করা দরকার।
পচা মন নিয়ে ভাল দেশ গড়া কঠিন হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।